
ফাইল ছবি
ভর্তি পরীক্ষার্থীদের ভোগান্তি কমাতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষা ঢাকা, রাজশাহী, খুলনা, রংপুর ও চট্টগ্রাম— পাঁচটি বিভাগীয় শহরে নেয়ার উদ্যোগ নেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তবে শুরুতেই পরীক্ষার জন্য প্রকাশিত আসনবিন্যাস শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিতর্ক ও ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে।
পরবর্তীতে তোপের মুখে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন পুনরায় নতুন আসনবিন্যাস প্রকাশ করতে বাধ্য হয়। ফলে শিক্ষার্থীদের তিনবার প্রবেশপত্র ডাউনলোড করতে হয়। হলে প্রবেশের সময় সর্বশেষ ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রবেশপত্র সঙ্গে আনতে বাধ্য হওয়ায় ভোগান্তিরও শিকার হতে হয়।
এদিকে, ভর্তি পরীক্ষায় ‘এ’ ও ‘সি’ ইউনিটের প্রশ্নপত্রে দুই শিফটে দশটিরও অধিক ভুল ও অসঙ্গতি পাওয়া গেছে। এছাড়া, ‘বি’ ইউনিটের পরীক্ষায় ‘সি’ ইউনিটের উত্তরপত্র (ওএমআর) শিট প্রদান এবং পরীক্ষার হলে পরীক্ষার্থীকে শিক্ষক ‘চোর’ বলে সম্বোধন করে ‘একে সাইজ করা দরকার’ মন্তব্য করার অভিযোগও পাওয়া গেছে।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জানিয়েছে, প্রথমবারের মতো বিভাগীয় পর্যায়ে পরীক্ষা নেয়া ছিল বড় একটি চ্যালেঞ্জ। এছাড়া কিছু ভুলভ্রান্তি হলেও ভবিষ্যতে এ অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে আরও সুসংগঠিত ও সুষ্ঠুভাবে পরীক্ষা নেয়ার চেষ্টা করবেন বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মোহাম্মদ মাঈন উদ্দীন।
গত ১২ এপ্রিল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক প্রথম বর্ষের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার মধ্য দিয়ে এ বছরের পরীক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়। পরীক্ষায় ভুলক্রমে ‘সি’ ইউনিটের উত্তরপত্র (ওএমআর শিট) প্রদানের ঘটনা ঘটেছে। এদিন বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদুল্লাহ্ কলা ভবনের ২০১, ২০৩ ও ২০৪ নম্বর কক্ষে এসব ঘটনা ঘটে। ভুল উত্তরপত্র দেখে হতভম্ব হয়ে পড়েন ভর্তিচ্ছু পরীক্ষার্থীরা। স্যার জগদীশচন্দ্র বসু অ্যাকাডেমিক ভবনের ২১৮ নম্বর কক্ষে ৯০ জন ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীর জন্য ওএমআর শিট পাঠানো হয়েছে ২৭টি। ফলে উত্তরপত্র বিতরণের সময় বিভ্রান্তির মধ্যে পড়েন কক্ষে থাকা পরিদর্শকরা। এছাড়াও অ্যাডমিট কার্ড সংক্রান্ত ঝামেলাতেও পড়তে হয় ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের।
এ বিষয়ে শহীদুল্লাহ্ ভবনে দায়িত্বে থাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্সটিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (আইবিএ) অধ্যাপক গোলাম আরিফ বলেন, শহীদুল্লাহ্ ভবনের ২০৪ নম্বর কক্ষে ভুলবশত ‘বি’ ইউনিটের ওএমআর শিটের পরিবর্তে ‘সি’ ইউনিটের ওএমআর সরবরাহ করা হয়েছিল। কিন্তু আমরা তা সঙ্গে সঙ্গেই সংশোধন করে সঠিক ওএমআর শিট সরবরাহ করেছি, ফলে পরীক্ষার্থীদের বড় কোনো অসুবিধা হয়নি।
এছাড়া ১৯ এপ্রিল ‘এ’ ইউনিটের দুই শিফটের পরীক্ষা শেষে রাবি কেন্দ্রের প্রশ্নপত্র বিশ্লেষণ করে ছয় জায়গায় ভুল ও অসঙ্গতি পাওয়া গেছে। তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলছে, ত্রুটিপূর্ণ প্রশ্নগুলোর ক্ষেত্রে সকল পরীক্ষার্থীকে পূর্ণ নম্বর দেয়া হবে।
ভর্তি পরীক্ষার ১ম শিফটে প্রশ্নপত্রের তিন (৩) নম্বর সেটের বাংলা অংশের ১৩, ১৬ ও ২৩ নম্বর প্রশ্নে ভুল পাওয়া গেছে। এছাড়া ২য় শিফটের পরীক্ষার প্রশ্নে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা 'ড. ইউনূসের' নামের বানানে ভুলসহ সাধারণ জ্ঞান অংশে একটি প্রশ্নের উত্তর অপশনেই পাওয়া যায়নি।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদের ডিন ও ‘এ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার প্রধান সমন্বয়ক অধ্যাপক মোহাম্মদ বেলাল হোসেন বলেন, প্রশ্নপত্রে কিছু ভুল আছে বলে শুনেছি। তবে এতে শিক্ষার্থীদের কোনো ক্ষতি হবে না। যেসব প্রশ্নে ভুল আছে সেগুলোর পূর্ণ নম্বর সুবিধা সব শিক্ষার্থী পাবেন। এটি মূলত প্রিন্টিংজনিত সমস্যার কারণে হয়েছে।
তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক শাহিদ ইকবাল জানান, প্রশ্নপত্রের বাংলা অংশে তিনটি প্রশ্নে ভুল রয়েছে। পাশাপাশি অমোঘ-মহাপ্রাণ বলে কোনো শব্দ বাংলা ব্যাকরণে পাওয়া যায় না।
এদিন রাবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও মার্কেটিং বিভাগের অধ্যাপক ওমর ফারুক সরকারের বিরুদ্ধে ভর্তি পরীক্ষার কেন্দ্রে এক ভর্তিচ্ছু নারী শিক্ষার্থীর সঙ্গে অসদাচরণের অভিযোগ উঠেছে। তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন অভিযুক্ত ওই শিক্ষক। এদিন প্রথম শিফটের ভর্তি পরীক্ষা শেষে প্রক্টর বরাবর অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ জমা দেন ভুক্তভোগী নারী শিক্ষার্থী।
লিখিত অভিযোগপত্রে তিনি উল্লেখ করেছেন, পরীক্ষায় তিনি অকথ্য ভাষা ব্যবহার করেন। আমাকে ‘চোর’ বলে সম্বোধন করেন এবং বলেন ‘একে সাইজ করা দরকার’। এক পর্যায়ে তিনি আমার খাতা কেড়ে নেন এবং প্রায় ১০ মিনিট পরে ফেরত দেন।
অভিযুক্ত শিক্ষক ওমর ফারুক বলেন, পরীক্ষা হলে এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি। আমি এরকম কোনো কথা বলিনি। এ অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।
ইতোমধ্যে ঘটনা তদন্তে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) কে প্রধান করে একটি কমিটি গঠন করেছে বলে জানা গেছে।
এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ্ হাসান নকীব জানান, অভিযোগটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তাকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। ঘটনা তদন্তে সত্য প্রমাণিত হলে অবশ্যই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এছাড়া শনিবার (২৬ এপ্রিল) ‘সি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় পাঁচটি প্রশ্নে ভুল পাওয়া গেছে। এদিন বেলা ১১টায় ১ম শিফটের ১নং সেট প্রশ্নপত্র বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে—সাধারণ অংশে ৩৭ নম্বর, গণিত অংশে ৭৭ নম্বর এবং ঐচ্ছিক অংশে ৬০ নম্বর প্রশ্নে ভুল ও অসঙ্গতি পাওয়া গেছে। কোথাও সঠিক উত্তর ছিল না, আবার কোথাও সব অপশনই সঠিক ছিল।
এছাড়া ২য় শিফটের ১নং সেট প্রশ্নপত্রে গণিত অংশে ৭৪ নম্বর প্রশ্ন এবং ঐচ্ছিক অংশে ৭৬ নম্বর প্রশ্নে ভুল পাওয়া গেছে যেখানে অপশনে কোনো সঠিক উত্তর ছিল না।
এ বিষয়ে জীববিজ্ঞান অনুষদের ডিন ও ‘সি’ ইউনিট পরীক্ষার নিয়ন্ত্রক ড. গোলাম মর্তুজা জানান, আমার জানা মতে ৩৭ নম্বর প্রশ্নে সঠিক উত্তর রয়েছে। তবে অন্যগুলো গণিত ও উদ্ভিদবিদ্যা (বোটানি) বিভাগের তৈরি প্রশ্ন। এ বিষয়ে আমি মন্তব্য করতে পারবো না।
সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মোহাম্মদ মাঈন উদ্দীন বলেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী, প্রশ্নপত্রে কোনো ভুল বা অসঙ্গতি দেখা দিলে সবাইকে মার্কিং করে দেয়া হয়। আমরাও সে নিয়ম অনুসরণ করছি। তবে এবার প্রথমবারের মতো বিভাগীয় পর্যায়ে পরীক্ষা নেয়া একটি বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। কিছু ভুলভ্রান্তি হয়েছে সত্যি, তবে ভবিষ্যতে এ অভিজ্ঞতা মাথায় রেখেই আরও সুসংগঠিত ও সুষ্ঠুভাবে পরীক্ষা নেয়ার চেষ্টা করব।
শিক্ষকের বিরুদ্ধে ওঠা অসদাচরণের অভিযোগ প্রসঙ্গে উপ-উপাচার্য বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আমাকে প্রধান করে ইতোমধ্যে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। আমরা আগামীকাল (রোববার) থেকেই কাজ শুরু করবো। অভিযুক্ত শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর সঙ্গে আবারও কথা বলা হবে। আশা করছি একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত সম্ভব হবে।
আপন দেশ/জেডআই
মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।