Apan Desh | আপন দেশ

পঙ্গু হাসপাতালের পরিচালক নিয়োগে বৈষম্য

নিজস্ব প্রতিবদেক

প্রকাশিত: ১৫:৫৮, ২৬ নভেম্বর ২০২৪

আপডেট: ১৬:০২, ২৬ নভেম্বর ২০২৪

পঙ্গু হাসপাতালের পরিচালক নিয়োগে বৈষম্য

ছবি: আপন দেশ

স্বাধীনতার ৫৩ বছর পরও বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতে বৈষম্য দূর হয়নি। দেড় হাজারের বেশি ছাত্র-জনতার রক্তের বিনিময়ে স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার পতন হয়। এরপর দেশের মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণের জন্য ক্ষমতায় আসা অন্তর্বর্তী সরকার। তবে এ সরকার নিয়োগ প্রক্রিয়ায় বৈষম্য কাটাতে পারেনি। বিশেষ করে পঙ্গু হাসপাতালের (জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান) পরিচালক পদে নিয়োগে।

এ প্রথমবারের মতো পঙ্গু হাসপাতালের পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো. আবুল কেনান। যিনি কখনো পূর্ণাঙ্গ অধ্যাপক হননি। তার নিয়োগে চরম বৈষম্যের অভিযোগ তুলেছেন হাসপাতালের কর্মীরা।

সোমবার (২৬ নভেম্বর) স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে তাকে এ পদে নিয়োগ দেয়া হয়। নির্দেশনায় তাকে আগামী পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে নতুন কর্মস্থলে যোগদানের জন্য বলা হয়েছে। ডা. মো. আবুল কেনান এর আগে কিশোরগঞ্জ শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিক্যাল কলেজে সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

এদিকে ২০২৩ সালের ৭ আগস্ট পঙ্গু হাসপাতালের পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছিল অধ্যাপক কাজী শামীম উজ্জামানকে। তাকে সম্প্রতি গোপালগঞ্জ মেডিক্যাল কলেজে স্বাস্থ্য অধিদফতরের বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) হিসেবে বদলি করা হয়েছে। যদিও তার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, তিনি শেখ হাসিনা সরকারের গণহত্যার সমর্থক ছিলেন। তার বিদায়ের পরই ডা. আবুল কেনানের নিয়োগ নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্ন উঠেছে।

পঙ্গু হাসপাতালের একাধিক কর্মকর্তা অভিযোগ করে বলেন, নতুন ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ডা. মো. আবুল কেনান Doctors Association of Bangladesh (DAB) এর নেতা হওয়ায় তাকে রাজনৈতিক বিবেচনায় পদে বসানো হয়েছে। যদিও স্বনামধন্য এ হাসপাতালে নিয়োগে সকলের আশা ছিল যোগ্য লোককে বসানো হবে। প্রতিষ্ঠানে দায়িত্ব পালনকারী সাতজন পূর্ণাঙ্গ অধ্যাপক থাকা সত্ত্বেও একজন সহযোগী অধ্যাপককে কেন পরিচালক পদে নিয়োগ দেয়া হল, তা বোধগম্য নয়।

পঙ্গু হাসপাতালের একজন অধ্যাপক বলেন, দীর্ঘ ১৭ বছর পর ছাত্র-জনতার তাজা রক্তের বিনিময়ে স্বৈরাচারের পতন ঘটেছে। আমাদের আন্দোলনের অন্যতম লক্ষ্য ছিল সকল পর্যায়ে বৈষম্য দূর করা। অথচ ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন হলেও এখন পঙ্গু হাসপাতালের পরিচালক নিয়োগে বৈষম্য।

অন্যদিকে এক নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অধ্যাপক অভিযোগ করে বলেন, ডা. মো. আবুল কেনান কখনো পঙ্গু হাসপাতালে পড়াশোনা করেননি। এমনকি এখানে একদিনও কাজ করেননি। তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে Master of Surgery (MS) করেছেন। পঙ্গু হাসপাতালের মতো একটি স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানের পরিচালকের পদে বসতে হলে তার সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোতে অভিজ্ঞতা থাকা প্রয়োজন। যা ডা. কেনানের নেই।

জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান (নিটোর) ঢাকা শহরের শের-এ-বাংলা নগরে অবস্থিত একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অর্থোপেডিক হাসপাতাল। এখানে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের চিকিৎসা শিক্ষা দেয়া হয়। এটি দেশে অঙ্গ প্রতিস্থাপন ও পুনর্বাসন চিকিৎসায় একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিত। ১৯৭২ সালে মুক্তিযুদ্ধের পর শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে পঙ্গু হাসপাতালের কার্যক্রম শুরু হয়। এর উদ্দেশ্য ছিল জরুরী ভিত্তিতে আহত মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা প্রদান করা। এর প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ছিলেন বিদেশি চিকিৎসক ডক্টর আরজে গাষ্টন। পরবর্তীতে অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম দায়িত্ব নিয়েছিলেন। ২০০২ সালে প্রতিষ্ঠানটির নাম পরিবর্তন করে ‘জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান’ রাখা হয়।

হাসপাতালটি বর্তমানে দেশের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিত। সেখানে বাংলাদেশ ও বিদেশী রোগীরা চিকিৎসা নিতে আসেন। এটি দেশের অর্থোপেডিক চিকিৎসা শাস্ত্রের উন্নতির ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করছে।

আপন দেশ/এমবি

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়