ছবি: আপন দেশ
কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে দীর্ঘদিন ধরে চলমান শ্রেণীকক্ষ ভাগবাটোয়ারা নিয়ে ক্যাম্পাসে অস্থিরতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ড. ইউনুসের নেতৃত্বে বিপ্লবী সরকারের দায়িত্ব নেয়ার পর এ সমস্যা আবারও প্রকট হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে রবীন্দ্র-নজরুল কলা ভবনে এর প্রভাব বেশি লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
গত ৫ আগস্টের আগে ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগ চতুর্থ তলার শ্রেণীকক্ষগুলো নিজেদের দখলে নেয়। এরপর আরবি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগ তৃতীয় তলার কক্ষগুলো দখল করে নেয়। ফলে পুরো ভবনই দখল হয়ে যায়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ডিনকে শ্রেণীকক্ষ বণ্টনের দায়িত্ব দিলে দখলদার বিভাগগুলো তাতে তোয়াক্কা না করে ক্লাস চালিয়ে যেতে থাকে।
গত ৮ অক্টোবর ডিন অফিসের মালামাল স্থানান্তরের সময় অফিস কর্মকর্তাদের বাঁধা ও সমস্যা তৈরি হয়। পরে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সমাধান করে সংশ্লিষ্টরা। নিয়ম না মেনে কক্ষগুলো নিজেদের দখলে নেয়ায় ভবনের কক্ষ বণ্টনে বিশৃঙ্খলা ও জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। ২৩ অক্টোবর দুপুর চারুকলা বিভাগের রবীন্দ্র-নজরুল কলা ভবনে নিজেদের বরাদ্দকৃত কক্ষ ব্যবহার করার সুযোগ না পেয়ে মানববন্ধন করেছে বিভাগটির শিক্ষার্থীরা।
গত ৩ নভেম্বর ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবনের সামনে শ্রেণীকক্ষ বন্টন নিয়ে ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ, ফোকলোর স্টাডিজ ও চারুকলা বিভাগের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ত্রিমুখী অবস্থান দেখা যায়। উপাচার্যের প্রাথমিক আশ্বাসের পর শিক্ষার্থীরা ফিরে যায়। পরে ৪ নভেম্বর থেকে ফের আন্দোলন শুরু করে চারুকলা বিভাগের শিক্ষার্থীরা। দুপুর সাড়ে ৩টায় তারা প্রশাসন ভবনের সামনে অনশন শুরু করেন। লিখিতভাবে তাদের বরাদ্দকৃত জায়গা না দেয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন। এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে অস্থিরতা বিরাজ করছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের নির্দেশনায় নতুন কক্ষ বরাদ্দ পেলেও দখলদার বিভাগগুলোর বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে। এ পরিস্থিতিতে রবীন্দ্র-নজরুল কলা ভবনের কক্ষ বণ্টনের একটি চূড়ান্ত তালিকা প্রণয়ন করা হয়। কিন্তু তা কার্যকর হচ্ছে না।
সূত্রে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী নতুন কক্ষ বরাদ্দ পাওয়ার পরেও রবীন্দ্র-নজরুল কলা ভবনের কক্ষ কর্তৃপক্ষকে অবহিত না করে জোরপূর্বক দখল করে রাখার অভিযোগ ওঠে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের কয়েকটি বিভাগের বিরুদ্ধে। এই পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শ্রেণীকক্ষ সংকট নিরসনে রবীন্দ্র-নজরুল কলা ভবন ও অনুষদ ভবনের ডিন এবং বিভাগের সভাপতি মিলিত হয়ে সর্বসম্মতির ভিত্তিতে কক্ষ বণ্টনের একটি চূড়ান্ত তালিকা প্রণয়ন করে। গত ০৬ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ কর্তৃক এই তালিকার চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়।
রবীন্দ্র-নজরুল কলা অনুষদের তৃতীয় তলায় অস্থিরতার শুরু হয়। আরবি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের বিরুদ্ধে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের বরাদ্দকৃত শ্রেণীকক্ষ দখলের অভিযোগ উঠেছে। এর ফলে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা তাদের বরাদ্দকৃত কক্ষে প্রবেশ করতে পারছে না।
একইভাবে ফোকলোর ও ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগ চতুর্থ তলার কক্ষগুলো দখল করে রেখেছে। পঞ্চম তলায় শারীরিক শিক্ষা ও ক্রীড়া বিজ্ঞান বিভাগের বিরুদ্ধে আংশিক দখলের অভিযোগ রয়েছে। সব মিলিয়ে রবীন্দ্র-নজরুল ভবনের অস্থিরতা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার এইচ এম আলী হাসান উপাচার্যের অনুমোদনের ভিত্তিতে কক্ষগুলো বণ্টনের জন্য কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. এমতাজ হোসেনকে অনুরোধ করেন। তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হচ্ছে না। সমস্যা সমাধানের কোনো লক্ষণও দেখা যাচ্ছে না বলে জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট বিভাগসমূহে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোর চাহিদা ও কক্ষের সংখ্যা বিবেচনায় রবীন্দ্র-নজরুল কলা ভবনের তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম তলার কক্ষ বণ্টন করা হয়েছে। যেখানে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের জন্য ৩০১ থেকে ৩২৫, ৩২৯ থেকে ৩৩৪, এবং ৩৩৮ থেকে ৩৪১ কক্ষ বরাদ্দ রয়েছে। কলা অনুষদের ডিন অফিসের জন্য ৩২৭ থেকে ৩২৯, ৩৩৫ থেকে ৩৩৭ ও ৩৪২ থেকে ৩৪৫ কক্ষ বরাদ্দ করা হয়েছে। ফাইন আর্টস বিভাগের জন্য ৪০৬ থেকে ৪২৮ ও ৫২৭ ও ৫২৮ কক্ষ বরাদ্দ রয়েছে। আরবি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের জন্য ৪০১ থেকে ৪০৫, ৪২৯ থেকে ৪৪৫, এবং পঞ্চম তলায় ৫০১, ৫২৯ থেকে ৫৪৫ কক্ষ বরাদ্দ করা হয়েছে। সমাজ বিজ্ঞান অনুষদের জন্যও কিছু সাময়িক বরাদ্দ রয়েছে, ৫০৬ থেকে ৫১৮, ৫২৪ থেকে ৫২৬, ৫১৯ থেকে ৫২৩, ৫৩৩ থেকে ৫৩৭, ও ৫০৩ থেকে ৫০৫।
এদিকে আরবি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগ চতুর্থ তলার বদলে তৃতীয় তলা দখল করে রেখেছে। চতুর্থ ও পঞ্চম তলায় অবস্থান করছে ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ, ফোকলোর স্টাডিজ ও শারীরিক শিক্ষা ও ক্রীড়া বিজ্ঞান বিভাগ। এ দখলদারির ফলে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি ও চারুকলা বিভাগের শিক্ষার্থীরা তাদের বরাদ্দকৃত শ্রেণীকক্ষে প্রবেশ করতে পারছে না।
এ বিষয়ে আরবি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. আব্দুল মোত্তালেব জানান, ডিন মহোদয়ের কাছ থেকে একটি নতুন চিঠি এসেছে। চিঠিতে আমাদের চতুর্থ তলা কক্ষ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। তবে আমাদের তৃতীয় তলায় থাকার যুক্তি রয়েছে। আমরা সেখানে অবস্থান করছি।
অন্য বিভাগগুলোর শিক্ষকরা বলেন, আমরা প্রশাসনের নির্দেশনা মেনে চলবো। তবে শিক্ষার্থীদের ওপর আমাদের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। তাদের সংঘাতে না যাওয়ার জন্য আমরা অনুরোধ করেছি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. এমতাজ হোসেন বলেন, আমরা বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি নিয়মের মধ্যে আনতে চাচ্ছি। বেদখলে থাকা কক্ষগুলো উদ্ধারের জন্য আমরা বিভাগগুলোর কাছে চিঠি দিয়েছি। নিয়ম মেনে সমাধান চাই। প্রত্যেক বিভাগের সহযোগিতা প্রয়োজন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ জানিয়েছেন, তিনি ঢাকায় আছেন। তবে সমস্যাটি দ্রুত সমাধানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। পরিস্থিতি বর্তমানে অস্থিতিশীল।
আপন দেশ/এমবি
মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।