লাল গোল চিহ্নিত সুদীপ্ত কুমার দাস, ফাইল ছবি
বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির নেতৃত্বে দীর্ঘদিন ধরেই ইন্ডাস্ট্রিতে ছড়ি ঘোরাচ্ছেন মৎস্য ব্যবসায়ী সুদীপ্ত কুমার দাস। সিনেমা হলের মালিক না হয়েও সংগঠনটির উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করছেন দীর্ঘদিন। সুদীপ্ত সমিতির সাবেক সভাপতি সাইফুল ইসলাম চৌধুরীর দায়ের করা চেক জালিয়াতি মামলার জেলফেরৎ আসামী।
জানা গেছে, কোনো প্রকার নির্বাচনী তফসিল না ঘোষণা করেই সিলেকশনে পূর্বের কমিটির অধিকাংশই বহাল রয়েছেন বর্তমান কমিটিতে। এতে ঠাঁই হয়েছে প্রস্তাবিত সিনেমা হলের অন্তত তিন সদস্যের। পাশাপাশি ২২ আসনের সিরাজগঞ্জ রুটস সিনেক্লাবের কর্ণধার সামিনা ইসলাম নীলারও! তিনি স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন জয়দেবপুর ঝুমুর সিনেমা হলের মালিক শরফুদ্দিন এলাহী সম্রাটের। তাকে সাংগঠিক সম্পাদক হিসেবে পদে রাখা হয়েছে। আর পুরো বিষয়টির প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে সুদীপ্ত কুমার দাসের কূটচালে। যার প্রতিবাদ করায় বাদ পড়েছেন মধুবন সিনেপ্লেক্সের কর্ণধার রোকনুজ্জামান ইউনূস রুবেল।
গত সোমবার নিজের ওয়ালে এমন একটি ছবি পোস্ট দিয়েছেন নবনির্বাচিত সামিনা ইসলাম নীলা। সেখানে তিনি নিজেকে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হিসেবে পরিচয় দিলেও কমিটির অন্যরা তা জানেন না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঢাকার এক প্রভাবশালী হল মালিক বলেন, সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক মন্ত্রণালয়ের বৈঠকগুলোতে থাকতে পারেন না; যার কারণে সুদীপ্ত কুমার দাস তার অনুগত আওয়ামী মনা সামিনা ইসলাম নীলাকে সিলেক্ট করেছেন।
কান পাতলে শোনা যায় সমিতির কমিটিতে যারাই থাকুন সকলকেই উপদেষ্টা সুদীপ্ত কুমার দাসের অনুগত থাকতে হবে, অন্যথায় হল মালিক হলেও তাকে সমিতির কার্যক্রম থেকে দূরে রাখেন এই সুদীপ্ত। আর এর নেপথ্যে এই মৎস্য ব্যবসায়ী তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের নাম ব্যবহার করেন বিভিন্ন জায়গায়।
এ ব্যাপারে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সমিতির একাধিক সদস্য বলেন, পুরো সমিতিকে নিয়ন্ত্রণ করছেন সুদীপ্ত কুমার দাস। তিনি প্রকাশ্যেই বলে বেড়ান তার সঙ্গে দ্বন্দ্বে এরআগে সাইফুল ইসলাম চৌধুরীকে সরিয়ে মধুমিতার মালিক ইফতেখার উদ্দিন নওশাদকে এনেছিলেন। নওশাদ তাকে তার চাহিদামতো টাকা সরবরাহ না করায় তিনি সুদীপ্তর আস্থা হারান। তাকে সরিয়ে চন্দ্রিমা সিনেমা হলের মালিক কাজী শোয়েব রশীদকে সভাপতি করা হয়েছে। কিছুদিন আগে তার সঙ্গে দ্বন্দ্বে তিনি শোয়েবকে সরিয়ে দিতে চেয়েছিলেন। সেটি না পেরে তার অনুগত এবং মাসোহারা দিতে পারবেন এমন অন্তত ছয়জনকে বর্তমান কমিটিতে সিলেকশনে এনেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক অধিকাংশ সময় চলচ্চিত্রের উন্নয়নে মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে উপস্থিত থাকেন না। এর ফলে সচিবালয়ে লবিংয়ে সময় কাটানো সুদীপ্ত হয়ে ওঠেন সমিতির একচ্ছত্র ক্ষমতাধর। সমিতির পক্ষ থেকে মন্ত্রণালয়ের আমদানি-রফতানি কমিটির সদস্য, চলচ্চিত্র পরিবারের বৈঠকগুলোতে তিনি একমাত্র আমন্ত্রিত। এতে গঠনতন্ত্র যেমন বাধাগ্রস্ত হয়েছে তেমনি অসহায় হয়ে পড়েছেন প্রকৃত হল মালিকরা। অনিয়মের বিরুদ্ধে উচ্চবাচ্য করলে ভারতীয় সিনেমা বন্ধ করার হুমকি দেন এই উপদেষ্টা ফলে সাধারণ হল মালিকরা তাকে সহ্য করতে বাধ্য হন। অভিযোগ রয়েছে ভারতীয় সিনেমা আমদানিতে ছবি প্রতি মোটা অংকের ভাগও নেন এই উপদেষ্টা।
এদিকে প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত এক হাজার কোটি টাকা ঋণ প্রণোদনা বিতরণ শুরু না হলেও অর্ধশতাধিক ফাইল থেকে কোটি টাকার আয়ের খবরও ভাসছে বাতাসে।
এ ব্যাপারে সিনেপ্লেক্স করতে ইচ্ছুক একাধিক উদ্যোক্তার দাবি এক বছর আগে ফাইল প্রতি তারা সুদীপ্ত কুমার দাসকে আড়াই লাখ টাকা করে দিয়েছেন কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। ব্যাংকের টাকা পাওয়ার আশাও ছেড়ে দিয়েছেন তারা।
বিয়ষগুলো নিয়ে জানতে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির আওলাদ হোসেন উজ্জলের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার ঘনিষ্ট সূত্র জানিয়েছে রাজনৈতিক পরিস্থিতি উত্তপ্ত থাকায় তিনি মুঠোফোন বন্ধ রেখেছেন।
আপন দেশ/এমআর
মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।