
ছবি : আপন দেশ
চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার ১২১টি প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ রেখে বনভোজন ও মিলনমেলার আয়োজন করেন শিক্ষক ও শিক্ষক সমিতির নেতারা। সে আয়োজনে অংশ নেন রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গও। এ নিয়ে শুরু হয় সমালোচনা। শিক্ষকদের ছুটি মঞ্জুর করায় প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার লাইলা তাসলিমা নাসরিনকে শোকজ করা হয়েছে। এ বিষয়ে মঙ্গলবার মধ্যে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে।
সোমবার (১০ ফেব্রুয়ারি) চুয়াডাঙ্গা বাংলাদেশ সরকারি প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা শাখার ব্যানারে আক্কাছ লেক ভিউ পার্ক এন্ড রিসোর্ট এ মিলনমেলা ও বনভোজনের আয়োজন করা হয়।
শিক্ষক নেতারা দাবি করেন, তারা সংরক্ষিত ছুটি নিয়ে বনভোজনের আয়োজন করেছিলেন। বিষয়টি জানার পর জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ছুটি বাতিলের ঘোষণা দিলে দুপুরে তারা বিদ্যালয়ে ফিরে আসেন।
এদিকে কিভাবে ও কেন ছুটি দিয়েছেন, তা জানতে চুয়াডাঙ্গা উপজেলার শিক্ষা অফিসার লাইলা তাসলিমা নাসরিনের কাছে ব্যাখ্যা তলব করেছেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস। মঙ্গলবারের মধ্যে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে।
সদর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা লায়লা তাসলিমা নাসরিন বলেন, শিক্ষা অফিসারের অনুমতিক্রমে প্রধান শিক্ষকরা বছরে তিন দিন সংরক্ষিত ছুটি নিতে পারেন। শিক্ষক সমিতির নেতারা চাইছিলেন বনভোজন করবেন। সব শিক্ষক সংরক্ষিত ছুটির আবেদন করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে আমি ছুটি দিই।
শোকজের বিষয়ে তিনি বলেন, শিক্ষা অফিসারের অনুমতিক্রমে প্রধান শিক্ষকরা বছরে তিন দিন সংরক্ষিত ছুটি নিতে পারেন। শিক্ষক সমিতির নেতারা চাইছিলেন বনভোজন করবেন। সব শিক্ষক সংরক্ষিত ছুটির আবেদন করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে আমি ছুটি দিই।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা অহীন্দ্রকুমার ম ল বলেন, বনভোজনের জন্য শিক্ষকদের সংরক্ষিত ছুটি মঞ্জুর করায় সদর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা লায়লা তাসলিমা নাসরিনকে শোকজ করা হয়েছে। তার জবাব পাওয়ার পর বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেয়া হবে।
অভিভাবকরা বলেছেন, এ বছর বেশিরভাগ শিক্ষাথীরা এখনো বই পায়নি। শুক্র ও শনিবার সাপ্তাহিক ছুটি ছিল। সোমবার বিদ্যালয় বন্ধ করে বনভোজন। মঙ্গলবার সরকারি ছুটি। এমনিতেই শিক্ষার্থীরা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তার ওপর এভাবে ছুটি দিয়ে বনভোজন করা ঠিক হয়নি। অনুষ্ঠানটি যেকোনো ছুটির দিনে করা উচিত ছিল বলে তারা মনে করেন।
রাজনৈতিক দলের নেতারা এ মিলনমেলায় অংশ নেন। স্কুল বন্ধ রেখে এ আয়োজন করায় আলোচনার জন্ম হলে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার, সহকারী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার, উপজেলা উপজেলা শিক্ষা অফিসার, সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারসহ বেশিরভাগ কর্মকর্তা কর্মচারী দাওয়াত পেলেও শেষ পর্যন্ত বেশ কয়েকজন যোগ দেননি। তবে পিকনিকের চাঁদা দিলেও অনেকের ভাগ্যে জোটেনি পিকনিকের রান্না করা বাহারি খাবার।
চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম বলেন, আমাদের পক্ষ থেকে সংরক্ষিত ছুটির আবেদন করা হয়। প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আমাদের ছুটি মঞ্জুর করেন। এরপরই মিলনমেলা ও বনভোজনের আয়োজন করা হয়। আয়োজন চলার সময়ে হঠাৎ আমাদের জানানো হয় ছুটি বাতিল করা হয়েছে। এখনি স্কুল খোলার নির্দেশ দিয়েছেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার। এরপরই বেলা ২টার মধ্যে আমরা গুছিয়ে বের হয়ে যাই।
তিনি বলেন, শিক্ষকরা বছরে তিনটি সংরক্ষিত ছুটি পান। সে ধারাবাহিকতায় আমরা ছুটি পাশ করিয়ে আয়োজন করেছিলাম। তবে কয়েকটা বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা অংশগ্রহণ না করায় তাদের বিদ্যালয় খোলা ছিল। এ বিষয়টি এখন কেন প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে, তা আমার জানা নেই।
সদর উপজেলার আলুকদিয়া ইউনিয়নের একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একজন নারী শিক্ষিকা বলেন, সমিতির নেতারা বনভোজনের জন্য ৫০০ টাকা চাঁদা তুলছেন। বনভোজনে শিক্ষকদের যাওয়ার জন্য কোনো যানবাহণের ব্যবস্থা রাখেনি। ১৫ কিলোমিটার পথ নিজ ব্যবস্থায় যেতে হবে। তাই আমার মত অনেকেই চাঁদা দিয়েও বনভোজনে অংশ নেইনি।
বনভোজনে অংশ নেয়া কয়েকজন শিক্ষক জানান, আগে কখনোই বিদ্যালয় বন্ধ রেখে এভাবে প্রাথমিক শিক্ষকদের বনভোজন আয়োজন হয়নি। বনভোজনের জন্য প্রত্যেক শিক্ষকের কাছ থেকে বাধ্যতামূলক ৫০০ টাকা করে চাঁদা নেয়া হয়। কিন্তু আয়োজনে ত্রুটি থাকায় শেষ পর্যন্ত অনেক শিক্ষক খাবার পায়নি বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
আপন দেশ/জেডআই
মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।