ছবি: সংগৃহীত
শীতের আগমনে দেশের গ্রামীণ ও জেলা পর্যায়ে ঠান্ডা পড়তে শুরু করেছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এ সময় জ্বর, সর্দি ও কাশির রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। বিশেষ করে শিশুরা বেশি এসব রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে হাসপাতালগুলোতে স্যালাইন ও ওষুধের সংকট দেখা দিয়েছে।
অপরদিকে চাহিদার তুলনায় হাসপাতালগুলোতে পর্যাপ্ত ওষুধ ও স্যালাইন পাচ্ছেন রোগীরা। এতে গরিব ও অসহায় রোগীরা আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। ওষুধ কিনতে হচ্ছে বাইরে থেকে। অনেকের পক্ষে এ ব্যয় বহন করা কঠিন হয়ে পড়ছে।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, গত শনিবার সকাল ৯টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত ৫৩৮ জন রোগী ভর্তি ছিল। তাদের মধ্যে ১৮০-১৮৫ জন শিশু। ৪৫ শয্যার ওয়ার্ডে ২-৩ জন করে শিশুকে থাকতে হচ্ছে। আর করিডোরে ও বারান্দায়ও স্থান সংকুলান হচ্ছে না। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন রোগীর স্বজনেরা।
চিকিৎসকেরা বলছেন, বৈশ্বিক আবহাওয়ার পরিবর্তনের কারণে ঠান্ডাজনিত রোগের জীবাণু বৃদ্ধ ও শিশুদের মধ্যে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। গত কয়েক বছরের তুলনায় এবার এ রোগের ধরন পরিবর্তিত হয়েছে। ফলে সব বয়সী মানুষ রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। এতে আতঙ্কিত না হয়ে মাস্ক পরার ও পুষ্টিকর খাবার খাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন।
মহাখালী থেকে ফরিদা আক্তার তার এক বছরের শিশুকে নিয়ে এসেছেন হাসপাতালে। তিনি বলেন, শিশুর জন্য ১৮শ টাকার ওষুধ কিনতে হয়েছে। অন্যদিকে মনি আক্তারের মা জানান, হাসপাতাল থেকে যতটুকু ওষুধ পাওয়া যায়, তার চেয়ে বেশি বাইরে থেকে কিনতে হচ্ছে।
শিশু ওয়ার্ডের ইনচার্জ বিলকিস বেগম বলেন, প্রতিদিন ৭০ থেকে ৮০ জন শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি হচ্ছে। কিন্তু হাসপাতালে সরবরাহ করা ওষুধের পরিমাণ যথেষ্ট নয়। তাই বাকিগুলো বাইরে থেকে কিনতে বলি। রাতের দিকে রোগীর চাপ বাড়লে স্যালাইনের সংকট দেখা দেয়। রোগীর চাহিদা মেটানো সম্ভব হচ্ছে না।
হাসপাতালের শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. সামসুজ্জামান জানান, আবহাওয়ার বিরূপ প্রভাবে শিশুদের শরীরে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে সমস্যা হচ্ছে। যা তাদের শীতজনিত রোগে আক্রান্ত করছে।
শহিদুল ইসলাম নামের এক শিশুর অভিভাবক বলেন, স্যালাইন ও ওষুধ বাইরে থেকে কিনতে হলো। হাসপাতালে থাকলেও যদি বাইরে ওষুধ কিনতে হয় তাহলে ভর্তি থেকে কী হবে, আমরা তো গরিব মানুষ। মর্জিনা নামের আরেক অভিভাবক জানান, দু-একটা ওষুধ ছাড়া সবকিছুই বাইরের ফার্মেসি থেকে কিনতে হচ্ছে।
হাসপাতালের শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. সামসুজ্জামান জানান, আবহাওয়ার বিরূপ প্রভাবের কারণে শিশুদের শরীরে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে। এর ফলে তারা জ্বর, সর্দি ও অন্যান্য শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। ঠান্ডাজনিত কারণে বর্তমানে অনেক বেশি রোগী ভর্তি হচ্ছে। শিশুদের জন্য এটি একটি দুর্যোগকালীন সময়। বিছানা সংকট হলেও মেঝেতে রেখে হলেও সেবা দেয়া হচ্ছে। বর্তমানে ওষুধেরও কিছুটা সংকট রয়েছে।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে স্বাস্থ্য বিভাগ যে টাকার ওষুধ সরবরাহের বরাদ্দ দিয়েছে, তা চাহিদার অনেক কম। ফলে হাসপাতালে রোগীদের জন্য ওষুধের অভাব দেখা দিয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে বাইরের ফার্মেসি থেকে কিনে এনে বিতরণ করতে হচ্ছে।
হাসপাতালের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, স্বাস্থ্য বিভাগের দেয়া ওষুধ কোথায় যায়, তা বোঝা যাচ্ছে না। বর্তমানে ওষুধ ও স্যালাইন দুটোই নেই। বাইরের ফার্মেসি থেকে বেবি স্যালাইন, কলেরা স্যালাইন ও নরমাল স্যালাইনসহ অন্যান্য ওষুধ কিনে চিকিৎসা চালানো হচ্ছে। হাসপাতালগুলোতে এ ধরনের ওষুধের সংকট দেখা দিয়েছে।
হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডা. জাহাঙ্গির আলম জানান, অন্য বছরের তুলনায় এবার ঠান্ডাজনিত রোগে বিভিন্ন বয়সী নারী-পুরুষের আক্রান্তের হার বেড়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে রোগব্যাধির প্রকোপ বাড়ছে। এছাড়া এ বছর ঠান্ডাবাহিত রোগের ধরন পরিবর্তিত হয়েছে। আগের তুলনায় এ ইনফ্লুয়েঞ্জার অনেকটা শক্তিশালী মনে হচ্ছে।
ডা. কবির আহমেদ বলেন, মানুষের পুষ্টির অভাব ও উচ্চ নিত্যপণ্যের দাম রোগের প্রকোপ বাড়াচ্ছে। সঠিক পুষ্টি ও স্বাস্থ্যসচেতনতা জরুরি।
আপন দেশ/এমবি