ছবি: সংগৃহীত
ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে আত্মহত্যা করেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) আইন বিভাগের শিক্ষার্থী ফাইরুজ অবন্তিকা। এতে তার মৃত্যুর জন্য সহপাঠী রায়হান সিদ্দিকী আম্মান (আম্মান সিদ্দিকী) ও সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলামকে দায়ী করেন। এ ঘটনায় শিক্ষার্থী আম্মানকে সাময়িক বহিষ্কার ও ওই তাকে সহায়তাকারী সহকারী অধ্যাপক দ্বীন ইসলামকে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
একই সঙ্গে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। শনিবার (১৬ মার্চ) বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. আইনুল ইসলাম স্বাক্ষরিত পৃথক চারটি অফিস আদেশে এ তথ্য জানানো হয়।
এর মাঝে অভিযুক্ত সহপাঠী আম্মান সিদ্দিকী তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করে ফেসবুকে পাল্টা পোস্ট দিয়েছেন। শুক্রবার (১৫ মার্চ) রাতে তার নিজের ফেসবুক আইডি থেকে তিনি একটি স্ট্যাটাস দেন।
আম্মান সিদ্দিকীর ফেসবুক স্ট্যাটাস হুবহু তুলে ধরা হল- ‘‘প্রথমেই দুঃখ প্রকাশ করছি ফাইরুজ সাদাফ অবন্তীর মর্মান্তিক মৃত্যুতে। আল্লাহ তাকে জান্নাত নসিব করুন। এবারে সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। সকলের কাছে অনুরোধ করবো পুরো ব্যাপারটা একটা ফেসবুক পোস্ট দিয়ে শুধু জাজ না করে ঘটনার আদ্যোপান্তটা জানার জন্য।
ঘটনার সূত্রপাত ০৪.০৮.২০২২ সালে। একটা ফেইক আইডি থেকে আমাদের ১৪ জন শিক্ষার্থীর নামে গুজব ছড়িয়ে কয়েকজন বন্ধুদের কাছে পাঠানো হয়। যেখানে আমার নামেও অনেক মিথ্যা অপবাদ মূলক কথা ছিল। এমনকি অবন্তীর নিজের নামও সেই টেক্সটের মধ্যে ছিল।
যখন এমন ম্যাসেজ সামনে আসলো আমি সবাইকে নিয়ে কোতোয়ালী থানায় যায়। সেখানে অবন্তী নিজেও উপস্থিত ছিলো। পরবর্তী জিডি করা হয়। এবং জিডি করে ফেরার সময় অবন্তী স্বীকার করে যে ওই ফেইক আইডিটা সে নিজে খুলেছে। এবং অন্য একটি মেয়েকে ফাঁসানোর জন্য সে এই কাজটি করেছে।
পরবর্তী দিন এসআই রুবেলকে, আইও (কোতোয়ালী থানা) আমরা জানাই যে আমাদেরই এক ফ্রেন্ড ঘটনাটি ঘটিয়েছে। এস আই রুবেল আমাদের থেকে অবন্তীর আম্মুর ফোন নাম্বার নিয়ে কল করেন। কল ধরেন অবন্তীর বাবা। সেখানে এসআই রুবেল ভাই আঙ্কেলকে বলেন আপনার মেয়ের বন্ধুদের মধ্যেই যেহেতু বিষয়টি ঘটেছে সেহেতু নিজেরা বসে মিউচুয়াল আন্ডারস্ট্যান্ডিং এর মাধ্যমে সমাধান করে ফেলেন। আমরা সবাই যেহেতু জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সেহেতু প্রক্টর স্যারের কাছেও আমরা ব্যাপারটা অবহিত করি যাতে অপ্রীতিকর কিছু ঘটলে যেন প্রক্টরিয়াল বডি বিষয়টা সম্পর্কে অবগত থাকেন।
অবন্তী এই ঘটনার আগ পর্যন্ত আমার বা আমাদের বেশ ভালো বন্ধুই ছিল। যাই হোক, প্রক্টর অফিস থেকে ওর পরিবারের কাছে চিঠি যায়। তার পরিপ্রেক্ষিতে অবন্তীর বাবা-মা ক্যাম্পাসে আসেন। প্রক্টরিয়াল তদন্ত কমিটির সামনে পুরো ঘটনার বিস্তারিত স্বীকার করে অবন্তী এবং একটা মুচলেকা দেয়। সেই দিনই অবন্তীর আম্মা আমাদের সবার সাথে বাইরে এসে কথা বলেন এবং বলেন ভালোভাবে বাকী সময়টা যেন আমরা মিলে মিশে পার করি। উনি ওইদিন আমাদের সবাইকে কেকও কিনে খাওয়ান।
তার পরবর্তী সময়ে আমি অবন্তীকার সঙ্গে কোনো কথা বলিনি। আর ফেসবুকে তার সঙ্গে আমার তারপর থেকে কোনো যোগাযোগই হয়নি। এমনকি তার সাথে আমার ওই ঘটনার পরে কোনো মাধ্যমেই যোগাযোগ হয়নি।
এবার আসি আমার জায়গা উপস্থাপনে। যারা পোস্টটি পড়ে এতরফা চিন্তা করছেন তারা একটু ঠান্ডা মাথায় এটা পড়বেন। একজন মারা গেছে তার জন্য দুঃখ পাওয়াটা অবশ্যই যৌক্তিক এবং স্বাভাবিক। আমি নিজেও ব্যথিত এবং মানতে কষ্ট হচ্ছে যে এমন একটা তুচ্ছ ঘটনাকে মাথায় রেখে ২ বছর পরে এসে এমন একটা কাজ অবন্তী করবে।
তবে একটু ঠান্ডা মাথায় ভেবে দেখেন। এবং আমার কাছে প্রত্যেকটা বিষয়েরই ডকুমেন্টস আছে। সবাই যদি ডকুমেন্টসগুলোও স্পষ্ট করে দেখেন তাহলে হয়ত বুঝতে পারবেন। আর একটা প্রশ্ন কি আপনাদের মাথায় আসছে না যে ‘মেয়েটিকে যদি আমি অনলাইনে কোনোভাবে ডিস্টার্ব করতাম তবে সে সেটার স্ক্রিনশট অবশ্যই দিতে পারতো। সে সেটা কেন দিলো না?’
আসলে ওই ঘটনার পরে ওর সাথে আমার কোনো কথাই হয়নি। না ফেসবুকে না অন্য কোনো মাধ্যমে। ওই ঘটনাতে সে আমার নামে যেসব বাজে কথা বলেছিলো তারপরে আর তার সাথে কথা কোনো কথাই বলতাম না। তাকে কোনোভাবেই ডিস্টার্ব করার মতো মানসিকতা আমার কখনোই ছিল না। এই ছিলো পুরো ঘটনা। সে আমাকে ব্লক করে রেখেছিল। তার সাথে আমি আজকে পর্যন্তও ফেসবুকে বা অন্যকোনো মাধ্যমে কথাই বলিনি। এই ছিল আমার সাইডের বাস্তবতা এবং সত্যি বিষয়টি। আমি সবগুলো তথ্যই প্রমাণসহ তুলে ধরছি। বিশ্বাস করা না করাটা একান্তই আপনাদের ওপর। তবে আমি যা বলেছি একদম সজ্ঞানে সত্যি বলেছি।
উপরন্তু বলে রাখা ভালো, এই ঘটনার কয়েক মাস পরে অবন্তীকার বাবা মারা যান। হতে পারে অবন্তীকা তার মনে ক্ষোভ বেঁধে রেখেছিল যে আমাদের কারণেই তার বাবা কষ্ট পেয়ে মারা গেছেন। হতে পারে এই ভাবনা থেকে অবন্তীকার মনে আমার বিরুদ্ধে ক্ষোভের সৃষ্টি হয় এবং তীব্র প্রতিশোধ প্রবণ চেতনা থেকেই হয়ত আজকের এই ঘটনা ঘটে তার দ্বারা।
আরো বলা উচিত দ্বীন ইসলাম স্যারের সঙ্গে আমার একজন শিক্ষার্থী হিসেবে যতটুকু সালাম বিনিময় যোগ্য সম্পর্ক ততটুকুই ছিল। এর বাইরে খুব বেশি ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল না যে, স্যার আমার হয়ে অবন্তীকে কয়েকটা কটু বাক্যও বলতে পারে। স্যারকে আমি ডিফেন্ড করছি ব্যাপারটা এমন না, তবে স্যারকে ক্যাম্পাসের সবাই বেশ সহজ সহরল মানুষ হিসেবেই চেনেন। পাবলিক সেন্টিমেন্ট অনেক বড় বিষয়। তাই একপাক্ষিক চিন্তা না করে পুরো বিষয়টা চিন্তা করে একটা মতামতে উপনীত হওয়ার জন্য অনুরোধ করবো সকলকেই।
অবন্তীকার রুহের মাগফেরাত কামনা করছি আমি এবং সবসময় তা করবো ইনশাআল্লাহ। তবে সবাই আমার দিকটাও ভাববেন। ভাববেন আমি ওর সাথে কোনো যোগাযোগ না রেখেও অযথা একটা ভুল বোঝাবুঝির স্বীকার হচ্ছি। আমি আজ পর্যন্তও ওর সাথে কোনো যোগাযোগ করিনি কোনো মাধ্যমেই। আমি নিজেই মাথায় সার্বিক পরিস্থিতির চাপ মাথায় নিয়েই পুরোটা লিখলাম। রায়হান সিদ্দিকী আম্মান, আইন বিভাগ, জবি।’’
আপন দেশ/এসএমএ
মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।