ছবি: আপন দেশ
ঢাকা: শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণের একদফা দাবিতে শিক্ষকদের চলমান আন্দোলন তৃতীয় সপ্তাহে গড়িয়েছে। সর্বশেষ তারা আমরণ অনশনের ঘোষণা দিয়েছেন। আগামীকাল মঙ্গলবার (১ আগস্ট) তারা এই কর্মসূচিতে যাবেন; যদি এর মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে তারা দাবি আদায়ের ঘোষণা না পান।
রোববার (৩০ জুলাই) জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে লাগাতার অবস্থানরত শিক্ষকরা এই ঘোষণা দেন। গত ১১ জুলাই থেকে শিক্ষকরা এই আন্দোলন করছেন।
এদিকে সোমবার (৩১ জুলাই) টানা ২১ দিনের মতো জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেছেন শিক্ষকরা। প্রতিদিনের মতো আজ সকাল ৯টায় জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মাধ্যমে কর্মসূচি শুরু হয়।
সরেজমিনে দেখা গেছে, সোমবার সকাল থেকেই প্রেসক্লাবের সামনে শিক্ষকদের ব্যাপক আনাগোনা চোখে পড়ে। বেলা গড়াতেই পল্টন মোড় থেকে কদম ফোয়ারা পর্যন্ত রাস্তার একপাশে যান চলাচল পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। বিভিন্ন জেলার ব্যানারে দলে দলে স্লোগান দিয়ে কর্মসূচিতে যোগ দিচ্ছেন শিক্ষকরা। অন্যদিনের তুলনায় আজ শিক্ষিকাদের সংখ্যাও তুলনামূলক বেশি।
কুষ্টিয়ার কুমারখালী থেকে আসা শিক্ষক বদরুল আলম বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী আজ যদি আমাদের সাক্ষাতের জন্য না ডাকেন, আগামীকাল থেকে আমরা কাফনের কাপড় পরে প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থান নেব। হয় দাবি আদায় করে ফিরব, না হয় কাফনের কাপড়েই আমাদের মরদেহ ফিরবে।’
বগুড়ার শেরপুর থেকে আসা আলপনা বানু বলেন, আমাদের সঙ্গে যে বৈষম্য করা হচ্ছে, তা নিরসনের দাবি জানাচ্ছি। এই যে আমরা এখানে বসে আছি, দেশে কি কোনো সরকার নেই? শিক্ষকদের এই কষ্ট কেউ কি দেখছে না, কারও কি চোখে পড়ছে না? সাড়ে ১২ হাজার টাকা বেতনে আমরা কীভাবে চলব? আমরা চাই, জাতীয়করণের মাধ্যমে দ্রুত আমাদের এ বেতন বৈষম্য দূর করা হোক।
>>> আরও পড়ুন: জাবির কর্মচারীরা চাকরি স্থায়ীকরণের দাবিতে আমরণ অনশনে
বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির (বিটিএ) সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ শেখ মো. কাওছার আহমেদ আমরণ অনশনের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, শিক্ষা ক্ষেত্রে বিরাজমান সরকারি ও বেসরকারি বৈষম্য দূরীকরণ এবং ধনি-দরিদ্র নির্বিশেষে সবার জন্য শিক্ষার সমান সুযোগ নিশ্চিত করতে মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণ করতে হবে। এই আন্দোলন করতে গিয়ে ইতোমধ্যে দুদফা পুলিশি কঠোরতার মুখে পড়েছেন শিক্ষকরা। বিশেষ করে আন্দোলনের সপ্তম দিনে পুলিশ মৃদ্যু লাঠিচার্জ করে। ওইদিন শতাধিক আহত হন। এতে আহত একজন মারা গেছেন।
তিনি আরও বলেন, শিক্ষামন্ত্রী স্বঘোষিত ও সদ্য গজিয়ে ওঠা কিছু সংগঠনের শিক্ষক নেতাসহ একটি বৈঠক করেছেন। তাদের বেশিরভাগ সরকারি আশীর্বাদপুষ্ট। বৈঠকে আন্দোলনরত শিক্ষক-কর্মচারীদের নিয়ে বাজে মন্তব্য করে পরিবেশ ঘোলাটে করার চেষ্টা করেছেন তারা। এছাড়া বৈঠকের আগে ও পরে শিক্ষামন্ত্রীও শিক্ষকদের কটাক্ষ করে বক্তব্য দিয়েছেন। গ্রীষ্মের ছুটি বাতিল করেও পরিবেশ ঘোলাটে করার চেষ্টা করেছেন তিনি। কিন্তু শিক্ষকরা এখন পয়েন্ট অব নো রিটার্নে চলে গেছেন। মর্মাহত শিক্ষকরা শিক্ষামন্ত্রীর নির্দেশনা অমান্য করে আন্দোলনে আছেন। দিন দিন অংশগ্রহণ বাড়ছে। এখন তারা আজ সোমবার পর্যন্ত অপেক্ষা করবেন। এর মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্ত না পেলে আগামীকাল আমরণ অনশনে যাবেন।
বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির (বিটিএ) সভাপতি অধ্যক্ষ বজলুর রহমান মিয়া বলেন, ‘আমরা আশা করছি, প্রধানমন্ত্রীর তরফ থেকে আজকেই আমরা কোনো সুখবর পাব। তারপরও যদি প্রধানমন্ত্রী যদি আমাদের না ডাকেন, কাল থেকে শিক্ষকরা আমরণ অনশন করবে।’
আপন দেশ/আরএ/এমএমজেড
মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।