
ছবি: আপন দেশ
বাংলা সাহিত্যকে বিশ্বের দরবারে তুলে ধরে বাঙালিকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে শিখিয়েছেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। সাম্য, মানবিকতা, অসাম্প্রদায়িক সমাজ গঠনে কবিগুরু নিরলস কাজ করেছেন। তার অনবদ্য সৃজনকর্মেও সেসব তুলে ধরেছেন বিশ্বকবি।
সুরের ধারায়, কবিতার দীপ্ত উচ্চারণ ও নৃত্যের ছন্দে সেসবই তুলে ধরেছেন শিল্পীরা। কবির সৃষ্টিকর্মের পরিবেশনায় রবীন্দ্রনাথকে মূর্ত করে তোলেন তারা।
এমন দৃশ্যকল্পই চিত্রিত ছিলো জাতীয় রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মিলন পরিষদ আয়োজিত তেতাল্লিশতম বার্ষিক অধিবেশনের তিনদিনব্যাপি সম্মেলনের উদ্বোধনী আনুষ্ঠানিকতায়।
‘এই কথাটা ধরে রাখিস মুক্তি তোরে পেতেই হবে’ বোধনসঙ্গীতটির মধ্য দিয়ে বৃহস্পতিবার (২৩ জানুয়ারি) বিকেলে ধানমন্ডির ছায়ানট মিলনায়তনে এবারের সম্মেলনের উদ্বোধন করেন রবীন্দ্রসঙ্গীত গুনী ফাহমিদা খাতুন।
এতে স্বাগত বক্তৃতা করেন জাতীয় রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মিলন পরিষদের সম্পাদক তানিয়া মান্নান। অতিথিদেরকে ফুলের শুভেচ্ছা প্রদানের পাশাপাশি উত্তরীয় পরিয়ে দেন উদ্বোধনী অধিবেশনের সভাপতি ডা. সারওয়ার আলী।
উদ্বোধনকালে ফাহমিদা খাতুন বলেন, এ সম্মেলনের মাধ্যমে আমরা নিজেদের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক পরিচয় খুঁজে নেবো। এ সম্মেলনের মাধ্যমে আমরা একে অপরকে আরো ভালো ভাবে জানতে ও চিনতে পারবো। অভিজ্ঞতা বিনিময়ের মধ্য দিয়ে আমরা আরো বেশি অভিজ্ঞ হবো। আমি ই সম্মেলনের সফলতা কামনা করছি।
ডা. সারওয়ার আলী বলেন, রবীন্দ্রনাথের গান পরিবেশন ও চর্চায় যখন বাধা দেয়া হতো তখন পুরুষদের মধ্যে জাহিদুর রহিম, নারীদের মধ্যে ফাহমিদা খাতুন সকল ভয় ও শংকা উপেক্ষা করে এগিয়ে আসেন। সমগ্র বাঙালির কাছে আমরা রবীন্দ্রসঙ্গীতকে পৌঁছে দিতে চাই।
তিনি আরও বলেন, ক্ষুদ্র ঋণ ও শিক্ষার প্রসারের পাশাপাশি এ অঞ্চলের শিলাইদহে বসে রবীন্দ্রনাথ বাংলাদেশের জাতীয়সঙ্গীত রচনা করেন। এ অঞ্চলের মানুষদের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ও শিক্ষার উন্নয়নে রবীন্দ্রনাথের ব্যাপক ভূমিকা ছিলো। আবহমান বাংলার সংস্কৃতিকে ধারণ করার জন্য একটি সম্প্রীতি ও মানবিক সমাজের স্বপ্ন দেখেছিলেন রবীন্দ্রনাথ। যখন কেউ রবীন্দ্রনাথ, লালন ও জয়নূলের ভাস্কর্য ভেঙ্গে ফেলে তখন বুকের ভেতর রক্তক্ষরণ হয়।
আলোচনা পর্ব শেষে সাংস্কৃতিক পর্বের শুরুতেই শিল্পীরা পরিবেশন কওে গীতিআলেখ্য ‘ফিরে চল মাটির টানে’। এরপর রবীন্দ্র রচনাবলী থেকে পাঠ করেন - ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায় ও ত্রপা মজুমদার। দলীয় নৃত্য পরিবেশন করে নাচের দল নৃত্যনন্দন, নৃত্যম নৃত্যশীলন ও ধৃতি নর্তনালয়। একক নৃত্য পরিবেশন করেন- মুনমুন আহমেদ, আবৃত্তি করেন- ডালিয়া আহমেদ।
আরও পড়ুন<<>> স্বেচ্ছায় শর্ত ভাঙলেন তামান্না ভাটিয়া
একক সঙ্গীত পর্বে সঙ্গীত পরিবেশন করেন ফারজানা আক্তার পপি, সেমন্তী মঞ্জরী, রোকাইয়া হাসিনা, অশোক সাহা, নুরুল মতিন সৈকত, আকলিমা খাতুন, শুক্লা পাল সেতু, ফেরদৌস আরা লিপি, মিলন ভট্টাচার্য, সুস্মিতা আহমেদ, প্রতীক এন্দ, পার্থ প্রতীম রায়, কল্লোল সেনগুপ্ত, নাইমা ইসলাম নাজ, মাইনুল ইসলাম, অনুপম বসাক তিলক, জীবিনা সঞ্চিতা হক, সমাপ্তি রায়, অদিতি মহসীন, আইরিন পারভীন অন্না, অসীম দত্ত ও শ্রাবণী মজুমদার।
দলীয়সঙ্গীত পরিবেশন করে আয়োজক সংস্থা জাতীয় রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মিলন পরিষদের চাঁদপুর শাখার শিল্পীরা।
আগামীকাল শুক্রবার (২৪ জানুয়ারি) দ্বিতীয় দিনের আয়োজনের প্রথম অধিবেশন শুরু হবে সকাল সাড়ে ৯টায়। এ পর্বে থাকছে সঙ্গীত, নৃত্যানুষ্ঠান ও আবৃত্তি। এরপর বিকেল ৩টায় অনুষ্ঠিত হবে প্রতিনিধি সম্মেলন। সারাদেশ থেকে আগত শিল্পীরা অংশ নেবে এ সম্মেলনে।
বিকেল ৪টায় অনুষ্ঠিত হবে ‘বাংলাদেশে রবীন্দ্রনাথ ও রবীন্দ্রনাথের বাংলাদেশ’ শীর্ষক সেমিনার। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন অধ্যাপক ফকরুল আলম। আলোচক থাকবেন আলম খোরশেদ ও হামীম কামরুল হক। সভাপতিত্ব করবেন জাতীয় রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মিলন পরিষদের সহ-সভাপতি মফিদুল হক। সন্ধ্যা সাড়ে ৫টায় শুরু হবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। প্রদীপ প্রজ্জ্বলন, রবিরশ্নি, সঙ্গীতানুষ্ঠান, নৃত্যানুষ্ঠান ও আবৃত্তি দিয়ে সাজানো থাকবে দ্বিতীয় দিনের সাংস্কৃতিক পর্ব।
শনিবার (২৫ জানুয়ারি) শেষ হবে তিনদিনের এ আয়োজন। সমাপনী আসরের বিকেল সাড়ে তিনটায় থাকছে শ্যামলিস্থ এসওএস শিশুপল্লীতে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
আপন দেশ/এবি
মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।