ফাইল ছবি
সিরাজগঞ্জ শহীদ এম মনসুর আলী মেডিক্যাল কলেজের এক শিক্ষার্থীকে গুলি করার ঘটনায় কমিউনিটি মেডিসিন বিভাগের শিক্ষক রায়হান শরীফকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করেছে স্বাস্থ্য বিভাগ।
বুধবার (৬ মার্চ) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপসচিব দূর-রে শাহওয়াজ স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে এ তথ্য জানানো হয়।
এতে বলা হয়, ‘ডা. মো. রায়হান শরীফ (২১৩৮৯২), প্রভাষক (কমিউনিটি মেডিসিন), শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ, সিরাজগঞ্জ ফৌজদারি অপরাধে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক গ্রেফতার হওয়ায় তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হলো। সাময়িক বরখাস্তকালীন তিনি বিধি মোতাবেক খোরপোষ ভাতা প্রাপ্ত হবেন। জনস্বার্থে এ আদেশ অবিলম্বে কার্যকর হবে।’
এর আগে সোমবার (৪ মার্চ) স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. বায়জীদ খুরশীদ রিয়াজকে আহ্বায়ক করে তদন্ত কমিটি গঠন করেন উপসচিব দূর-রে শাহওয়াজ। এ কমিটির অন্য দুই সদস্য হলেন, স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদফতরের পরিচালক (চিকিৎসা শিক্ষা) অধ্যাপক মো. মহিউদ্দিন মাতুব্বর এবং স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের উপসচিব মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন।
এদিকে জানা যায়, শিক্ষক রায়হান শরীফ দীর্ঘদিন থেকেই অবৈধ অস্ত্র বহন করেন। মতের অমিল হলেই সেই পিস্তল বের করে হুমকি দেন। বিষয়টি সবাই জানলেও কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। রায়হান শরীফ তার সাবেক কর্মস্থল নর্থ বেঙ্গল মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল থেকে চাকরিচ্যুত হয়েছিলেন জ্যেষ্ঠ সহকর্মীকে পিস্তল ঠেকিয়ে হুমকি দেয়ার অভিযোগে। বর্তমান কর্মস্থলে এসেও কথায় কথায় পিস্তল উঁচিয়ে হুমকি দেয়া ছাড়েননি বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের। মৌখিক অভিযোগ পেয়ে তাকে দুই দফা কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছিল কলেজ কর্তৃপক্ষ। কিন্তু তিনি জবাব দেননি বলে জানিয়েছেন অধ্যক্ষ আমিরুল হোসেন চৌধুরী। অধ্যক্ষের দাবি, প্রভাব খাটানোর কারণে রায়হান শরীফের বিরুদ্ধে এত দিন কোনো ব্যবস্থা নেয়া যায়নি।
আরও পড়ুন <> সেই শিক্ষকের বিরুদ্ধে মামলা, পিস্তলটি অবৈধ
গত সোমবার বিকালে মেডিক্যাল কলেজে মৌখিক পরীক্ষা চলাকালে আরাফাত আমিন নামের এক শিক্ষার্থীকে গুলি করেন শিক্ষক রায়হান শরীফ। খবর পেয়ে পুলিশ সেখানে গিয়ে রায়হানের হেফাজত থেকে দুটি বিদেশি পিস্তল, ৮১টি গুলি, চারটি ম্যাগাজিন ও ১২টি বিদেশি চাকু উদ্ধার করে। পুলিশ জানিয়েছে, রায়হানের বিরুদ্ধে মঙ্গলবার সদর থানায় দুটি মামলা হয়েছে। একটির বাদী গুলিবিদ্ধ শিক্ষার্থীর বাবা আবদুল্লাহ আল আমিন। তিনি ছেলেকে গুলি করে হত্যাচেষ্টা ও ভয়ভীতি দেখানোর অভিযোগ এনেছেন। এই মামলায় সিরাজগঞ্জের অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে বিচারক বিল্লাল হোসেনের কাছে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন রায়হান। অপর মামলাটি করেন সিরাজগঞ্জ গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) উপপরিদর্শক আবদুল ওয়াদুদ। অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ আইনের এই মামলায় রায়হানের সাত দিনের রিমান্ড আবেদন জানায় পুলিশ। তবে অন্য মামলায় স্বীকারোক্তি দেয়ায় রিমান্ড মঞ্জুর হয়নি।
সিরাজগঞ্জের পুলিশ সুপার আরিফুর রহমান মণ্ডল বলেন, রায়হান শরীফের কাছ থেকে উদ্ধার করা পিস্তল দুটি অবৈধ। পিস্তল উঁচিয়ে ভয়ভীতি প্রদর্শন এবং শ্রেণিকক্ষে অস্ত্র বহনের বিষয়টি এত দিন কেউ পুলিশকে বলেননি। বিষয়টি এখন তদন্ত করে দেখা হবে।
শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা বলছেন, এক বছর দুই মাস আগে মনসুর আলী মেডিক্যাল কলেজের কমিউনিটি মেডিসিন বিভাগের প্রভাষক পদে যোগদানের পর থেকেই পিস্তল ঠেকিয়ে শিক্ষার্থীদের হুমকি, শ্রেণিকক্ষে পিস্তল প্রদর্শন, ছাত্রীদের অশ্লীল ইঙ্গিতসহ নানা অপকর্ম করতে থাকেন। শ্রেণিকক্ষে পিস্তল উঁচিয়ে ভয় দেখানোর ভিডিও ইতোমধ্যে শিক্ষার্থীদের ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।
কলেজের শিক্ষার্থী ইমামুল হাসান বলেন, রায়হান শরীফ প্রায়ই মধ্যরাতে ছাত্র হোস্টেলে গিয়ে পিস্তল উঁচিয়ে হুমকি দিতেন। তিনি শিক্ষার্থীদের পকেটের টাকায় চা-নাশতা কিনে আনতে বাধ্য করতেন। মাঝেমধ্যে সেই সব চা-নাশতা ছাত্রী হোস্টেলে পৌঁছে দিতে বাধ্য করতেন।
রায়হান শরীফ রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজের ৫২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন। সেখানে তিনি কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি ছিলেন বলে কলেজ সূত্রে জানা গেছে।
আপন দেশ/এমআর
মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।