Apan Desh | আপন দেশ

এফডিসির রেজাউলের অপসারণ দাবিতে মাঠে অধীনস্তরা 

বিনোদন ডেস্ক

প্রকাশিত: ২২:১৪, ২৩ এপ্রিল ২০২৫

আপডেট: ২২:২৫, ২৩ এপ্রিল ২০২৫

এফডিসির রেজাউলের অপসারণ দাবিতে মাঠে অধীনস্তরা 

রেজাউল হকের অপসারণ দাবিতে এফডিসির কর্মকর্তা-কর্মচারিদের বিক্ষোভ (ইনসেটে রেজাউল হক)

গত বছরের ৫ আগস্ট ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন হলেও সরকারের বিভিন্ন দফতরে এখনও তার অনুসারীরা বহাল তবিয়তে রয়েছে। তাদের মধ্যে একজন বিএফডিসির অতিরিক্ত পরিচালক (অর্থ) রেজাউল হক। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিভিন্ন দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন এ কর্মকর্তা। প্রয়াত শেখ মুজিবের নামে বায়োপিক নির্মাণের সময় কয়েক কোটি টাকা আত্মসাৎ করেন বলেও রেজাউলের নামে অভিযোগ রয়েছে। এদিকে, রেজাউল হকের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ এনেছেন তার অধীনস্ত কর্মকর্তা-কর্মচারিরা। দুর্নীতিবাজ এ কর্মকর্তার অপসারণের দাবিতে সোচ্চার বিএফডিসির সর্বস্তরের কর্মকর্তা ও কর্মচারিরা।

ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের চিহ্নিত করার জন্য বিএফডিসির আয়োজনে সর্বস্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারিদের অংশগ্রহণে গণশুনানি অনুষ্ঠিত হয়। এতে রেজাউল হককে ফ্যাসিস্টের দোসর আখ্যায়িত দিয়ে তাকে অপসারণ ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানায় বিএফডিসির সর্বস্তরের কর্মকর্তা, কলাকুশলী ও কর্মচারিরা।

গত বছরের ১৫ ডিসেম্বর বিগত ফ্যাসিবাদী সরকারের আমলে জনস্বার্থবিরোধী কার্যক্রম বিষয়ে করণীয় নিরুপনের জন্য গঠিত কমিটিতে ৩১ জনের সাক্ষ্য নেয়া হয়। এতে অধিকাংশ কর্মচারি ও কর্মকর্তা রেজাউল হকের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনেন। তিন সদস্য বিশিষ্ট ওই কমিটিতে মো. হারুন অর রশিদকে আহবায়ক করা হয়। পরে সেটা মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়া হলেও অভিযোগ আছে, বর্তমান এমডির আস্থা নিয়ে বহাল তবিয়তে আছেন রেজাউল হক।

এছাড়া গত ৯ এপ্রিল বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছে বিএফডিসির সর্বস্তরের কর্মকর্তা, কলাকুশলী ও কর্মচারিরা। ফ্যাসিবাদের দোসর রেজাউলের অপসারণসহ তার সকল দুর্নীতির শাস্তি কার্যকরে কালক্ষেপণ হওয়াতে কলাকুশলীদের মাঝে উত্তেজনা বিরাজ করছে। এফডিসিকে শান্ত করার জন্য ফ্যাসিস্ট রেজাউল হককে অবিলম্বে অপসারণ করে একটি স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনার জন্য কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছেন কর্মচারি ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক জি এম সাইদ।

বিক্ষুব্ধ কর্মকর্তা ও কর্মচারিরা জানায়, বর্তমান এমডি মাসুমা তানি যোগ দেয়ার পরও রেজাউলের অপসারণসহ বিভিন্ন দুর্নীতির বিরুদ্ধে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি। বর্তমান এমডি নিজেই ফ্যাসিবাদের দালাল হওয়াতে আরেক দোসর রেজাউল হকের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি বলেও জানান ক্ষুব্ধ কর্মকর্তা-কর্মচারিরা।

আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ১৯৯৭ সালে তৎকালীন তথ্যমন্ত্রী অধ্যাপক আবু সাঈদ সরকারি নিয়মকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে নিয়ম বহির্ভূতভাবে ওই সময়কার ৩১ বছর ২ মাস বয়সী রেজাউলকে নিয়োগ দেন। যা ছিলো- সরকারি চাকরি বিধিমালার লঙ্ঘন। পরবর্তীতে আওয়ামী লীগের সাবেক আরেক মন্ত্রী প্রয়াত আব্দুস সামাদ আজাদ সংসদ ভবনে ডেপুটেশনে নিয়োগ দেন আওয়ামী দোসর হিসেবে পরিচিত বিতর্কিত এ কর্মকর্তাকে।

আরওপড়ুন<<>>অভিনেত্রী শাওনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা

এরপর, ২০০১ সালে বিএনপি সরকার ক্ষমতায় আসার পর দুজন এমপির অধীনে সংসদে কাজ করেন রেজাউল হক। কিন্তু পরবর্তীতে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থেকে নানা অপকর্মের বিষয়ে জানার পর ২০০৪ সালে তাকে ফের এফডিসিতে ফেরত পাঠানো হয়। ২০০৮ সালে ওয়ান ইলেভেনের সরকারের সময় এফডিসিতে টাস্কফোর্সের একটি কমিটি  গঠন করা হয়। ওই কমিটিতে স্থান পেয়ে স্বৈরাচারের দোসর রেজাউল বিএনপিমনা পরিচালক ও প্রযোজকদের হয়রানিসহ কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেন বলেও তার বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ রয়েছে।

এফডিসির একাধিক সূত্র জানায়, ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ সরকার পুনরায় ক্ষমতায় আসার পর নিয়মের ব্যত্যয় ঘটিয়ে দুটি প্রমোশনসহ বিভিন্ন ধরনের অনিয়ম, দুর্নীতি ও নানা রকমের অপকর্মের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন রেজাউল হক। এর মধ্যে পরিচালক (সংগ্রহ) থাকার সময় নেগেটিভ ক্রয় দুর্নীতিসহ অনেক ক্রয় দুর্নীতির মাধ্যমে সরকারি অর্থ আত্মসাৎ করেন। আর অতিরিক্ত পরিচালক (অর্থ) এর দায়িত্বে থাকাকালীন প্রয়াত শেখ মুজিবের নামে বায়োপিক নির্মাণের সময় কয়েক কোটি টাকা আত্মসাৎ করেন বলেও রেজাউলের নামে অভিযোগ রয়েছে।

এফডিসির হিসাব শাখার নিরীক্ষার পাশাপাশি নিরপেক্ষ তদন্ত করা হলে ফ্যাসিবাদের দোসর হিসেবে খ্যাত রেজাউলের সকল দুর্নীতির থলের বিড়াল বেরিয়ে আসবে বলে জানিয়েছেন এ কর্মকর্তার দুর্নীতিতে অতিষ্ঠ কর্মকর্তা-কর্মচারিরা। তবে জুলাই আন্দোলনের পর ভোল পাল্টে রেজাউল বর্তমান সরকারের সুবিধা নেয়ার জন্য তদবির চালিয়ে যাচ্ছেন বলেও জানিয়েছেন বিএফডিসির কর্মকর্তা-কর্মচারিরা।

তবে সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করে রেজাউল হক বলেন, এটা মিথ্যে অপবাদ আমার বিরুদ্ধে। যারা গণশুনানিতে আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছেন, তারা অধিকাংশই ছুটি নিয়ে আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছেন। আমি যা করেছি, চাকরির নিয়ম মেনেই সেগুলো প্রয়োগের চেষ্টা করেছি। কাউকে বিশেষ সুবিধা না দেয়াতেই আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছেন বলে দাবি করেন তিনি।

রেজাউল হক আরও বলেন, সরকার আমাকে বসিয়েছে কাজ করার জন্য। কাউকে বাড়তি সুবিধা দেয়ার জন্য নয়। শৃঙ্খলা ঠিক রাখতে গিয়ে কঠোর হতে হয়েছে, এটাই আমার অপরাধ। বাইরে থেকে পার্টি (প্রযোজক) আমাদের লোকজনের ব্যাপারে অভিযোগ দেয়, এগুলো নিয়ে কথা বলাটাই আমার অপরাধ।

আপন দেশ/এমএইচ

মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

সম্পর্কিত বিষয়:

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়