ফাইল ছবি: গুরপতওয়ান্ত সিং পান্নু
যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাটর্নি জেনারেল দফতর দেশটির নাগরিক ও শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা গুরপতওয়ান্ত সিং পান্নুকে হত্যার ষড়যন্ত্রের বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করেছে। ওই ষড়যন্ত্রে এক ভারতীয়কে গ্রেফতারর করা হয়েছে। একইসঙ্গে বিস্তারিতভাবে জানানো হয়েছে, কীভাবে ভারতের এক সরকারী কর্মকর্তা ষড়যন্ত্রে জড়িত ছিলেন। খবর বিবিসির।
যে মার্কিন নাগরিককে হত্যার পরিকল্পনা করা হচ্ছিল বলে অ্যাটর্নি জেনারেলের দফতর জানাচ্ছে, সেই গুরপতওয়ান্ত সিং পান্নু ২০২০ সাল থেকে ভারত সরকার দ্বারা ঘোষিত সন্ত্রাসী। তিনি একটি শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনের আইনি পরামর্শদাতা। ওই সংগঠনটির এক নেতা হরদীপ সিং নিজ্জারকে জুন মাসে কানাডায় হত্যা করা হয়।
মাস দুয়েক আগে কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো অভিযোগ তুলে বলেছিলেন, ভারতীয় সরকারের এজেন্টরা তার দেশের এক নাগরিকের হত্যায় জড়িত। এর যথেষ্ট তথ্য প্রমাণ তাদের কাছে আছে।
কানাডার অভিযোগ ভারত উড়িয়ে দিয়েছিল। কিন্তু এবার যুক্তরাষ্ট্র একই ধরনের অভিযোগ তোলা হলেও ভারতের সরকারি প্রতিক্রিয়া একেবারেই ভিন্ন। নিখিল গুপ্তার নাম সামনে এলেও মার্কিন অ্যাটর্নি জেনারেলের দফতর অভিযুক্ত ভারতীয় কর্মকর্তার নাম প্রকাশ করেনি।
অভিযোগপত্রে বিস্তারিত লেখা হয়েছে - কবে, কীভাবে ওই সরকারি কর্মকর্তা এবং গ্রেফতারকৃত নিখিল গুপ্তার মধ্যে যোগাযোগ হয়েছিল।
অভিযোগপত্রে দাবি করা হয়েছে, মে মাসের প্রথম সপ্তাহে ভারতীয় কর্মকর্তা একটি 'এনক্রিপ্টেড অ্যাপের' মাধ্যমে নিখিল গুপ্তার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। গুপ্তাকে একটি ফৌজদারি মামলায় সহায়তা করার বিনিময়ে তিনি শিখ নেতা পান্নুকে হত্যা করার ব্যবস্থা করে দিতে রাজি হন।
ইলেকট্রনিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিখিল গুপ্তা এবং ওই ভারতীয় কর্মকর্তার মধ্যে ক্রমাগত কথোপকথন চলছিল। এ ছাড়া দিল্লিতেও দুজনের দেখা হয়।
অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, গুপ্তা এবং ওই ভারতীয় কর্মকর্তা যখন এনক্রিপ্টেড অ্যাপের মাধ্যমে ক্রমাগত যোগাযোগ রাখছিলেন, সে সময়ে গুপ্তা দিল্লি বা নিকটবর্তী এলাকায় ছিলেন। গত ১২ মে গুপ্তাকে বলা হয় যে তার বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা খতিয়ে দেখা হয়েছে। তাকে আরও বলা হয়েছিল, গুজরাট পুলিশ থেকে আর কেউ ফোন করবে না।
গুপ্তাকে ২৩ মে ভারতীয় কর্মকর্তা আবার আশ্বাস দিয়েছিলেন, তিনি তার বসের সঙ্গে কথা বলেছেন এবং গুজরাটের মামলাটি মিটে গেছে, কেউ আপনাকে আর ফোন করবে না। অভিযোগপত্রে দাবি করা হয়েছে, ভারতীয় কর্মকর্তা একজন উপ-নগরপালের সঙ্গে গুপ্তার বৈঠকের ব্যবস্থাও করেছিলেন।
অফিসারের কাছ থেকে ভরসা পাওয়ার পরেই গুপ্তা নিউ ইয়র্কে হত্যার পরিকল্পনা নিয়ে এগোতে শুরু করেন।
তিনি এই কাজের জন্য আমেরিকায় একজন ভাড়াটে খুনির সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন। সে ভাড়াটে খুনিকে বলা হয়েছিল, যে ব্যক্তিকে হত্যা করা হবে তিনি নিউ ইয়র্ক এবং আমেরিকার অন্য একটি শহরের মধ্যে আসা যাওয়া করেন। যে ভাড়াটে খুনির সঙ্গে নিখিল গুপ্তা যোগাযোগ করেছিলেন, তিনি আসলে একজন ছদ্মবেশী মার্কিন ফেডারেল এজেন্ট।
যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাটর্নি জেনারেল দফতর প্রকাশিত অভিযোগপত্রে দাবি করা হয়েছে, গুপ্তা নিউ ইয়র্কে হত্যা হয়ে যাওয়ার পরে ওই ছদ্মবেশী এজেন্টকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং কানাডায় আরও কাজ পাইয়ে দেওয়ার কথাও বলেছিলেন।
এদিকে গত ১৮ জুন কানাডায় হরদীপ সিং নিজ্জার হত্যাকাণ্ডের পর ১৯ জুন একটি নির্ভরযোগ্য মার্কিন গোয়েন্দা সূত্রটিকে গুপ্তা বলেন যে আমরা সবুজ সংকেত পেয়েছি, আপনি আজ বা আগামীকাল যে কোনও সময় কাজটি সেরে ফেলতে পারেন। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এই কাজটি শেষ করুন।
গুপ্তা গত ৩০ জুন ভারত থেকে চেক প্রজাতন্ত্রে গিয়েছিলেন, সেদিনই যুক্তরাষ্ট্রের অনুরোধে চেক পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। তার বিরুদ্ধে মাদক ও অস্ত্র পাচারের কারবারের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভারতকে এই বিষয়ে অবহিত করেছিল।
বৃহস্পতিবার (৩০ নভেম্বর) এক সংবাদ সম্মেলনে ভারতের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচী বলেন, আমেরিকা ওই ষড়যন্ত্রের যে অভিযোগ করেছে, তা খতিয়ে দেখতে ইতিমধ্যেই একটি উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটি কাজ শুরু করেছে।
আপন দেশ/এবি
মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।