Apan Desh | আপন দেশ

তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংস্কারে বাধা তামাক কোম্পানি

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২১:২১, ৪ নভেম্বর ২০২৪

আপডেট: ২১:২৩, ৪ নভেম্বর ২০২৪

তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংস্কারে বাধা তামাক কোম্পানি

রাজধানীর বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রে নারী মৈত্রী’র আয়োজিত মতবিনিময় সভায় নেতৃবৃন্দ

তামাকের ভয়াল ছোবল থেকে নারী ও শিশুদের রক্ষা জরুরি বলে মনে করে তামাক বিরোধী মায়েদের ফোরাম। এ জন্য তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের প্রস্তাবিত সংশোধনী (সংস্কার) অবিলম্বে পাসের তাগিদ দিয়েছে সংগঠনটি। 
সোমবার (৪ নভেম্বর) সকাল ১১ টায় রাজধানীর বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রে নারী মৈত্রী’র আয়োজিত মতবিনিময় সভায় এ দাবি তুলে ধরেন সংগঠনটির নেতারা। 

নারী মৈত্রীর নির্বাহী পরিচালক শাহীন আকতার ডলির সভাপতিত্বে আলোচনায় অংশ নেন তামাকবিরোধী মায়েদের ফোরামের আহবায়ক শিবানী ভট্টাচার্য, ফোরামের যুগ্ম আহবায়ক ও প্রেস ক্লাবের ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য শাহনাজ পলি এবং যুগ্ম আহবায়ক আফসানা নওরিন।

অনুষ্ঠানের মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন নারী মৈত্রীর প্রোজেক্ট কো-অর্ডিনেটর নাছরিন আকতার। তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের প্রস্তাবিত সংশোধনী ৬ দাবি তুলে ধরে নাছরিন আকতার বলেন, দেশে বর্তমানে ৩ কোটি ৭৮ লাখ মানুষ তামাক ব্যবহার করে। শুধুমাত্র তামাক ব্যবহারজনিত রোগেই প্রতিদিন মারা যাচ্ছে ৪৪২ জন। তাই জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় হুমকি হিসেবে চিহ্নিত করে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের প্রস্তাবিত সংশোধনী দ্রুত পাশ করা এখন সময়ের দাবি। 

তিনি বলেন, বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনকে এফসিটিসির সঙ্গে সমন্বয়ের অংশ হিসেবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় খসড়া প্রণয়ন করেছে। খসড়ায় প্রস্তাবিত বিষয়বস্তুর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- অধূমপায়ীদের সুরক্ষায় সকল পাবলিক প্লেস এবং গণপরিবহনে ধূমপানের জন্য নির্ধারিত স্থান বিলুপ্ত করা। তামাক পণ্যের প্রচার বন্ধে বিক্রয় কেন্দ্রে তামাক পণ্যের প্রদর্শন নিষিদ্ধ করা। তামাক কোম্পানির সামাজিক দায়বদ্ধতা কার্যক্রম সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা। পাশাপাশি ই-সিগারেট বা ইমার্জিং হিটেড টোব্যাকো পণ্য আমদানি,ব্যবহার ও বাজারজাতকরণ নিষিদ্ধ করা। তামাক পণ্যের সব ধরনের খুচরা ও খোলা বিক্রয় বন্ধ করা। সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবার্তার আকার ৫০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৯০ শতাংশ করার দাবি জানানো হয়। 

এ সময় তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের প্রস্তাবিত সংশোধনী দ্রুত পাসের দাবিতে যুব বান্ধব সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তামাক বিরোধী মায়েদের ফোরাম-এর আবায়ক শিবানী ভট্টাচার্য। 
 
পাবলিক প্লেসে ধূমপান করাকে এক ধরনের বৈষম্য বলে উল্লেখ করেন শিবানী ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, ধূমপান না করেও পরোক্ষভাবে ধূমপানের শিকার হয় ৩ কোটি ৮৪ লাখ মানুষ। যার মধ্যে বেশি ক্ষতির শিকার হন নারী ও শিশুরা। পরোক্ষ ধূমপানের কারণে নারীদের অকালে গর্ভপাত, অপরিণত শিশুর জন্ম, স্বল্প ওজনের শিশু, গর্ভকালীন রক্তক্ষরণ, প্রসবের সময় অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ,মৃত শিশুর জন্ম দেয়াসহ নানা সমস্যা দেখা দেয়। তাই নারী ও শিশু স্বাস্থ্য রক্ষায় তামাক কোম্পানি গুলোর মিথ্যাচারে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের প্রস্তাবিত সংশোধনী দ্রুত পাসের দাবি জানান।  

কর্মসংস্থান নিয়ে তামাক কোম্পানী মিথ্যাচার করছেন বলে দাবি করেন ক্যাম্পেইন ফর টোব্যাকো ফ্রি কিডসের (সিটিএফকে) প্রোগ্রামস ম্যানাজার আবদুস সালাম মিয়া। তিনি বলেন,জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের তথ্য অনুসারে দেশে বিড়ি কোম্পানিতে শ্রমিক নিয়োজিত আছে মাত্র ৪৬ হাজার। আর দেশের প্রায় ৯০ শতাংশ বাজার দখলে রেখেছে দুই বহুজাতিক সিগারেট কোম্পানি বিএটিবি ও জেটিআই। তামাক কোম্পানির প্রতিবেদন অনুসারে তাদের কর্মচারীর সংখ্যা মাত্র এক হাজার ৭৬৯ জন (বিএটিবির এক হাজার ৬৬৯ জন এবং জেটিআইয়ের প্রায় ১০০ জন)। সিগারেট কোস্পানিগুলো ৭০ লাখ লোক কাজ হারাবে বলে তারা অপপ্রচার চালাচ্ছে। 

তামাক কোম্পানির কুচক্র ও আইন সংশোধনে বাধা দেয়ার জন্য তীব্র নিন্দা জানান সিটিএফকে-এর কমিউনিকেশন্স ম্যানাজার হুমায়রা সুলতানা। তামাক কোম্পানির এসব কুচক্র গুলো মিডিয়ার সামনে তুলে ধরার জন্য গনমাধ্যম কর্মীদের আহবান জানান তিনি। 

তামাক কোম্পানির নানান রকম কুটকৌশল তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের প্রস্তাবিত সংশোধনী দ্রুত পাসে বাধা তৈরি করছে বলে অভিযোগ করেন বিসিআইসির সাবেক চেয়ারম্যান মো. মোস্তাফিজুর রহমান। 

তিনি বলেন, তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন শক্তিশালী হলে সরকারের রাজস্ব কমে যাবে বলে যে প্রচারণা চালানো হচ্ছে তা অযৌক্তিক। এনবিআরের তথ্যই বলে দেয় তারা মিথ্যাচার করছে। বাংলাদেশে ২০০৫ সালে যখন তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন পাস হয়, সে বছর তামাক থেকে রাজস্ব ছিল দুই হাজার ৮৮৮ কোটি টাকা। পরবর্তী অর্থবছর ২০০৫-০৬ এ রাজস্ব আদায় হয় তিন হাজার ৩৫১ কোটি টাকা। ২০১৩ সালে যখন আইনটি সংশোধন করা হয়, সে বছর তামাক থেকে সরকারের রাজস্ব আয় ছিল ১০ হাজার ১৭০ কোটি টাকা। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে তা বেড়ে দাঁড়ায় ১২ হাজার ৫৫৬ কোটি টাকা। ২০২২-২৩ অর্থবছরে তামাক খাত থেকে রাজস্ব আদায় হয়েছে ৩২ হাজার ৮২৩ কোটি টাকা। তাই তামাক কোম্পানিগুলোর এ সকল ভ্রান্ত প্রচারণা থেকে নীতি নির্ধারকদের সতর্ক থাকার আহবান জানান তিনি। একই সঙ্গে দেশের তরুনদের স্বাস্থ্য সুরুক্ষায় জোরালো পদক্ষেপ নেয়ার দাবি জানান তিনি।

এছাড়াও আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন তামাক বিরোধী মায়েদের ফোরামের সদস্যরা, গনমাধ্যমকর্মীবৃন্দ, গার্লস গাইড রেঞ্জার ইউনিট, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুন সদস্যসহ অংশীজনেরা।

আপন দেশ/এবি

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়