
ছবি: আপন দেশ
বিভিন্ন ঐতিহ্যের ধর্মীয় নেতাদের সমন্বিত সহযোগিতার মাধ্যমেই দেশে একটি স্থিতিশীল পরিবেশ নিশ্চিত করা সম্ভব বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
সোমবার (১০ ফেব্রুয়ারি) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) শুরু হওয়া দুই দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক কর্মশালায় অংশ নিয়ে বক্তারা একথা বলেছেন।
‘ইন্টারন্যাশনাল ওয়ার্কশপ অন মাল্টিফেইথ ডায়লগ (আইডব্লিওএমডি ২০২৫)’ ঢাবির নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনের মূল অডিটোরিয়ামে শুরু হয়েছে।
কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ঢাবির ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমেদ খান। সম্মেলনটি বাংলাদেশে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ গড়ে তোলার ক্ষেত্রে একটি অনন্য ভূমিকা রাখবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
কর্শালায় সভাপতিত্ব করেন ঢাবির অধ্যাপক ও আইডব্লিওএমডি ২০২৫-এর আহবায়ক ড. মোহাম্মদ ইলিয়াস। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন বিআইআইটির মহাপরিচালক ও আইডব্লিওএমডি-২০২৫-এর সহ আহবায়ক অধ্যাপক ড. এম আবদুল আজিজ ।
এ আয়োজনের লক্ষ্য হলো- সংলাপের মাধ্যমে বিভিন্ন ধর্মের ধর্মীয় নেতা ও বিভিন্ন সম্প্রদায়ের প্রভাবশালীদের একত্রিত করণ, পারস্পরিক আস্থা বৃদ্ধি ও সহযোগিতামূলক সম্পর্ক গড়ে তোলা, শান্তি ও সম্প্রীতির অনুকূল পরিবেশ নির্মাণে কৌশলগত কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ এবং সরাসরি বাংলাদেশের সম্প্রদায়গুলিকে এমন প্রকল্পে জড়িত করা। বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে শান্তি, সম্প্রীতি ও সহযোগিতার ঐতিহাসিক-ঐতিহ্যের প্রকৃত বার্তা আগামীর সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণের জন্য একটি বিশেষ গুরুত্ব বহন করবে।
দেশি-বিদেশি বক্তারা বলেন, বাংলাদেশ ধর্মীয় সম্প্রীতির দেশ। সব ধর্মের মানুষ শান্তিপূর্ণভাবে সৌহার্দ্যের সঙ্গে এদেশে বসবাস করে। এ দেশের মানুষ ধর্মীয় পরিচয়ের কারণে অধিকারে বৈষম্য বা বিভাজন করে না। মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ট দেশটিতে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টানসহ সব ধর্মের মানুষের নিরাপত্তা রয়েছে।
আলোচকরা বলেন, সব নাগরিকের সম্পৃক্ততার মাধ্যমেই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ঐক্য ও শক্তির প্রতীক হয়ে ওঠে। ধর্মপালন, ধর্মচর্চা ও প্রচারের অধিকার যেখানে রয়েছে, সেখানে সব ধর্মের মানুষের মধ্যে অকৃত্রিম সম্পর্ক বিরাজ করে। আর অর্থপূর্ণ সংলাপের মাধ্যমেই বাস্তবে আন্তঃধর্মীয় কিংবা বহুধর্মীয় সম্প্রীতি গড়ে তোলা সম্ভব। কোনো সত্যিকারের ধার্মিক অন্য ধর্মের ঐতিহ্যের অনন্য ধর্মতাত্ত্বিক পরিচয়কে অসম্মান করে না। শান্তিময় সমাজ নিশ্চিত করতে প্রতিটি ধর্মীয় জনগোষ্ঠীকেই সহানুভূতিশীল ও পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধসম্পন্ন হতে হবে। বিভিন্ন ঐতিহ্যের ধর্মীয় নেতাদের সমন্বিত সহযোগিতার মাধ্যমেই একটি স্থিতিশীল পরিবেশ নিশ্চিত করা সম্ভব।
বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন মাল্টি-ফেইথ নেইবারস নেটওয়ার্ক এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা ড.বব রবার্টস জুনিয়র, ইসলামিক সোসাইটি অব নর্থ আমেরিকার (আইএসএনএ) চেয়ারম্যান ইমাম মোহাম্মদ মাজিদ। অনুষ্ঠানে মুসলিমদের পক্ষ থেকে বিশিষ্ট পরমাণু বিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. এম শমশের আলী, হিন্দুদের পক্ষ থেকে শ্রীমত স্বামী অম্বেশানন্দ, খ্রিস্টানদের পক্ষ থেকে আরচ বিশপ বিজয় দে, বৌদ্ধদের পক্ষ থেকে প্রফেসর ড. সুকোমল বড়ুয়া বক্তব্য দেন।
অনুষ্ঠানে ধর্মতত্ত্ব এবং হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ও মুসলিম ধর্মীয় শতাধিক নেতারাসহ সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনভিত্তিক মাল্টি-ফেইথ নেইবারস নেটওয়ার্ক (এমএফএনএন) এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর ইন্টার-রিলিজিয়াস অ্যান্ড ইন্টার-কালচারাল ডায়লগ (সিআইআইডি), বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইসলামিক থট (বিআইআইটি) এবং আমেরিকান ইনস্টিটিউট অব ইন্টিগ্রেটেড থট (এআইআইটি) এর সহযোগিতায় এ সম্মেলনটি হচ্ছে।
১১ ফেব্রুয়ারি, মঙ্গলবার, সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা থেকে সাড়ে ৮টা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত সমাপনী অনুষ্ঠান হবে। এতে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. এ এফ এম খালিদ হোসেন প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন। এছাড়া ঢাবির প্রোভিসি (অ্যাকাডেমিক) অধ্যাপক ড. মামুন আহমেদ বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন।
আপন দেশ/এমএস
মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।