ছবি: সংগৃহীত
একটা সময় নাটক ছিল পারিবারিক বিনোদনের অন্যতম মাধ্যম। যাকে বলা হতো ড্রয়িং রুম বা পারিবারিক মিডিয়া। অধীর আগ্রহ নিয়ে ধারাবাহিক কিংবা প্যাকেজ যেকোনো নাটকই পরিবারের সবাই মিলে একসঙ্গে উপভোগ করত। গল্প, অভিনয়, শৈল্পিক উপস্থাপনার মধ্য দিয়ে বিনোদনের পাশাপাশি সেসব নাটকে ছিল সামাজিক বার্তা।
ছিল না কোনো ভাঁড়ামি, কমেডি গল্পের উপস্থাপনায়ও ছিল শৈল্পিক মানদণ্ড। কিন্তু অস্থির অবস্থা বিরাজ করছে বর্তমান নাটকে। এ সময়ের নাটকের অবস্থান আসলে কেমন, কোন দিকে যাচ্ছে আমাদের নাটকের ভবিষ্যত! হাস্যরস আর ভিউ বাণিজ্যে কি হারাচ্ছে নাটকের শিল্পমান।
হাস্যরস নয়, বরং নাটকের এ দশার ক্ষেত্রে বাণিজ্যের বড় ভূমিকা আছে বলে মনে করেন অভিনেতা ও নির্মাতা সালাহউদ্দিন লাভলু।
বাংলা টিভি নাটকের বর্তমান অবস্থা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, নাটকে হাস্যরস গল্পের মধ্যে কাহিনীর প্রয়োজনে করা হয়ে থাকে। এ হাস্যরস পূর্বেও ছিল। তবে এখন গ্রামের মানুষ, মফস্বলের মানুষ কিংবা যারা ইউটিউবের দর্শক, তাদের রুচি ও ভিউর কথা চিন্তা করে হাস্যরসাত্মক নাটক নির্মাণ করা হয়। এর মূলে আছে ব্যবসার চিন্তা।
সালাহউদ্দিন লাভলু বলেন, যখন থেকে নাটক প্রোডাক্ট হয়ে গেছে, ঠিক তখন থেকেই বাংলা নাটক তার শিল্পমান হারিয়ে গেছে। ১ ঘণ্টার একটা টেলিভিশনের নাটকের বাজেট থাকে দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা। কিংবা সর্বোচ্চ ৩ লাখ টাকা। পক্ষান্তরে ভিউ নির্ভর শিল্পীদের নিয়ে ইউটিউবের জন্য নির্মিত একই নাটকের বাজেট হয় ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকা। অতএব নাটকগুলো ভিউ নির্ভর হওয়ার কারণে এখন শিল্পের হিসাবটা কম, বরং বাণিজ্যটাই আসল।
নাটক যে নিছক একটা পণ্য হয়ে গেছে, সে কথা বলেন বৃন্দাবন দাসও। তিনি বলেন, এখন শিল্প বলতে কিছুই নেই। টেলিভিশন বা অন্য মাধ্যম যা-ই বলি না কেন, এখন বাণিজ্যটাই মুখ্য হয়ে গেছে। শিল্প নিয়ে এখন আর কেউ ভাবে না, এটা বিশ্বাসও করে না। এখন বাংলা নাটক ভিউ আর বাণিজ্যনির্ভর হয়ে পড়েছে। এখন নাটককে নাটক হিসেবে বিশ্বাস করে না, নাটক এখন প্রোডাক্ট হয়ে গেছে। নাটকে এখন কোনো শিল্পবোধ, নীতি, নৈতিকতা নেই।
কিন্তু কেন এমন হলো। সে প্রসঙ্গে বৃন্দাবন দাসের বক্তব্য, বর্তমান ডিজিটাল যুগ, মানুষের ভাবনার পরিবর্তন হয়েছে, মানুষের চিন্তা, চেতনা, বিশ্বাস, মূল্যবোধের পরিবর্তন হয়েছে। এর সঙ্গে সঙ্গে আমাদের নাটকেরও পরিবর্তন আসবে। তবে এ পরিবর্তন পজিটিভের দিকে যাচ্ছে নাকি নেগেটিভের দিকে যাচ্ছে এ মুহূর্তে এটা বিচারের সময় আসেনি। তবে এখন বাংলা নাটকের যে ঝড় বইছে এ ঝড় না কমলে আসলে বোঝা যাবে না যে নাটকের মোড় কোন দিকে যাচ্ছে। এখন পরিবর্তনের সময় চলছে, মানুষের ভাবনার পরিবর্তন হয়েছে, নতুন প্রজন্মের ভাবনার পরিবর্তন হয়েছে।
আরও পড়ুন>> ‘নিপুণের বিরুদ্ধে ৬৪ জেলায় মামলা হবে’
কিন্তু ভাবনার পরিবর্তনের সঙ্গে তা শিল্প-সাহিত্য ও নাটকেও প্রভাব ফেলছে। কোনো কোনো প্রভাব নেতিবাচক। অনেক নাটকেই এখন নারীবিদ্বেষী বক্তব্য, বডি শেমিং, অকারণ গালাগালি দেখা যায়। অভিনেতা আহসান হাবীব নাসিম মনে করেন প্রতিযোগিতার কারণে কিছু কুরুচিপূর্ণ কাজ হচ্ছে।
এ নিয়ে তিনি বলেন, কুরুচিপূর্ণ যেসব মানহীন নাটক তৈরি হচ্ছে সেগুলো যার যার চ্যানেল থেকে সে দিয়ে দিচ্ছে, এগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য সরকারি কোনো পদক্ষেপ আপাতত আমরা দেখছি না। এ কুরুচিপূর্ণ নাম ও মানহীন নাটক নিয়ন্ত্রণ করার জন্য একটা জাতীয়ভাবে মনিটরিং সেল গঠন করা দরকার। যেন ইচ্ছা করলেই তা প্রচার করতে না পারে।
তবে তিনি মনে করেন, নানা প্লাটফর্মের কারণে বাংলা নাটকের বাজার বিস্তৃত হয়েছে এবং দায়িত্ব নিয়ে কাজ করলে এখানে ভালো কাজ করা সম্ভব।
প্রযোজক মনোয়ার হোসেন পাঠান মনে করেন, হাস্যরস থাকা ক্ষতির নয়, কিন্তু কেবল ভিউকে গুরুত্ব দিতে গিয়ে নাটকের মান পড়তির দিকে।
তিনি বলেন, বর্তমানে গুণগত মান-সম্পন্ন নাটক যেমন তৈরি হচ্ছে, তেমনি কিছু মানহীন নাটকও তৈরি হচ্ছে। এগুলো দর্শকের ভিউর কথা চিন্তা করে নির্মাতারা তৈরি করে থাকেন। তবে নাটকের সঙ্গে যারা সম্পৃক্ত কলাকুশলী আছেন, তাদের উচিত বাংলা নাটকের ঐতিহ্যটা ধরে রাখা।
আরও পড়ুন>> লাস্যময়ী রূপে ধরা দিলেন দিশা পাটানি
এদিকে তরুণ নির্মাতা মাবরুর রশিদ বান্নাহর ভাবনা একটু আলাদা। তিনি মনে করেন, প্রতিদিন শিল্পকে ধরে রেখে কাজ মেনটেইন করা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। বান্নাহ বলেন, এটা সবার দ্বারা সম্ভব হয়ে ওঠে না। শতভাগ শিল্পের কথা চিন্তা করলে তো কমার্শিয়াল বিষয়টা আসত না। অতএব দুটোই থাকবে। সব ধরনের কাজই দরকার আছে।
তিনি মনে করেন, অনেক দর্শকই উদ্ভট নাম পছন্দ করে। তাদের কোনোভাবেই আটকানো সম্ভব নয়। তবে নির্মাতাদের পক্ষে কী করা সম্ভব? এ নিয়ে তিনি বলেন, তবে আমরা একটু সাবধান হতে পারি। যেন এমন কোনো নাম দিয়ে না বসি, যেখানে প্রচণ্ড পরিমাণ রুচির প্রশ্ন ওঠে।’
এর সঙ্গেই তিনি যুক্ত করেন, ‘কোনো কিছু খুব ভালো না হওয়াটাই ভালো। কারণ ভালোর মূল্য তখনই হয় যখন ভালোটা কম থাকে। ভালো কাজের সংখ্যা আগের থেকে বাড়ছে এবং ভালো কাজের কদরও বাড়ছে।
আপন দেশ/এসএমএ
মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।