Apan Desh | আপন দেশ

কে হচ্ছেন ইইডি প্রধান?

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৯:২০, ১৬ জানুয়ারি ২০২৫

আপডেট: ১৯:২৩, ১৬ জানুয়ারি ২০২৫

কে হচ্ছেন ইইডি প্রধান?

প্রকৌশলী মো. জালাল উদ্দিন চৌধুরী ও রায়হান বাদশা

প্রধান পদে কাকে পাচ্ছে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতর (ইইডি)। অপেক্ষার সময় এক কর্মদিবস। শেষ সময়ে নানামুখি পথে হাঁটছেন প্রধান প্রকৌশলীর পদ প্রত্যাশী ছয়জন। তবে নিয়ম ভেঙে পদে থাকা আর পদে ফেরার লড়াইয়ে নেমেছে দুই অতীত-পতিত প্রকৌশলী। 

তাদের একজন প্রধান প্রকৌশলী মো. জালাল উদ্দিন চৌধুরী (চলতি দায়িত্বে)। অন্যজন অনিয়মের দায়ে ওএসডিতে থাকা রায়হান বাদশা। তিনিও সাবেক প্রধান প্রকৌশলী (রুটিন)। এরমধ্যে লবিং করা প্রকৌশলী নজরুল হাকিমের বিরুদ্ধে মাত্র একদিন আগে নতুন করে গঠিত হয়েছে অনিয়মের খোঁজে বিভাগীয় তদন্ত কমিটি।
 
অধিদফতরের অন্য প্রকৌশলীরা চায় বিতর্কের উর্ধ্বে দক্ষ, নিষ্কন্টক ও অভিজ্ঞ সহকর্মী। একইসঙ্গে জোরদাবি, চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিয়ে নিয়মিতদের ভাগ্যেও যেনো পেরেক ঠুকে দেয়া না হয়।  

এদিকে মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, বিতর্কিত বা পতিতদের কাউকেই গুরুত্বপূর্ণ পদটিতে বসাতে নারাজ শিক্ষা মন্ত্রণালয়। ইতোমধ্যে, প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম গণমাধ্যমে বলেছেন, শিক্ষা খাতের দুর্নীতি বন্ধ করা হবে। সে সঙ্গে পুরো শিক্ষাখাতের গুণগত পরিবর্ত আনতে চায় অন্তর্বর্তী সরকার। তিনি স্পষ্টতই বলেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন বিভাগে, স্কুল কলেজে বদলি, পদোন্নতিতে ব্যাপক ঘুষ লেনদেন হয়। শিক্ষা উপদেষ্টারও একই মত। তিনি বলেছেন, কিছু অনিয়মের বিষয়ে তদন্ত হচ্ছে। দুর্নীতি বন্ধে প্রয়োজনে দুর্নীতি দমন কমিশনের সহায়তা নেয়া হবে। 

উপদেষ্টাদের অভিপ্রায়ে রাতারাতি বরাদ্দ-তথ্যফাঁস করেন বাদশা -

বহু দোষে দোষিত তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী রায়হান বাদশা। শিক্ষামন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্তরা ফাইলপত্র বুঝে নিচ্ছিলেন। এরই ফাঁক-ফোকরে বাগিয়ে নিয়েছিলেন শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতরের প্রধান প্রকৌশলীর পদ। সাজাপ্রাপ্ত ও এসিআরবিহীন রায়হান বাদশা ওই পদে ছিলেন মাত্র তিনমাস। এ সময়ের মধ্যেই নিজের চেয়ার পাকাপোক্ত করতে প্রভাবশালীদের সুনজর কাড়তে চেয়েছিলেন। প্রভাবশালীদের খুশি করতে রাতারাতি দিয়েছেন কোটি কোটি টাকা বরাদ্দ।  

দুই কৌশলে বরাদ্দ দিয়েছিলেন। প্রথমত নিয়ম ভেঙে পদে বসেছিলেন। তাতে যেনো গরম হাওয়া না লাগে। অন্যদিকে বরাদ্দপত্র তার দলীয় নেতাকর্মীদের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন, যা নিয়ে রীতিমতো ক্ষমতার অপব্যবহারের প্রশ্ন তোলা হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমান সরকারের প্রভাবশালী ছাত্র উপদেষ্টার গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার মুরাদ নগরের একটি হাই স্কুলের ভবন মেরামতে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ২০ লাখ টাকা। প্রধান উপদেষ্টার দফতরেরের একজন কর্মকর্তার গ্রামের বাড়ির একটি হাই স্কুলের প্রশাসনিক ভবন নির্মার্ণে দেড় কোটি টাকা। মুন্সীগঞ্জের বাসিন্দা একজন গুরুত্বপূর্ণ উপদেষ্টার গ্রামের বাড়ির হাইস্কুলে ৪৫ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। 

আরও পড়ুন<<>> ইইডির চিফ ইঞ্জিনিয়ার পদের তদবিরে সমন্বয়ক-জামায়াত-আমলা

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রভাবশালী কর্মকর্তার চাহিদামতো নীলফামারীর দুটি স্কুলে ৪৫ লাখ টাকা দেয়া হয়েছে। একটি গোয়েন্দা সংস্থার প্রধানের এলাকায় বরাদ্দ দেয়া হয় ২০ লাখ টাকা। একজন ব্রিগেডিয়ার জেনারেলের এলাকায় এক কোটি ২৫ লাখ টাকা বরাদ্দ দেন রায়হান বাদশা। তখন রায়হান বাদশা ছিলেন রুটিন দায়িত্বে। ওই পদে বহাল হতে তাকে আরও দুইধাপ প্রমোশন দরকার ছিল। 

বরাদ্দদানকালে উপদেষ্টা ও প্রধান উপদেষ্টার দফতরের ব্যক্তিদের প্রতি রায়হান বাদশার আবদার ছিল পদোন্নতি আর স্বধীনভাবে দায়িত্বপালনে সহযোগিতা করা। বঙ্গবন্ধু প্রকৌশলী পরিষদ নেতাদের সুরক্ষা দেয়া।   

গোপন বৈঠক-ক্লাসমেটকে নিয়ে ডুব-

পলাতক শেখ হাসিনার আহবান ছিল গত ১০ নভেম্বর শহীদ নূর হোসেন দিবসে নিজ নিজ অবস্থান থেকে রাজধানীতে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করা। নেত্রীর আহবানে ওইদিন রায়হান বাদশার নেতৃত্বে অধিদফতরে গোপন বৈঠক হয়েছিল। তাতে ছিল বঙ্গবন্ধু প্রকৌশলী পরিষদ নেতা সমির কুমার রজক দাসসহ বিভিন্ন পদে থাকা আওয়ামী লীগপন্থিরা। 

বাদশার ক্লাসমেট প্রকৌশলী আফরোজা বেগম। তিনিও ছিলেন প্রধান প্রকৌশলী পদের দাবিদার। ওই বৈঠকে হাজির থাকতে এবং রেজুলেশনে সাক্ষর করতে বাধ্য করা হয় আফরোজা বেগমকে। মতিঝিলে ঝটিকা মিছিল হলেও রায়হান বাদশারা বের হওয়ার পরিবেশ পাননি। এ নিয়ে গোয়েন্দা সংস্থা ও গণমাধ্যমের রিপোর্ট প্রকাশিত হয়। পদায়নে বিধি ভঙ্গ, অনিয়ম, রাজনৈতিক দর্শন, অসদাচারণ আর অনৈতিকতার আমলনামা প্রকাশিত হলে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার রায়হান বাদশাসহ বাকি দুই প্রকৌশলীকেও ওএসডি করে। 

বরাদ্দ দেয়া-নেয়া প্রভাবশালীদের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন রায়হান বাদশা। বিনিময় হিসেবে তার ওএসডি প্রত্যাহার করে ফের প্রধান প্রকৌশলীর পদ ফিরে চান। চাউর রয়েছে, ইতোমধ্যে একজন উপদেষ্টাকে দিয়ে বিবেচনা করা যায় কিনা- এমন সহানুভুমিমূলক ফোন করাতে পেয়েছেন বাদশা। 

জালাল চৌধুরীর বিরুদ্ধে নিজদায়িত্বে চাঁদা কালেকশনের অভিযোগ-

রায়হান বাদশারা গত ২০ নভেম্বর ওএসডি হওয়ার পর দায়িত্ব পান প্রকৌশলী মো. জালাল উদ্দিন চৌধুরী। তিনিও সুপারসিট করে দায়িত্বে এসেছেন। দুইমাসে তিনিও গায়ে অনিয়মের কালি মেখেছেন। সেমিনারের নামে নিজ হাতে উৎকোচ গ্রহণ করেছেন। তার চাকরির মেয়াদ শেষ ১৯ জানুয়ারি। তবে অবসর নিয়ে ঘরে ফিরতে চান না তিনি। চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ নিয়ে এ পদে থাকতে চান আরও দু’বছর। মন্ত্রণালয়ে ফাইল প্রসেস করে জমা দিলে তা ফেরত এসেছিল। ফের ফাইল চালাচ্ছেন ‘গৌরি সেন’ এর চাকায়। তাকে নিয়ে ইতোমধ্যে অস্বস্তিতে নিয়মিত ও পদোন্নতি প্রত্যাশিত প্রকৌশলীরা। 

একাধিক প্রকৌশলী আপন দেশকে বলেন, চুক্তিভিত্তিক নিতে হবে কোনো? সিনিয়র ও দক্ষ একাধিক প্রকৌশলী রয়েছে অধিদফতরে। স্বৈরাচারের রোষাণলে তাদের অনেকেই রাজধানীর বাইরে সততার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছেন। তাদের মূল্যায়নের দাবি জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টদের কাছে। 

পদোন্নতির ফাইলের খবর নিতে গিয়ে দেখলেন তদন্তের চিঠি-

প্রকৌশলী নজরুল হাকিমও প্রধান প্রকৌশলী হতে চায়। চাকরিতে নিয়োগের পর থেকে ২/৩ মাস বাদে বাকি সময় সিলেটেই ছিলেন হাকিম। নিজ বিভাগের হওয়ায় ঠিকাদার আর সরকারি কর্মকর্তা মিশে একাকার হয়েছিলেন। আঞ্চলিক ঠিকাদারকের কাছ থেকে চাহিদামতো কমিশন নিয়েছেন। কাজের আগেই টাকাও দিয়েছেন। টাকা নিয়ে কাজ না করেই বেহদিস ঠিকাদার। আবার কোনো কোনো ঠিকাদার চার মাসের সময় নিয়ে পার করেছেন চার বছর। ৮০ প্রতিষ্ঠানে প্রায় ১৫ কোটি টাকা জলে গেছে। এ নিয়ে গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছে। 

গত ১৪ জানুয়ারি নজরুল হাকিমের অনিয়মের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্তের চিঠি গেছে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতরের সিলেটের তত্বাবধায়ক প্রকৌশলীর কাছে। তদন্তের সময় সাতদিন। আপাতত হাকিমে আশাগুড়েবালি।

আপন দেশ/এবি

মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়