ছবি: সংগৃহীত
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) লালন শাহ হলে এক নবীন ছাত্রকে র্যাগিং ও শারীরিক নির্যাতনের ঘটনা ঘটে। বিষয়টি খতিয়ে দেখতে হল প্রশাসন ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন পৃথক দুইটি তদন্ত কমিটি করে। এপ্রিলে কর্তৃপক্ষের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয় কমিটি। পাশাপাশি তদন্তে র্যাগিংয়ের সত্যতা পাওয়ায় শাস্তির সুপারিশও করা হয়। প্রতিবেদন জমা দেয়ার ৩ সপ্তাহ পার হয়েছে। অথচ এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়নি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
আগামীকাল ১৯ মে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভা অনুষ্ঠিত হবে। তবে এখন পর্যন্ত ছাত্র শৃঙ্খলা কমিটির সভা না হওয়ায় এ সিন্ডিকেট সভায় র্যাগিংয়ের ঘটনাটি যাচ্ছে না। এমনটাই জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্র।
জানা গেছে, ৭ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের লালন শাহ হলের ১৩৬ নম্বর কক্ষে (গণরুম) এক নবীন ছাত্রকে র্যাগিংয়ের অভিযোগ উঠে। ভুক্তভোগী বিশ্ববিদ্যালয়ের আল-ফিকহ অ্যান্ড লিগ্যাল স্টাডিজ বিভাগের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। ওইদিন লালন শাহ হলের ১৩৬ নম্বর কক্ষে ভুক্তভোগীকে ডাকেন শারীরিক শিক্ষা ও ক্রীড়াবিজ্ঞান বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের মুদাচ্ছির খান কাফী, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের একই শিক্ষাবর্ষের মোহাম্মদ সাগর। ওই সময় তাদের সঙ্গে ছিলেন ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের একই সেশনের উজ্জ্বল হোসেন।
নির্যাতনের সময় উলঙ্গ করে বেঞ্চের ওপর দাঁড় করিয়ে রাখা ছাড়াও বারবার রড দিয়ে আঘাত, অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ ও নাকে খত দেয়ানো হয় বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীর। ওইদিন রাত সাড়ে ১২টা থেকে ভোর সাড়ে ৪টা পর্যন্ত দফায় দফায় তার ওপর নির্যাতন চালানো হয়। ভয় দেখিয়ে বারবার বেড-পত্র বাইরে ফেলে দেয়া হয় বলেও জানায় ভুক্তভোগী ওই শিক্ষার্থী। পরে ঘটনা প্রকাশ্যে এলে গত ১৩ ফেব্রুয়ারি পৃথকভাবে তদন্ত কমিটি করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট হল কর্তৃপক্ষ।
কমিটি গঠনের দেড় মাস পর এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কর্তৃক গঠিত তদন্ত কমিটি। এছাড়া কাজ শুরুর দুই মাস পর ২২ এপ্রিল প্রতিবেদন জমা দেয় হল প্রশাসন কর্তৃক গঠিত কমিটি। দুই কমিটির প্রতিবেদনেই ঘটনার সত্যতা পাওয়া যায় বলে জানা যায়।
এছাড়া জড়িতদের বিরুদ্ধে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সুপারিশও করা হয়েছে বলেও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়। কিন্তু এরপরও এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
আরও পড়ুন>> ‘প্লিজ স্যার চাকরিটা খুব দরকার, ১০ লাখ নেন’
ছাত্র ইউনিয়নের ইবি সংসদের সভাপতি মাহমুদুল হাসান বলেন, গত তিন মাস আগে এ র্যাগিংয়ের ঘটনা ঘটে। তবে এখন পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কর্তৃক দৃশ্যমান পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি। তাই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের নিকট জোর দাবি জানাচ্ছি, যেন দ্রুত সময়ের মধ্যে র্যাগিংয়ের ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান করা হয়।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কর্তৃক গঠিত তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. দেবাশীষ শর্মা বলেন, গত ঈদের ছুটির আগেই আমরা ঘটনার তদন্ত প্রতিবেদন কর্তৃপক্ষের নিকট জমা দিয়েছি। সিদ্ধান্তের বিষয়ে কর্তৃপক্ষ ভালো বলতে পারবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহাদৎ হোসেন আজাদ বলেন, প্রতিবেদন সাধারণত রেজিস্ট্রারের নিকট জমা দেয়া হয়। সেখান থেকে উপাচার্যের অনুমতিতে ছাত্র-শৃঙ্খলা কমিটির সিদ্ধান্ত হয়ে আমার কাছে আসে। প্রতিবেদন আসার পর পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালাম বলেন, এটি মূলত ছাত্র-শৃঙ্খলা কমিটি হয়ে পরবর্তীতে সিন্ডিকেটে আসবে। এখানে একটু মিসটেক হয়েছে তাই দেরি হয়েছে। আমি বিষয়টি নিয়ে সবজায়গায় দ্রুত সমাধানের জন্য বলেছি। আশা করি শিগগিরই এর সমাধান হবে।
আপন দেশ/এসএমএ
মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।