Apan Desh | আপন দেশ

প্রসেসিং প্ল্যান্ট নেই, গবেষণা জমা পড়েছে গত বছরেই!

বাকৃবি প্রতিনিধি:

প্রকাশিত: ১০:৩৯, ৩ মার্চ ২০২৫

প্রসেসিং প্ল্যান্ট নেই, গবেষণা জমা পড়েছে গত বছরেই!

ছবি : আপন দেশ

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) পোল্ট্রি বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. ইলিয়াস হোসেন বাউরেসের অর্থায়নে পরিচালিত একটি গবেষণায় প্রসেসিং প্ল্যান্ট স্থাপনের ভুয়া তথ্য উল্লেখ করে প্রতিবেদন জমা দেন। ২০২৪ সালের এপ্রিল মাসে অনুষ্ঠিত বাউরেসের বার্ষিক কর্মশালায় তিনি বাকৃবির পোল্ট্রি খামারে প্রসেসিং প্ল্যান্ট স্থাপনের বিষয়ে মিথ্যা তথ্য উপস্থাপন করেন।

ওই কর্মশালার প্রতিবেদনের সারসংক্ষেপে তিনি উল্লেখ করেন যে, প্রকল্পটি দুটি ধাপে সম্পন্ন হয়েছে। প্রথম ধাপে, ময়মনসিংহের স্থানীয় বাজারে পোল্ট্রি জবাই ব্যবস্থার অবস্থা পর্যবেক্ষণ করা হয় এবং স্থানীয় বাজার ও প্রক্রিয়াকরণ ইউনিট থেকে সংগ্রহ করা মুরগির মাংসের জীবাণু গুণাগুণ মূল্যায়ন করা হয়। দ্বিতীয় ধাপে, বাকৃবির পোল্ট্রি খামারে একটি ক্ষুদ্র প্রসেসিং প্ল্যান্ট স্থাপন করা হয়, যেখানে ১৫০ বর্গফুট আয়তনের খোলা-পার্শ্বযুক্ত একটি প্রক্রিয়াকরণ ইউনিট প্রতিষ্ঠিত হয়।

ও তথ্য অনুসারে, গত বছর প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল সে মিনি প্রসেসিং প্ল্যান্ট। এদিকে, সরেজমিনে দেখা যায়, বাকৃবির পোল্ট্রি খামারে নেই অধ্যাপক ড. ইলিয়াসের কোনো সম্পূর্ণ প্রসেসিং প্ল্যান্ট। তবে রয়েছে ছাদ ও দেয়ালবিহীন একটি কাঠামো। 

বাকৃবির পোল্ট্রি খামারের অফিসার-ইন-চার্জ লেকচারার তানভীর আহমেদ জানান, বর্তমান খামারে কোনো প্রসেসিং প্ল্যান্ট নেই। তবে একটি প্রসেসিং প্ল্যান্ট তৈরির কাজ চলমান আছে।

বাউরেসের সিনিয়র বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. পরেশ কুমার শর্মা নিশ্চিত করেছেন প্রকল্পটি ২০২৪ সালে শেষ হয়ে গেছে। বাউরেসের নিয়মানুযায়ী, গবেষণা শেষে ফলাফল যাচাই করার জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছিল। কমিটিতে ছিলেন পশু প্রজনন ও কৌলিবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. রুহুল আমিন, পশুপুষ্টি বিভাগের অধ্যাপক ড. খান মো. সাইফুল ইসলাম ও অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আল-মামুন।

কোনো প্রকার প্রসেসিং প্ল্যান্ট ছাড়াই কিভাবে গবেষণা ফলাফল জমা পড়েছে, সে বিষয়ে জানতে চাইলে পশু প্রজনন ও কৌলিবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. খান মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, ওই গবেষণার যাচাই টিমে আমি ছিলাম। তবে যাচাই টিমের কাজ হলো গবেষণা প্রবন্ধের ফাইন্ডিংস, অবজারভেশন অর্থাৎ গবেষণা সংক্রান্ত বিষয়সমূহ পর্যবেক্ষণ করে মূল্যায়ন করা। আর্থিক মনিটরিংয়ের কাজ আমাদের নয়, এটি করে থাকে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় রিসার্চ সিস্টেম (বাউরেস)। আসলে প্রসেসিং প্ল্যান্টের বিষয়ে ওই গবেষণা প্রবন্ধে কিছু ছিল কিনা সেটা আমরা দেখি না। এসব বিষয় নিয়ে কাজ করে থাকে বাউরেসের ফিনান্সিয়াল কমিটি। আমাদের কাজ হলো কী নিয়ে গবেষণা হয়েছে, কিভাবে করেছে, রেজাল্ট কী— এসব বিবেচনা করা।

অন্যদিকে, অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আল-মামুনকে বারবার মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি।

প্রসেসিং প্ল্যান্টবিহীন গবেষণা কিভাবে সম্পন্ন হয়েছে, সে বিষয়ে জানতে চাইলে অধ্যাপক ড. ইলিয়াস জানান, আমার গবেষণার লক্ষ্যই ছিল যাতে বাকৃবির পোল্ট্রি খামার থেকে যত মুরগি বের হবে, সবগুলো যাতে প্রসেসিং প্ল্যান্ট হয়ে বের হয়, যাতে পরিচ্ছন্নতা ও হাইজিন পরিপূর্ণভাবে মেনে চলা যায়। 

তবে বিভাগের অন্যান্য শিক্ষকের পোল্ট্রি শেড তৈরির কারণে সময়মতো মিনি প্রসেসিং প্ল্যান্টটি তৈরি সম্ভব হয়নি। পরবর্তীতে বিভাগের আলোচনায় পোল্ট্রি খামারের ভিতরে অবস্থিত পুকুরের শেষ মাথায় জায়গা ঠিক করা হয় এবং বিভাগ দায়িত্ব নিয়ে প্ল্যান্ট তৈরির কাজটি তদারকি করছে। গত বছর প্ল্যান্ট তৈরির কাজ শুরু হলেও বর্ষাকালে কাজ করতে বেগ পেতে হয়েছে। পানি সরানো, মাটি ভরাটসহ বিভিন্ন কারণে সময় লেগেছে। বর্তমানে কাজের ৮০ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। প্ল্যান্টের পিলার উঠানো শেষ, শুধু ছাদ ও টিনশেডের কাজ করলেই কাজটি শেষ হয়ে যাবে।

আপন দেশ/জেডআই

মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়