ছবি: আপন দেশ
বৈষম্যবিরোধী ছাত্রআন্দোলন ও জুলাই গণঅভ্যুত্থান। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছাত্র-জনতা, শিল্পী, বুদ্ধিজীবীসহ নানা পেশাজীবীরা সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছিল।
৭১-এ মুক্তিযুদ্ধে যেমন বাংলাদেশের শিল্পীদের অসামান্য অংশগ্রহণ ছিল, মুক্তিযুদ্ধের সময়ে প্রচারিত পোস্টারগুলো যেমন আমাদের ইতিহাসের অসামান্য দলিল হয়ে আছে। তেমনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জুলাই অভ্যুত্থানে প্রচারিত বিভিন্ন শিল্পীর কার্টুন, পোস্টার ও ইতিহাসের অংশ হয়ে উঠেছে। সেসব শিল্পকর্ম নিয়েই শিল্পকলা অ্যাকাডেমিতে শুরু হলো শিল্পী দেবাশিস চক্রবর্তীর ‘পোস্টারে জুলাই অভ্যুত্থান’ শীর্ষক লাইভ ও এআর-ভি আর (অগমেন্টেড-ভারচুয়াল রিয়েলিটি) ইন্টারঅ্যাকটিভ প্রদর্শনী।
মঙ্গলবার (০৭ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় অ্যাকাডেমির জাতীয় চিত্রশালায় শুরু হয় এ প্রদর্শনী।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ শিল্পকলা অ্যাকাডেমির মহাপরিচালক ড. সৈয়দ জামিল আহমেদ। আরও উপস্থিত ছিলেন বরেণ্য আলোকচিত্রী, কিউরেটর ও এক্টিভিস্ট ড. শহিদুল আলম; লেখক, সাংবাদিক ও বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহাবুব মোর্শেদ এবং বাংলাদেশ শিল্পকলা অ্যাকাডেমির চারুকলা বিভাগের পরিচালক মোস্তফা জামান। আমস্টারডাম থেকে সরাসরি অনলাইনে যুক্ত হয়েছিলেন লেখক ও গবেষক পারভেজ আলম এবং যুক্তরাষ্ট্র থেকে সরাসরি অনলাইনে যুক্ত হয়েছিলেন শিল্পী দেবাশিস চক্রবর্তী। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন বাংলাদেশ শিল্পকলা অ্যাকাডেমির প্রযোজনা বিভাগের পরিচালক আব্দুল হালিম চঞ্চল।
ড.আসিফ নজরুল বলেন, বিভিন্ন বয়ান তৈরির কৌশল কত নোংরা হতে পারে তা আমরা গত ১৫ বছরে ফ্যাসিস্ট সরকারের ক্ষেত্রে দেখেছি। উন্নয়ন অগ্রগতি নিয়ে অনেক বয়ান তৈরী করা হয়েছে। একটা ছোট্ট পোস্টার নতুন বয়ান তৈরির ক্ষেত্রে অনেক বড় ভূমিকা পালন করতে পারে। ওই সময়ের আন্দোলনকে বেগবান করার ক্ষেত্রেও ভূমিকা রেখেছে পোস্টার।
জুলাই আন্দোলনের আর্ট গ্রাফিতি প্রসঙ্গে উপদেষ্টা বলেন, গ্রাফিতি যে একটা শক্তিশালী মাধ্যম হতে পারে তা আমরা গত ১৫ বছরের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে দেখি নাই। গ্রাফিতি হয়তো একটা সময় থাকবে না কিন্তু প্রকাশনা হলে সেটা থেকে যাবে। সে জায়গা থেকে বাংলাদেশ শিল্পকলা অ্যাকাডেমির উদ্যোগ ভালো লেগেছে।
সভাপতির বক্তব্যে বাংলাদেশ শিল্পকলা অ্যাকাডেমির মহাপরিচালক ড. সৈয়দ জামিল আহমেদ বলেন, শিল্পী দেবাশিস চক্রবর্তী ঈর্ষণীয়ভাবে দেখিয়ে দিয়েছেন যে, শিল্প কীভাবে সঠিকভাবে রাজনৈতিক হাতিয়ার হতে পারে। একইসঙ্গে শিল্পকর্ম হতে পারে। এ বিষয়ে কোনো দ্বিধা-দ্বন্দ্ব নেই। শিল্পের কাজটা কী সেটা পরিস্কারভাবে দেখিয়ে দিয়েছেন। বিপ্লব ও গণঅভ্যুত্থানের ভেতরে পরিস্কারভাবে শিল্পকর্ম নিয়ে দাঁড়াতে পারার জন্য শিল্পীকে অভিনন্দন।
মহাপরিচালক আরও বলেন, শিল্পীর নিকট থেকে অনেক কিছু শেখার আছে নতুন প্রজন্মের। নন্দনতত্ত্ব বলতে আমরা যেটা বুঝি-তা হলো সুন্দর কী? তাকে তছনছ করে দিয়ে ভেঙে ফেলে আপনি কেবল রং, রেখায় খুব পরিস্কারভাবে এবং স্পষ্ট ভাষায় উচ্চারণ করেছেন, যা মানুষের হৃদয় ছুঁয়ে গেছে। মানুষকে আলোড়িত করেছে এবং মানুষকে একেবারে আন্দোলনের মুখের দিকে এগিয়ে নিয়ে গেছে। পপুলার আর্টকে পপুলিস্ট না করে একেবারে পলিটিক্যাল আর্ট করেছেন। যে পলিটিক্যাল আর্ট একেবারে শিল্পকর্ম।
বাংলাদেশের শিল্প ও গণঅভ্যুত্থানের গুরুত্ব বিবেচনায় শিল্পী দেবাশিস চক্রবর্তীর জুলাই অভ্যুত্থানে করা শতাধিক পোস্টারের মধ্য থেকে বাছাইকৃত ২০টি পোস্টার স্থান পেয়েছে এ লাইভ ও এআর-ভিডিওর প্রদর্শনীতে। এসব শিল্পকর্ম যেমন শিল্পকলা অ্যাকাডেমির ভিআর গ্যালারীতে স্থায়ীভাবে সংরক্ষিত হবে তেমনি বিভিন্ন জেলায় প্রযোজনা বিভাগের তত্ত্বাবধানে ভিআর প্রদর্শনীর ব্যবস্থা থাকবে।
প্রতিদিন সকাল ১১টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত জাতীয় চিত্রশালা ভবনের ৫ নং গ্যালারিতে। ১৯ জানুয়ারি শেষ হবে ১৩ দিনের এ প্রদর্শনী।
আপন দেশ/এবি
মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।