ফাইল ছবি
যুক্তরাষ্ট্রে কেন্দ্রীয় সরকারকে অর্থায়নের একটি বিল পাস হওয়া নিয়ে জটিলতা দেখা দিয়েছে। এটি পাস না হলে শনিবারের পর (স্থানীয় সময় ১ অক্টোবর মধ্যরাত) বন্ধ হয়ে যেতে পারে যুক্তরাষ্ট্রের সব সরকারি প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম। যা দেশটিতে ‘শাটডাউন’ হিসেবে পরিচিত। খবর বিবিসি ।
সেই পরিস্থিতি এড়াতে ও মার্কিন সরকারকে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত সচল রাখতে স্থানীয় সময় শুক্রবার (২৯ সেপ্টেম্বর) স্বল্পমেয়াদি তহবিল বিল পাসের চেষ্টা হয়েছিল পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ কংগ্রেসে। তবে সেখানে কট্টরপন্থী রিপাবলিকানদের আপত্তিতে বিলটি অনুমোদন পায়নি। চূড়ান্ত পর্বে বিলের বিপক্ষে ২৩২ এবং পক্ষে ১৯৮টি ভোট পড়ে।
এমন অবস্থায় সরকারের অচলাবস্থা ঠেকাতে ফেডারেল কর্মীদের ছুটি দীর্ঘ করা হতে পারে। সামরিক বাহিনীকে কাজ করতে হতে পারে বেতন ছাড়াই। গত এক দশকে যুক্তরাষ্ট্রে এটি হতে যাচ্ছে চতুর্থ শাটডাউন যা মিলিটারিসহ প্রায় ৪০ লাখ ফেডারেল কর্মীর বেতন নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি করেছে।
যুক্তরাষ্ট্রে সরকারি ব্যয় মেটানোর জন্য প্রতিবছর ১ অক্টোবর পরবর্তী এক বছরের জন্য অর্থ বরাদ্দের অনুমোদন দিয়ে থাকে আইন পরিষদের উচ্চকক্ষ সিনেট ও নিম্নকক্ষ কংগ্রেস। সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দল রিপাবলিকান পার্টির নিয়ন্ত্রণে থাকা কংগ্রেস অর্থ বরাদ্দের বিষয়টি আটকে রেখেছে। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ডেমোক্র্যাটিক পার্টির কাছে তারা দাবি করেছে, সরকারি ব্যয় অনেকাংশে হ্রাস করতে হবে। তবেই তারা নতুন অর্থবছরের অর্থ বরাদ্দের অনুমোদন দেবে।
আর আইন পরিষদের উচ্চকক্ষ সিনেটে মাত্র ১ আসনের ব্যবধানে এগিয়ে আছে ডেমোক্র্যাটিক পার্টি। অপরদিকে কংগ্রেসের নিয়ন্ত্রণ রয়েছে রিপাবলিকানদের দখলে। ফলে সরকারকে সচল রাখতে হলে দুই দলকে ঐকমত্যে পৌঁছাতে হবে।
এ অবস্থায় শনিবারের (৩০ সেপ্টেম্বর) মধ্যে অর্থ বরাদ্দের বিষয়টি নিয়ে দুই দল একমত না হতে পারলে দেশটিতে শাট ডাউন নেমে আসবে এবং অচল হয়ে পড়বে সরকার। বেশিরভাগ সরকারি চাকরিজীবীকে তখন বেতন ছাড়া বাধ্যতামূলক ছাঁটাই করা হতে পারে। এমনকি শিশুদের পুষ্টি কর্মসূচির মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোও বন্ধ হয়ে যাবে।
রিপাবলিকানদের একটি অংশ দাবি জানিয়েছে, সরকারি ব্যয় অনেক কমাতে হবে। এমনকি রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধে জড়িত ইউক্রেনকেও সহায়তা কমিয়ে দেয়ার দাবি করেছেন তারা। এসব কংগ্রেসম্যান স্পিকার ক্যাভিন ম্যাকার্থিকে এক্ষেত্রে কোনো ধরনের আলোচনা করতে দিচ্ছেন না। যদিও ম্যাকার্থি চাইলে ডেমোক্র্যাটদের নিয়ে এই বরাদ্দের অনুমোদন দিতে পারেন। কিন্তু এতে নিজ দলের আইন প্রণেতাদের দ্বারা স্পিকার পদ হারানোর শঙ্কায় পড়ে যাবেন তিনি।
এদিকে সরকারকে অচল হওয়ার হাত থেকে বাঁচাতে একটি স্বল্পকালীন অর্থ বরাদ্দ বিলের প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল সংসদের উচ্চকক্ষ থেকে। ওই বিলে ইউক্রেনের জন্য ৬ বিলিয়ন ডলার এবং প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের জন্য ৬ বিলিয়ন ডলারের প্রস্তাব রাখা হয়েছে। রিপাবলিকান স্পিকার ক্যাভিন ম্যাকার্থি এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন।
একটি সূত্র জানিয়েছে, রিপাবলিকানদের হয়ত এখন সিনেটের প্রস্তাবই মেনে নিতে হবে, নয়ত সরকার অচল হয়ে পড়ার দায় তাদের ওপর পড়বে। তবে, রিপাবলিকান সদস্যরা জানিয়েছেন, তারা পূর্ণকালীন বিল ছাড়া অন্য কোনো কিছুতে রাজি হবেন না।
যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি অর্থবছর (১ অক্টোবর) শুরুর আগে কংগ্রেসকে অর্থ বরাদ্দের বিষয়টি অনুমোদন দিতে হয়। কিন্তু যদি কেন্দ্রীয় সরকারের বাজেটের মোটামুটি ৩০ শতাংশের অনুমোদন দিতে কংগ্রেস ব্যর্থ হয় তখনই সরকার অচল হয়ে পড়ে। যদি এবার এমনটি হয় তাহলে সোমবার থেকে অতিপ্রয়োজনীয় ও জরুরি পরিষেবা ছাড়া সব খাতের সরকারি চাকরিজীবীদের বেকার হয়ে যেতে হবে। এমনকি যতক্ষণ পর্যন্ত এ সমস্যার সমাধান না হবে ততক্ষণ সশস্ত্র বাহিনীর ১৪ লাখ সদস্য এবং এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলারদের বেতন ছাড়াই কাজ করে যেতে হবে।
এদিকে গত এক দশকে আরও তিনবার এমন পরিস্থিতিতে পড়েছিল মার্কিন সরকার। তবে সেগুলো স্বল্পস্থায়ী ছিল।
আপন দেশ/এমএমজেড
মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।