Apan Desh | আপন দেশ

বাকৃবিতে গবাদিপশুর ম্যাসটাইটিস রোগের টিকা উদ্ভাবন

বাকৃবি প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১৪:২১, ১২ জানুয়ারি ২০২৫

আপডেট: ১৪:৩৯, ১২ জানুয়ারি ২০২৫

বাকৃবিতে গবাদিপশুর ম্যাসটাইটিস রোগের টিকা উদ্ভাবন

ছবি : আপন দেশ

গবাদিপশুর ম্যাসটাইটিস বা ওলান প্রদাহ একটি মারাত্মক সংক্রামক রোগ, যা গাভীর ওলানে ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের ফলে সৃষ্টি হয়। এ রোগের কারণে গাভীর ওলান ফুলে যায়, জ্বালাপোড়া ও ব্যথার মতো উপসর্গ দেখা দেয়। পাশাপাশি, দুধ উৎপাদন ব্যাপকভাবে কমে যায়। 

পরিস্থিতি গুরুতর হলে দুধ উৎপাদন পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যেতে পারে, যা খামারিদের জন্য বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তদুপরি, ব্যাকটেরিয়াগুলো প্রচলিত এন্টিবায়োটিকের প্রতি রেজিস্ট্যান্ট হওয়ায় সাধারণ চিকিৎসা পদ্ধতিতে কার্যকর সমাধান পাওয়া সম্ভব হয় না।

এ সমস্যা উত্তরণে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি অনুষদের ডিন এবং মাইক্রোবায়োলজি ও হাইজিন বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. বাহানুর রহমান ও তার গবেষণা দল দেশে প্রথমবারের মতো গবাদিপশুর ম্যাসটাইটিস বা ওলান প্রদাহ রোগের ভ্যাকসিন তৈরি করেছেন। চার বছরের গবেষণা শেষে এ ভ্যাক্সিন উদ্ভাবনে সক্ষম হয়েছেন বলে জানান তিনি। অধ্যাপক বাহানুরের এই গবেষক দলে ছিলেন ড. মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান ও বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তর অধ্যয়নরত কয়েকজন শিক্ষার্থী। 

অধ্যাপক ড. বাহানুর বলেন, ২০২০ সালে আমরা গবেষনাটি শুরু করি। আমরা ঢাকা, ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা সহ ৯ টি জেলার ২০৯ টি খামারে জরিপ পরিচালনা করি। জরিপে আমরা ৪৬% গাভীতে ম্যাসটাইটিসের সংক্রমণ খুজে পাই। মাঠ পর্যায় থেকে আমরা স্যাম্পল সংগ্রহ করে সোমটিক সেল কাউন্টের মাধ্যমে ম্যাসটাইটিসের সংক্রমণ ও এর তীব্রতা নিরুপণ করি। পরবর্তীতে গবেষণাগারে দীর্ঘ ক্লিনিকাল টেস্ট ও প্রক্রিয়াকরণ শেষে আমরা এই ভ্যাক্সিন উদ্ভাবনে সক্ষম হই।  

তিনি বলেন, ৫১৭ টি গাভী থেকে নমুনা সংগ্রহ করে এই গবেষণাটি পরিচালনা করা হয়েছে। এই ভ্যাক্সিন তৈরিতে ৪টি ব্যাকটেরিয়া নিয়ে কাজ করেছি। ব্যাকটেরিয়াগুলো হলো- Streptococcus agalactiae, Escherichia coli, Staphylococcus aureus ও Streptococcus uberis। এ ব্যাকটেরিয়াগুলো গবেষণায় ব্যবহৃত নমুনা থেকেই সংগ্রহ করা হয়েছে। চারটি ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে কাজ করে বিধায় একে Polyvalent Mastitis Vaccine বলে। এ ব্যাকটেরিয়াগুলো জুনোটিক স্বভাবের কারণে প্রাণী থেকে মানুষেও ছড়িয়ে পড়তে পারে। 

জানা যায়, বাংলাদেশ বিজ্ঞান একাডেমী-ইউনাইটেড স্টেটস ডিপার্টমেন্ট অফ এগ্রিকালচার (বাস-ইউএসডিএ) প্রোগ্রামের অর্থায়নে ২০২০ সালের ১ অক্টোবর এ গবেষণাটি শুরু হয়ে ২০২৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর শেষ হয়। গবেষণাটির মেয়াদকাল ছিলো তিন বছর এবং এটি ২০২৪ সালের ১১ জুন প্রাণিসম্পদ অধিদফতরে উপস্থাপন করা হয়।

ড.বাহানুর বলেন, ভালো দুধ উৎপাদনে গাভীর ওলানের সুস্থতা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। মূলত ব্যাকটেরিয়া ও ক্ষেত্র বিশেষে কিছু ছত্রাকের আক্রমণে গাভীর এ রোগ হয়ে থাকে। দেশে পূর্বে এ রোগের ভ্যাক্সিন বিদেশ থেকে আমদানি করা হলেও বর্তমানে ভ্যাক্সিনটি দেশে আর পাওয়া যায় না। গাভীর সুস্থতা নিশ্চিত করতে ও দুধ উৎপাদন যাতে ব্যাহত না হয় সে উদ্দেশ্যে সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তিতে আমরাই প্রথম ম্যাসটাইটিস ভ্যাক্সিনটি উদ্ভাবনে সক্ষম হয়েছি। 

তিনি আরো বলেন, আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী কোনো ভ্যাক্সিনের কার্যকারিতা ৭০ শতাংশ হলেই সেটি সফল হিসেবে বিবেচিত হয়। কিন্তু উদ্ভাবিত আমাদের ভ্যাক্সিনটি প্রায় শতভাগ কার্যকর।

গবাদিপশুর উপর ভ্যাক্সিনটির প্রয়োগ সম্পর্কে অধ্যাপক বাহানুর রহমান বলেন, উদ্ভাবিত ভ্যাক্সিনটি ইঁদুর ও গিনিপিগে প্রয়োগ করে এর নিরাপত্তা যাচাই করা হয়েছে এবং পঞ্চম প্রজন্মের এডজুভেন্ট এ ভ্যাক্সিনে ব্যবহার করা হয়েছে। ভ্যাক্সিনটি গাভীর গর্ভাবস্থায় প্রয়োগ করতে হয়। ভ্যাক্সিনটির দুইটি ডোজ গাভীকে দিতে হবে। প্রথম ডোজ গর্ভাবস্থার ৭ থেকে ৮ মাসের মধ্যে এবং দ্বিতীয় ডোজ বাচ্চা হবার আগ মুহূর্তে অর্থাৎ ৯ থেকে সাড়ে ৯ মাসের মধ্যে দিতে হবে। প্রতি প্রাণিকে ৫ মিলি করে ভ্যাক্সিন প্রতি ডোজে দিতে হবে। এই ভ্যাক্সিনের কোনো পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই। ভ্যাক্সিনের দুইটি ডোজ গাভীকে দিয়ে দিলে ম্যাসটাইটিসে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা প্রায় ৯০ শতাংশ কমে যাবে। বাজারজাত করা সম্ভব হলে এই ভ্যাক্সিনের দাম কৃষকের নাগালের মধ্যেই থাকবে।

আপন দেশ/জেডআই

মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়