আপন দেশ। ফাইল ছবি
শেষের দশকে পবিত্র মাহে রমজান। কড়া নাড়ছে ঈদ। বাঁকা চাঁদ দর্শনের অপেক্ষায় মুসলমানরা। এরইমধ্যে শুরু হয়েছে ঈদুল ফিতরের প্রস্তুতি। হৃদয়ে বাজছে খুশির বীণ। ‘ও মন রমজানের ওই রোজার শেষে, এলো খুশির ঈদ’ -কাজী নজরুল ইসলামের কালজয়ী এ গান জানান দেয় ঈদের শুভাগমন।
ঈদুল ফিতর। কথিত ভাষায় সেমাই ঈদ। প্রিয়জনদের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে ঘরে ফিরছেন অনেকেই। ছুটি হয়েছে স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়। সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠের শিক্ষার্থীরাও ফিরেছেন আপন নীড়ে। ঈদ নিয়ে করছেন নানা পরিকল্পনা। এবারের আয়োজনে থাকছে তাদের ঈদ ভাবনা।
শফিউজ্জামান শিহাব
যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
ঈদ অর্থ আনন্দ। তবে আমারা যারা বাসা থকে পড়াশোনার জন্য দূরে থাকি, তাদের কাছে ঈদ যেন একটি বাড়তি আনন্দ নিয়ে আসে। নীলফামারী থেকে ৬০৬ কিলোমিটার দূরে আমার বিশ্ববিদ্যালয়। বিধায় ইচ্ছে করলেই সবসময় আসা সম্ভব হয় না। তাই বছরের বড় ছুটিগুলো বিশেষ করে ঈদের ছুটি আমার মধ্যে বেশি আনন্দ নিয়ে আসে। ঈদের দিনে তেমন বিশেষ কিছু পরিকল্পনা নেই। তবে আমি মনে করি যেহেতু অনেকদিন পরে পরিবারের সঙ্গে থাকবো এটাই আনন্দের।
বাবা ও ভাইয়ের সঙ্গে একসঙ্গে ঈদগাহে নামাজ পড়তে যাওয়ার অনুভূতিটা বেশ রোমাঞ্চকর। পরিচিত অনেকের সঙ্গেই দেখা হয়, খোঁজ খবর নেয়া হয়। সকলের চোখে মুখে একটা আলাদা খুশিখুশি ভাব থাকে। আর কোলাকুলির ব্যাপারটা আমার কাছে বেশ দারুণ লাগে। যদিও বড় হয়ে গেছি, তবে সালামি নিতে কার না ভালো লাগে! নামাজ শেষে দাদা-দাদির কবর জিয়ারত করা হয়।
এরপর স্পেশাল কিছু খাওয়া দাওয়া হবে। বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়-স্বজন ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের খোঁজ খবর নিবো। বিকেলে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দেয়া এবং এ দিনটি সকলের সঙ্গে আনন্দ ভাগ করার মাধ্যমেই কাটানো হয়। আমাদের সকলের মাঝে ঈদের আনন্দ ছড়িয়ে পড়ুক। সকলেই নিজেদের পরিচিতজনদের খোঁজখবর রাখবে এমনটাই প্রত্যাশা থাকবে।
আফসানা মিমি
প্রাইম মেডিকেল কলেজ, রংপুর।
বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে তুলনামূলক ছুটি অনেক কম থাকে। এমনকি স্যার-ম্যামরা ঈদের দিন ক্লাস নিবে এমন এক বিষাদ অবস্থা। এ নাজেহাল অবস্থায় ঠিক ঈদের কিছুদিন আগে আমাদের ছুটি হয়। ঈদের শপিং বা যাবতীয় ব্যাপার উপভোগ করতে না পারলেও বাসা থেকে আব্বু আম্মু ঠিকই সব ব্যবস্থা করে রাখে। যারা আমার মতো প্রাইভেট মেডিকেলে পড়ে তারা বুঝতে পারবে এটা কতটা আনন্দের।
এবার আমি একটা ছোট্ট ইচ্ছে রেখেছি- ঈদের দিনে কিছু পথশিশুকে বাড়ির খাবার খাওয়ানোর। ঈদ মানেই আনন্দ। প্রকৃতিতে বিদ্যমান শান্তির বাতাসে এ খুশি ছড়িয়ে পড়ুক সবার মাঝে আনন্দ ভাগাভাগির মাধ্যমে। পরিবার পরিজন বন্ধুবান্ধব শুভাকাঙ্ক্ষীসহ সকল মানুষকে নিয়ে জীবনে আনন্দ আসুক শুধু ঈদের নয়, সুন্দর পৃথিবীর প্রতিটা দিন। প্রতিটা মুহূর্ত।
আবু লোমান হোসেইন শুভ
সিএসই, খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।
ঈদ আমার কাছে এক অভাবনীয় স্বর্গীয় ব্যাপার। সারাবছর সবাই দেশের বিভিন্ন প্রান্তে থাকলেও ঈদে একত্র হতে পারি। আর এ ঈদে আমি সবচেয়ে বেশি এক্সাইটেড। কারণ এবার বাবা-মাকে ঈদের দিন প্রথম ইনকাম থেকে উপহার দিতে পারা। সঙ্গে নিজ হাতে পায়েস রান্না করে খাওয়ানোর ইচ্ছা। আর নামাজ শেষে বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে কুশলাদি বিনিময় করার ব্যাপার তো আছেই।
রুকাইয়া হাসান রাকা
ফোকলোর স্টাডিজ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।
ঈদ মানেই পরিবারের সকলের সঙ্গে আনন্দে মেতে উঠা। যার যেমন সার্মথ্য আছে তা দিয়েই পরিবারের সঙ্গে উদযাপন করা। ছোট থেকে ঈদ আমার কাছে অনেক প্রতীক্ষার একটি দিন। ক্যাম্পাস লাইফ শুরু হওয়ার পর থেকে এ প্রতীক্ষা আরও বেশি। বিশেষ করে ঈদুল ফিতরের আনন্দ দ্বিগুণ বেশি। কারণ এ ঈদেই আমরা শিক্ষার্থীরা সবচেয়ে বেশি ছুটি পাই।
রোজা আসার পর থেকে সকলের মাঝে বাড়ি যাওয়ার আমেজ শুরু হয়। বাড়ির কাছেই বিশ্ববিদ্যালয়। তাই ঈদে ক্যাম্পাস ত্যাগের সেই আনন্দ না পেলেও বন্ধু-বান্ধবের বাড়ি ফেরার আনন্দমাখা চোখ দেখতেই ভালো লাগে। শিহরণ জাগে। তবে সকলেই তার সুখের নীড়ে ফিরতে পারে না। নানান কারণে কিছু শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসের হলেই থেকে যায়।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাদের ঈদের দিনটি আনন্দমুখোর করার জন্য প্রতি হলে খাবারের ব্যবস্থা করে। রাবির কেন্দ্রীয় মসজিদে ঈদ নামাজের আয়োজন করা হয়। তারা এ সামান্য আয়োজনের মধ্যেই ঈদ আনন্দ খুঁজে নেয়। আর আমিও সুযোগ পেলে তাদের সঙ্গে যোগদান করি।
আমার ঈদ শুরু হয় চাঁদরাত থেকেই। বড় হওয়ার পর থেকে ছোট ভাইয়ের সঙ্গে পুরো শহর ঘুরে বেড়াই, নিজের জমানো টাকা দিয়ে পরিবারের সকলের জন্য কিছু উপহার নেই। ঈদের সকাল শুরু হয় খুব ভোরে মায়ের সঙ্গে রান্না করার মধ্যে দিয়ে। তারপর আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে দেখা করা, বন্ধুদের সঙ্গে বিকেলে ঘুরতে যাওয়া। বড় হওয়ার পর থেকে সালামি না পেলেও দায়িত্ব করে সকলকে সালামি দিতে হয়। আমার ঈদ মানেই পরিবারের সঙ্গে অনেক আনন্দ করা। সকলের ঈদ তার পরিবারের সঙ্গে আনন্দময় হোক এ কামনায় করি।
রানা আহাম্মেদ অভি
ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়।
ঈদ মুসলিম উম্মাহর বিশেষ দিন। পবিত্র ঈদের আনন্দ-উল্লাস পূর্ণতা পায় দূরের বিদ্যাপীঠ বা কর্মস্থল থেকে পরিবারের কাছে আসায়। একসঙ্গে ঈদ উদযাপন করায়। আর আমি যেহেতু সাংবাদিকতা করি আমাকে বিভিন্ন জায়গায় ব্যস্ত থাকতে হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যরা এ ছুটিতে সবাই আপন নীড়ে ফিরেছে; কিন্তু আমি এখনো এখানেই।
অন্যদের মতো শত শত মাইল দূরে বাড়ি না হওয়ায় অপার স্বপ্ন নিয়ে বাড়ি যেতে পারিনা! ক্লান্তিকর বাঁধভাঙ্গা উল্লাসের নির্মল আনন্দে মেতে উঠতে পারি না। শরীরের শিরা-উপ-শিরায় আমোদ-প্রমোদের কলরব আসে না। ১৭৫ একরের ক্যাম্পাসের মাটিতেই আমার জন্ম; এখানেই চিরকাল রবে অবস্থান (প্রত্যাশা)। আমার আবেগ ও উৎফুল্লতা সবটাই সীমাবদ্ধ; আমার প্রতিটি দিনই ঈদের উল্লাসের সমতুল্য। ঈদের দিনে কোনো ব্যস্ততা ছাড়াই স্নেহময়ী মায়ের হাতের পরশ আমার সবকিছুর পূর্ণতা; যা ভাষায় বর্ণনা করা যায় না।
আপন দেশ/এমএমসি/এসএমএ
মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।