রসায়নে নোবেল পেয়েছেন তিন বিজ্ঞানী
কোয়ান্টাম ডট টেকনোলজি আবিষ্কার এবং এর মাধ্যমে ইলেকট্রনিকস পণ্য থেকে শুরু করে স্বাস্থ্যখাতে বিপ্লব আনার স্বীকৃতি স্বরূপ এ বছর রসায়নে যৌথভাবে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তিন বিজ্ঞানী। তারা হলেন- মাউঙ্গি বাবেন্দি, লুই ব্রুস ও অ্যালেক্সি একিমোভ।
বুধবার (৪ অক্টোবর) সুইডেনের রয়্যাল সুইডিশ একাডেমি অব সায়েন্সেস বাংলাদেশ সময় দুপুর ৩টা ৪৫ মিনিটে তিন রসায়নবিদের নাম ঘোষণা করে।
তিনজনের মধ্যে লুই ব্রুস ও মাউঙ্গি বাবেন্দি যুক্তরাষ্ট্রের দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, আর অ্যালেক্সি একিমভ যুক্তরাষ্ট্রের একটি কোম্পানিতে গবেষক হিসেবে কাজ করেন। তবে তাদের সবার দেশ বা জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব ভিন্ন ভিন্ন। মাউঙ্গি বাবেন্দি ফরাসী, অ্যালেক্সি একিমভ রাশিয়ান এবং লুই ব্রুস মার্কিনি।
রসায়নে নোবেল বিজয়ী এ তিনজনের নাম নির্দিষ্ট সময়ের আগেই ফাঁস হয়ে যায়। ফলে পরে শুধু আনুষ্ঠানিকভাবে নাম ঘোষণা বাকি ছিল।
এই তিনজনকে নোবেল পুরস্কার কার হিসেবে নোবেল কমিটি তাদের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে বলছে, একে অন্যের থেকে স্বাধীনভাবে, একিমভ ও ব্রুস কোয়ান্টাম বিন্দু তৈরি করতে সফল হন, আর বাওয়েন্ডি রাসায়নিক উৎপাদনে বিপ্লব ঘটান।
কোয়ান্টাম বিন্দু কিউএলইডি প্রযুক্তির ওপর ভিত্তি করে তৈরি কম্পিউটার ও টেলিভিশন মনিটরকে আলোকিত করে থাকে। ন্যানোটেকনোলজির ছোট এই উপাদানটির লাইট এখন টেলিভিশন এবং এলইডি বাতি পর্যন্ত ছড়িয়েছে। এমনকি এটি চিকিৎসকরা অস্ত্রেপচারের মাধ্যমে টিউমার টিস্যুর অপসারণেও ব্যবহার করে থাকেন। এছাড়া আরও অনেক কাজে ব্যবহৃত হয় কোয়ান্টাম ডট টেকনোলজি।
গত শতকের ৮০’র দশকের প্রথম দিকে লুইস ব্রুস এবং অ্যালেক্সেই অ্যাকিমভ প্রথম কোয়ান্টাম ডট নামের এই আলোর এই ক্ষুদ্রতম ন্যানো পার্টিক্যালস আবিষ্কার করেছিলেন। পরে ১৯৯৩ সালে মাউঙ্গি বাবেন্দি কোয়ান্টাম ডট ম্যানুফ্যাকচারিংয়ের ক্ষেত্রে যুগান্তকারী কিছু পদ্ধতি বা সূত্র উদ্ভাবন করেন।
তাদের এই উদ্ভাবনের কল্যাণেই গত শতকের শেষ দিক থেকে বৈদ্যুতিক বাতি, টেলিভিশন ও কম্পিউটার স্ক্রিন এবং ক্যানসারের চিকিৎসা রীতিমতো নতুন যুগে প্রবেশ করে।
এই কোয়ান্টাম ডট মূলত অতি অতি ক্ষুদ্র একপ্রকার আলোক কণা। এসব কণার মূল উপযোগিতা এদের আকারের মধ্যে। সব কোয়ান্টাম ডটের আকার-আয়তন একরকম নয়। অর্থাৎ যে আকৃতির কোয়ান্টাম ডট এলইডি বাতি প্রস্তুতে ব্যবহার করা যাবে, সেটি টিভি বা কম্পিউটার স্ক্রিন প্রস্তুতের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা যাবে না। আবার ক্যানসারের চিকিৎসায় বা টিউমার অপসারণে যে আকারের কোয়ান্টাম ডট ব্যবহার করা হয়, তা বাতি প্রস্তুত কিংবা স্ক্রিন তৈরিতে ব্যবহার করা সম্ভব হবে না।
এর আগে মঙ্গলবার (৩ অক্টোবর) ইলেকট্রন ডাইনামিকসের ওপর গবেষণায় বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তিন বিজ্ঞানীকে পদার্থে নোবেল পুরস্কার দেয়া হয়। পরীক্ষামূলক পদ্ধতি ব্যবহার করে আলোর অ্যাটোসেকেন্ড পালস তৈরি করে সম্মাজনক এ পুরস্কার পেয়েছেন পিয়ারে অ্যাগোস্টিনি, ফেরেঙ্ক ক্রাউজ ও আন্না লুইলিয়ে।
নোবেলজয়ী এ তিন পদার্থবিদ এমন আলোর ফ্ল্যাশ (ঝলকানি) তৈরি করেছেন যেগুলো ‘অতি দ্রুত চলাচলকারী’ ইলেকট্রনের স্ন্যাপশট নিতে পারে। ইলেকট্রন সাধারণত এত দ্রত চলাচল করে যে এটির গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করার বিষয়টি আগে অসম্ভব মনে করা হতো।
এদিকে রসায়নে নোবেল বিজয়ীদের নাম আনুষ্ঠানিকভাবে দ্য রয়্যাল সুইডিশ একাডেমি অব সায়েন্সেস ঘোষণা দেয়ার কয়েক ঘণ্টা আগে দেশটির গণমাধ্যমে তা ফাঁস হয়ে যায়। যে কারণে শেষ পর্যন্ত এই ভুলের জন্য দুঃখপ্রকাশ করেছেন দ্য রয়্যাল সুইডিশ একাডেমির জুরি বোর্ডের সদস্যরা।
রয়্যাল সুইডিশ একাডেমি অব সায়েন্সের মহাসচিব হ্যান্স এলিগ্রেন বলেছেন, একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি ফাঁস হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু এটি কীভাবে ফাঁস হয়েছে সেই কারণ এখনও অজানা।
তিনি বলেন, ‘আমরা গভীরভাবে দুঃখিত যে, এটি ঘটেছে। তবে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল নাম ফাঁসের এই ঘটনা বিজয়ীদের পুরস্কার প্রদানকে কোনোভাবেই প্রভাবিত করেনি।’
অপরদিকে পুরস্কার বিজয়ী মাউঙ্গি বাবেন্দি বলেছেন, নোবেল কমিটির কাছ থেকে টেলিফোন পাওয়ার আগে পর্যন্ত তিনি এই খবর কারও কাছে শুনতে পাননি। রয়্যাল সুইডিশ একাডেমি অব সায়েন্সের মহাসচিব বিজয়ীদের নাম ঘোষণার সময় টেলিফোনে কথা বলেন মাউঙ্গির সঙ্গে।
এ সময় টেলিফোনে মাউঙ্গি বলেন, আমি বিষয়টি জানতামই না। সুইডিশ একাডেমি আমাকে জাগিয়ে তুলেছে। আমি গভীর ঘুমে ছিলাম। এমনকি সুইডিশ একাডেমির কাছ থেকে ফোন পাওয়ার প্রত্যাশাও করিনি।
নোবেল জয়ের অনুভূতির বিষয়ে তিনি বলেন, আমার অনুভূতি অত্যন্ত বিস্ময় জাগানিয়া, ঘুমন্ত এবং অবাক হওয়ার মতো। এটি অপ্রত্যাশিত, তবে নোবেল জয়ে অত্যন্ত সম্মানিত বোধ করছি।
উল্লেখ্য, নোবেল পুরস্কার বিজয়ীদের নাম আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণার আগে ফাঁস হয়ে যাওয়ার ঘটনা একেবারে বিরল। কারণ আলাদা আলাদা ক্যাটেগরির বিজয়ী ঘোষণার জন্য ভিন্ন ভিন্ন কমিটি রয়েছে। প্রত্যেক ব্ছরের বিজয়ীদের নাম আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণার আগ পর্যন্ত তা যেন ফাঁস হয়ে না যায়, সেজন্য কঠোর গোপনীয়তা অবলম্বন করেন তারা।
আপন দেশ/এমএমজেড
মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।