ছবি: আপন দেশ
দেশে উৎপাদিত বিভিন্ন ব্র্যান্ডের টুথপেস্ট, হ্যান্ডওয়াশে বিপজ্জনক মাত্রায় প্যারাবেনের উপস্থিতি পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। এটি এমন একটি রাসায়নিক পদার্থ, যার কারণে হরমোন নিয়ন্ত্রণে ব্যাঘাত, প্রজনন সমস্যা, এমনকি ক্যান্সারের ঝুঁকিও সৃষ্টি হয় বলে জানিয়েছেন তারা।
পরিবেশ নিয়ে কাজ করা সংগঠন এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (এসডো)। সংগঠনটির গবেষণায় এমন তথ্য পাওয়া গেছে। এসডো তাদের গবেষণার ফলাফল প্রকাশ করেছে।
গবেষণায় দেশের জনপ্রিয় টুথপেস্ট, হ্যান্ডওয়াশগুলোতে প্যারাবেনের ব্যবহারের মাত্রা অনুসন্ধান করা হয়। এজন্য ঢাকার বিভিন্ন স্থানীয় দোকান থেকে টুথপেস্ট, হ্যান্ডওয়াশের ৩০টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়। পরে তা পরীক্ষার জন্য দক্ষিণ কোরিয়ার ওনজিন ইনস্টিটিউট ফর অকুপেশনাল অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল হেলথে পাঠানো হয়।
আরও পড়ুন>> বৈশ্বিক গণতান্ত্রিক সূচকে বাংলাদেশের অবনতি
গবেষণার ফলাফলে দেখা গেছে, টুথপেস্ট ও হ্যান্ডওয়াশের সব নমুনাতেই রাসায়নিক পদার্থ উপস্থিত। যা নির্ধারিত মাত্রার চেয়ে বেশি। এসব নমুনাতে ফ্লোরাইড এবং সোডিয়াম ডাইক্লোরাইডের উপস্থিতি সবচেয়ে বেশি। আরও ভয়াবহ তথ্য হলো, প্রাপ্তবয়স্কদের পারসোনাল কেয়ার প্রোডাক্টে ২২টি নমুনার মধ্যে পাঁচটি পণ্যে সর্বোচ্চ মাত্রায় প্যারাবেন উপস্থিত।
এছাড়া গবেষণায় সাতটি অন্যান্য দেশের নমুনাও বিশ্লেষণ করা হয়। কিন্তু দেখা গেছে, বাংলাদেশি পণ্যগুলোতেই সবচেয়ে বেশি মাত্রায় প্যারাবেন ব্যবহার করা হয়েছে।
গবেষকরা বলছেন, প্যারাবেনের কারণে হরমোন নিয়ন্ত্রণে ব্যাঘাত, প্রজনন সমস্যা, এমনকি ক্যান্সারের ঝুঁকিও সৃষ্টি হয়। অন্যদিকে ফ্লোরাইডের অতিরিক্ত ব্যবহার হাড়ের ভারসাম্য নষ্ট করে। দাঁতের এনামেল গঠনে সমস্যা তৈরি করে। তাছাড়া অতিরিক্ত সোডিয়াম ডাইক্লোরাইড ব্যবহারের ফলে উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, স্ট্রোক এবং কিডনির সমস্যাও সৃষ্টি হতে পারে।
এসডোর চেয়ারপারসন সৈয়দ মারগুব মোর্শেদ এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। সরকারের প্রতি এ রাসায়নিকের ব্যবহার নিষিদ্ধের আহ্বান জানিয়েছেন।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মো. আবুল হাশেম বলেন, আমাদের দৈনন্দিন পণ্যে এতো উচ্চমাত্রায় এই বিষাক্ত রাসায়নিকের ব্যবহার দেখে আমি অনেক উদ্বিগ্ন। এগুলো নীরবে আমাদের স্বাস্থ্যের ক্ষতি করে যাচ্ছে। আমাদের জীবনকে হুমকির মুখে ঠেলে দিচ্ছে।
উল্লেখ্য, প্যারাবেন হলো এক ধরনের রাসায়নিক যা সাধারণত প্রসাধনী, পারসোনাল কেয়ার প্রোডাক্ট (শ্যাম্পু, ডিওডোরেন্ট, হ্যান্ডওয়াশ), ওষুধপত্রের মেয়াদ বাড়ানোর জন্য ব্যবহৃত হয়। তবে এটি মানুষের হরমোন নিয়ন্ত্রণের জন্য গুরত্বপূর্ণ এন্ড্রোকাইন সিস্টেমের কার্যক্রমকে ব্যাহত করে। এ কারণে বেশ কয়েকটি দেশ এসব পণ্যে প্যারাবেনের ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছে।
আপন দেশ/এসএমএ
