
সংগৃহীত ছবি
বিতর্কিত অতিথিদের আমন্ত্রণ জানানোকে কেন্দ্র করে তীব্র প্রতিবাদের মুখে স্থগিত করা হয়েছে শিল্পকলা একাডেমিতে আয়োজিত জাতীয় চলচ্চিত্র দিবসের অনুষ্ঠান। সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হলেও শেষ মুহূর্তে অনুষ্ঠানটি স্থগিত করে একাডেমি কর্তৃপক্ষ।
বুধবার (২৩ এপ্রিল) দুপুরে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় একাডেমির জাতীয় নাট্যশালায় এ অনুষ্ঠান হওয়ার কথা ছিল।
মূল কারণ—বিতর্কিত দুই অতিথি। প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশনের (এফডিসি) ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসুমা তানি। তার বিরুদ্ধে ফ্যাসিবাদের দোসর হিসেবে অভিযুক্ত। অপরদিকে প্রধান আলোচক ছিলেন সুজাতা আজিম। তিনি বিটিভিতে ছাত্র আন্দোলনের বিরুদ্ধে বক্তব্য দিয়ে দেন। আন্দোলনের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে বিটিভিতে গিয়ে মায়াকান্না করে উস্কানিমূলক বক্তব্য দেন সুজাতা আজিম।
এ দুই বিতর্কিত ব্যক্তির অংশগ্রহণ জানাজানি হতেই সংস্কৃতি অঙ্গনের একাধিক সংগঠন ও ব্যক্তিবর্গ প্রতিবাদ জানান। সামাজিক মাধ্যমে ও সংবাদমাধ্যমে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। একাডেমির সামনে অবস্থান কর্মসূচি ও প্রতিবাদ সমাবেশে করা হয়। এতে অনুষ্ঠানটি স্থগিত করতে বাধ্য হয় শিল্পকলা একাডেমি।
একাডেমির সচিব ও ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক ওয়ারেছ হোসেন বলেন, আমাদের দৃষ্টিগোচরে এসেছে যে আমন্ত্রিত মাসুমা তানি ও সুজাতা আজিম ফ্যাসিবাদের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তাই অনুষ্ঠান স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। ভবিষ্যতে নিরপেক্ষ ব্যক্তিদের নিয়ে আমরা নতুন আয়োজন করব।
তবে, প্রশ্ন উঠছে — যে দিবসটি স্বৈরাচার আমলে সরকারিভাবে ঘোষণা করা হয়েছিল, সেটি এখনও কেন উদযাপিত হচ্ছে? প্রশ্নের জবাবে ওয়ারেছ হোসেন এ প্রসঙ্গে বলেন, জাতীয় দিবস উদযাপন সংক্রান্ত সরকারি নির্দেশনা অনুসারে আমরা দিবস পালন করে থাকি। যেহেতু সরকার এখনো ৩ এপ্রিলকে জাতীয় চলচ্চিত্র দিবস হিসেবে বাতিল করেনি, তাই আমাদের আয়োজন করতে হয়।
অন্যদিকে, চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট অনেকেই বলছেন, চলচ্চিত্রের জন্য আলাদা মন্ত্রণালয় ও এফডিসি থাকার পরও সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় ও শিল্পকলা একাডেমির এ বিষয়ে অতি-সক্রিয়তা গ্রহণযোগ্য নয়। সাংবাদিক আহমেদ তেপান্তর বলেন, চলচ্চিত্রের জন্য তথ্য মন্ত্রণালয় ও এফডিসি আছে। এর পরেও সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকা শিল্পকলা একাডেমির এ বাড়াবাড়ি মেনে নেয়া যায় না।
উল্লেখ্য, ১৯৫৭ সালের ৩ এপ্রিল তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদে প্রয়াত শেখ মুজিবুর রহমান এফডিসি প্রতিষ্ঠার বিল পেশ করেন। পরবর্তীতে ২০১২ সালে আওয়ামী লীগ সরকার তাঁর স্মরণে ৩ এপ্রিলকে জাতীয় চলচ্চিত্র দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। কিন্তু অনেকের মতে, এ দিনটিকে চলচ্চিত্র দিবস হিসেবে নির্বাচন করার কোনও সাংস্কৃতিক বা ঐতিহাসিক ভিত্তি নেই।
সিনেমা অঙ্গনের অনেকে বরং হীরালাল সেনের জন্ম (২ আগস্ট) বা প্রয়াণ দিবস (২৬ অক্টোবর), অথবা “মুখ ও মুখোশ” মুক্তির দিন (৩ আগস্ট)—এর যেকোনো একটি দিনকে জাতীয় চলচ্চিত্র দিবস ঘোষণার দাবি জানাচ্ছেন।
চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, ফ্যাসিবাদমুক্ত একটি পরিবেশে শিল্পচর্চা নিশ্চিত করতে হলে এ ধরনের দিবসগুলোর ঘোষণাও হতে হবে মুক্তচিন্তা ও ঐতিহাসিক সচেতনতায় পূর্ণ। তারা অন্তর্বর্তী সরকারের কাছ থেকে একটি সময়োপযোগী ও গ্রহণযোগ্য সিদ্ধান্তের আশায় রয়েছেন।
আপন দেশ/এমবি
মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।