Apan Desh | আপন দেশ

ডেঙ্গু জ্বর সম্পর্কে জরুরি ১০টি তথ্য জানা উচিত

আপন দেশ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৩:৩৭, ১৩ আগস্ট ২০২৪

ডেঙ্গু জ্বর সম্পর্কে জরুরি ১০টি তথ্য জানা উচিত

ছবি : সংগৃহীত

বর্ষাকাল মানেই মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়ে যাওয়া। ডেঙ্গু মোটেও সাধারণ কোনো অসুখ নয়। প্রতি বছর এ রোগে আক্রান্ত হয়ে অনেক প্রাণহানির ঘটনা ঘটে থাকে। যার কারণে ডেঙ্গু জ্বর নিয়ে মানুষের মধ্যে অনেক উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা রয়েছে।

ডেঙ্গু জ্বরকে প্রথমে বেশিরভাগ মানুষই সাধারণ জ্বর ভেবে ভুল করে থাকেন। কারণ বর্তমানে জ্বর হলেই সেটি সাধারণ জ্বর নাকি ডেঙ্গু বা করোনা কি না তা বুঝার উপায় নেই শুরুতেই। তাই ডেঙ্গু সম্পর্কে কিছু তথ্য জেনে রাখা জরুরি।

ডেঙ্গু শনাক্ত ও চিকিৎসায় সুবিধার জন্য চলুন জেনে নেই ডেঙ্গু সম্পর্কে কি কি জেনে রাখা উচিত।

১. ডেঙ্গুর লক্ষণ
সাধারণত ডেঙ্গুর প্রাথমিক লক্ষণ হচ্ছে জ্বর। ডেঙ্গু জ্বর হলে ১০১ ডিগ্রি থেকে ১০২ ডিগ্রি তাপমাত্রা থাকতে পারে। জ্বর একটানা থাকতে পারে, আবার ঘাম দিয়ে জ্বর ছেড়ে দেবার পর আবারও জ্বর আসতে পারে। জ্বরের সাথে শরীর ও মাথাব্যথা থাকতে পারে। চোখের পেছনে ব্যথা এবং চামড়ায় লালচে দাগ (র‍্যাশ) হতে পারে। তবে অনেক সময় ডেঙ্গু জ্বরে এসব লক্ষণ নাও থাকতে পারে।

২. জ্বর হলেই কি চিন্তা করা উচিত?
চিকিৎসকরা বলছেন, বর্তমান মৌসুমটা ডেঙ্গুর মৌসুম, সেজন্য এখন জ্বর হল অবহেলা করা উচিত নয়। জ্বরে আক্রান্ত হলেই সাথে-সাথে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়ার পরামর্শ তাদের।

চলতি মৌসুমে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে অনেকেই মারা গেছেন, তাদের বেশিরভাগই জ্বরকে অবহেলা করে দেরিতে চিকিৎসা নিয়েছেন। তাই জ্বর হলেই চিকিৎসা নেয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।

জ্বরের সাথে যদি সর্দি- কাশি, প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া কিংবা অন্য কোন বিষয় জড়িত থাকে তাহলে সেটি ডেঙ্গু না হয়ে অন্যকিছু হতে পারে। তবে জ্বর হলেই সচেতন থাকতে হবে বলছেন তারা।

৩. পর্যাপ্ত বিশ্রাম
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জ্বর হলে বিশ্রামে থাকতে হবে। জ্বর নিয়ে দৌড়াদৌড়ি বা ভারী কাজ করা উচিত নয়। একজন ব্যক্তি সাধারণত প্রতিদিন যেসব পরিশ্রমের কাজ করে, সেগুলো না করাই ভালো। পরিপূর্ণ বিশ্রাম প্রয়োজন।

৪. কী খাবেন?
ডেঙ্গু জ্বর হলে প্রচুর পরিমাণে তরল জাতীয় খাবার গ্রহণ করা উচিত। যেমন - ডাবের পানি, লেবুর শরবত, ফলের জুস এবং খাবার স্যালাইন পান করা যেতে পারে। এমন নয় যে প্রচুর পরিমাণে পানি খেতে হবে, পানি জাতীয় খাবার ও খাওয়া উপকারি।

৫. যেসব ঔষধ খাওয়া উচিত নয়
চিকিৎসকরা বলছেন, ডেঙ্গু জ্বর হলে প্যারাসিটামল খাওয়া যাবে। স্বাভাবিক ওজনের একজন প্রাপ্ত বয়স্ক ব্যক্তি প্রতিদিন সর্বোচ্চ চারটি প্যারাসিটামল খেতে পারবে। তবে প্যারাসিটামলের সর্বোচ্চ ডোজ হচ্ছে প্রতিদিন চার গ্রাম।

কিন্তু কোন ব্যক্তির যদি লিভার, হার্ট এবং কিডনি সংক্রান্ত জটিলতা থাকে, তাহলে প্যারাসিটামল সেবনের আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হলে গায়ে ব্যথার জন্য অ্যাসপিরিন জাতীয় ঔষধ খাওয়া যাবে না। ডেঙ্গুর সময় অ্যাসপিরিন জাতীয় ঔষধ গ্রহণ করলে রক্তক্ষরণ হতে পারে।

৬. প্ল্যাটিলেট বা রক্তকণিকা
ডেঙ্গু জ্বরের ক্ষেত্রে প্ল্যাটিলেট বা রক্তকণিকা মূল ফ্যাক্টর নয় বলছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, বিষয়টি চিকিৎসকের উপর ছেড়ে দেয়াই ভালো। তবে রক্ত বৃদ্ধি করে এমন খাবার বেশি খাওয়া উচিত। সাধারণত একজন মানুষের রক্তে প্ল্যাটিলেট কাউন্ট থাকে দেড়-লাখ থেকে সাড়ে চার-লাখ পর্যন্ত।

৭. ডেঙ্গু হলেই কি হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়?
ডেঙ্গু জ্বরের তিনটি ভাগ রয়েছে। ভাগগুলো হচ্ছে - 'এ', 'বি' এবং 'সি'। প্রথম ক্যাটাগরির রোগীরা নরমাল থাকে। তাদের শুধু জ্বর থাকে। অধিকাংশ ডেঙ্গু রোগী 'এ' ক্যাটাগরির। তাদের হাসপাতালে ভর্তি হবার কোন প্রয়োজন নেই।

'বি' ক্যাটাগরির ডেঙ্গু রোগীদের সবই স্বাভাবিক থাকে, কিন্তু শরীরে কিছু লক্ষণ প্রকাশ পায়। যেমন তার পেটে ব্যথা হতে পারে, বমি হতে পারে প্রচুর। কিংবা সে কিছুই খেতে পারছে না। অনেক সময় দেখা যায়, দুইদিন জ্বরের পরে শরীর ঠাণ্ডা হয়ে যায়। এক্ষেত্রে হাসপাতাল ভর্তি হওয়াই ভালো।

'সি' ক্যাটাগরির ডেঙ্গু জ্বর সবচেয়ে খারাপ। কিছু-কিছু ক্ষেত্রে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র বা আইসিইউ'র প্রয়োজন হতে পারে।

৮. ডেঙ্গুর জ্বরের সময়কাল
সাধারণত জুলাই থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ থাকে। কারণ এ সময়টিতে এডিস মশার বিস্তার ঘটে। কিন্তু এবার দেখা যাচ্ছে ডেঙ্গু জ্বরের সময়কাল আরো এগিয়ে এসেছে। এবার জুন মাস থেকেই ডেঙ্গু জ্বরের সময় শুরু হয়ে গেছে।

৯. এডিস মশা কখন কামড়ায়
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডেঙ্গু জ্বরের জন্য দায়ী এডিস মশা অন্ধকারে কামড়ায় না। সাধারণত সকালের দিকে এবং সন্ধ্যার কিছু আগে এডিস মশা তৎপর হয়ে ওঠে। এডিস মশা কখনো অন্ধকারে কামড়ায় না।

১০. কোথাও পানি জমতে না দেয়া
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এডিস মশা সাধারণত ডিম পাড়ে স্বচ্ছ পানিতে। আর তাই বাড়ির ছাদে কিংবা বারান্দার ফুলের টবে, নির্মাণাধীন ভবনের বিভিন্ন পয়েন্টে, রাস্তার পাশে পড়ে থাকা টায়ার কিংবা অন্যান্য পাত্রে যাতে পানি তিন থেকে পাঁচদিনের বেশি জমা না থাকে সেদিকে লক্ষ্য রাখার পরামর্শ তাদের।

আপন দেশ/এইউ

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়