Apan Desh | আপন দেশ

জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা খারিজ বৈধ: সুপ্রিম কোর্ট

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৮:৪৫, ১১ ডিসেম্বর ২০২৩

আপডেট: ১৮:৪৯, ১১ ডিসেম্বর ২০২৩

জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা খারিজ বৈধ: সুপ্রিম কোর্ট

সংগৃহীত ছবি

ভারত নিয়ন্ত্রিত জম্মু-কাশ্মিরের স্বায়ত্তশাসন সংক্রান্ত সাংবিধানিক বিশেষ মর্যাদা প্রত্যাহার সংক্রান্ত মামলায় দেশটির কেন্দ্রীয় সরকারের সিদ্ধান্তকে বৈধ ঘোষণা করেছে সুপ্রিম কোর্ট অব ইন্ডিয়া।

সোমবার (১১ ডিসেম্বর) সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন। আদালত জানায়, জম্মু ও কাশ্মীর ভারতের ভূখণ্ড থেকে আলাদা নয়, তাই তাদের কেন্দ্রীয় সংবিধান মেনেই রাজ্য পরিচালনা করতে হবে। খবর রয়াটর্সের।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সরকার ২০১৯ সালে সংবিধানের ৩৭০ ধারা অনুযায়ী জম্মু-কাশ্মীরকে যে বিশেষ মর্যাদা দেয়া হয়েছিল তা বাতিল করে। পরে সরকারের এ সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে ভারতের সুপ্রিম কোর্টে এক ডজনের বেশি আবেদন করা হয়। 

এ ক্ষেত্রে সরকারপক্ষের দাবি, ১৯৫০ সালে সংবিধান প্রণয়নের সময় ৩৭০ অনুচ্ছেদে জম্মু-কাশ্মীরকে বিশেষ মর্যাদা দেয়া হলেও সেই মর্যাদা স্থায়ী ছিল না, বরং ছিল ‘অস্থায়ী সংস্থান’ (টেম্পোরারি প্রভিশন)। ওই অনুচ্ছেদের ৩ নম্বর উপধারায় বলা হয়, রাষ্ট্রপতি ইচ্ছে করলে ওই ‘বিশেষ মর্যাদা’ তুলে নিতে পারেন।
রাষ্ট্রপতির ওই ক্ষমতাকে ব্যবহার করেই ২০১৯ সালে ‘বিশেষ মর্যাদা’ প্রত্যাহার করে মোদি সরকার। অর্থাৎ নির্দেশনামায় রাষ্ট্রপতির সাক্ষর করার পর মুহূর্ত থেকেই রদ হয়ে যায় ৩৭০ ধারা। এ ধারার অধীনেই ৩৫(এ) ধারায় ভারতীয় ভূখণ্ডে থেকেও জম্মু ও কাশ্মীরের বাসিন্দারা যে বিশেষ সুযোগ-সুবিধা ভোগ করত, খারিজ হয়ে যায় তা-ও।

অন্যদিকে ৩৭০ ধারার বৈধতাকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে দায়ের করা মামলার আবেদনকারী পক্ষের যুক্তি, জওয়াহেরলাল নেহরুর জামানায় সংবিধান সংশোধন সম্পর্কিত অংশ ১২ বলছে—কেবল ‘কনস্টিটিউয়েন্ট অ্যাসেম্বলি’ (পরে রাজ্য সরকার) সম্মত হলে তবেই সংবিধানের কোনো ধারার সংশোধন জম্মু ও কাশ্মীরে প্রযোজ্য। অর্থাৎ কোনো সংশোধন জম্মু ও কাশ্মীরে প্রযোজ্য হতে হলে ৩৭০(১) ধারা মতে রাজ্য সরকারের সম্মতিতে রাষ্ট্রপতির আদেশ জারি প্রয়োজন।

নির্বাচন সংক্রান্ত অংশ ১৫ বলছে—রাজ্য বিধানসভার নির্বাচন রাজ্যের নিজস্ব আইনে পরিচালিত বা নিয়ন্ত্রিত হবে। ফলে ৩৭০ ধারা বাতিল করতে হলে সংবিধানসভা বা বিধানসভার সম্মতি প্রয়োজন।

কিন্তু মোদি সরকারের আমলে ৩৭০ বাতিলের আগে জম্মু ও কাশ্মীরে বিধানসভা ভেঙে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করা হয়েছিল। রাষ্ট্রপতি শাসনে রাজ্যপালকে কোনো অবস্থাতেই ‘স্থানীয় সরকার’ বলা যায় না বলে আবেদনকারী পক্ষের দাবি। 
তাদের মতে, রাজ্যপাল জনপ্রতিনিধিত্বের প্রতীক নন, এ ক্ষেত্রে ৩৭০ এবং ৩৫(এ) ধারা বাতিলের ঘটনা সাংবিধানিকভাবে বেআইনি।   

প্রায় সাড়ে চার বছর পর সোমবার এসব আবেদনের শুনানি শেষে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ সরকারের সিদ্ধান্ত বৈধ ছিল বলে সর্বসম্মতভাবে রায় ঘোষণা করেন। 

মামলার রায়ে জম্মু-কাশ্মিরের বিশেষ মর্যাদা বাতিলের যে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছিল ভারতের সুপ্রিম কোর্ট তা বৈধ ঘোষণা করেছেন। একই সঙ্গে আগামী বছরের ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে সেখানে রাজ্য বিধানসভার নির্বাচন অনুষ্ঠানের নির্দেশ দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্ট। বেঞ্চের অন্য বিচারপতিরা হলেন- সঞ্জয় কিষাণ কল, সঞ্জীব খান্না, বি আর গাভাই ও সূর্য কান্ত।

প্রসংগত, ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন থেকে মুক্ত হওয়ার পর ১৯৪৭ সালে ভারত ও পাকিস্তান দুটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। স্বাধীনতা লাভের পর থেকে ৭৫ বছরের বেশি সময় ধরে ভারতের একমাত্র মুসলিম-সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চল জম্মু ও কাশ্মির বিশেষ মর্যাদা ভোগ করে আসছিলো। ভারতীয় সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী এ রাজ্যটি বিশেষ মর্যাদা পেত। অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাজ্যটিকে বিশেষ ধরণের স্বায়ত্বশাসন ভোগ করার অধিকার দেয়, যা রাজ্যটিকে নিজস্ব সংবিধান, আলাদা পতাকা এবং আইন তৈরি করার অনুমোদন দেয়।

পররাষ্ট্র, প্রতিরক্ষা এবং যোগাযোগ বিষয়ক ব্যাপারের নিয়ন্ত্রণ থাকে কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে।

২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসে এ বিশেষ মর্যাদা বাতিল করে মোদি সরকার। ১ কোটি ২০ লাখ জনসংখ্যা অধুষ্যিত এই এলাকায় এরপর জম্মু ও কাশ্মির নামে দুটি আলাদা প্রশাসনিক অঞ্চল গঠন করা হয়।

সুপ্রিম কোর্ট জানায়, এই অঞ্চলে ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরের মধ্যে নির্বাচন আয়োজন করতে হবে। পাঁচ বিচারকের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চের রায়ে বলা হয়, যতদ্রুত সম্ভব একে সাধারণ রাজ্যে গঠন করতে হবে। প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড় বলেন, জম্মু-কাশ্মীর অন্যান্য রাজ্যের চেয়ে আলাদা নয়।

সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি আরও জানান, ভারতের প্রতিটি রাজ্যের হাতেই আইনি এবং প্রশাসনিক ক্ষমতা আছে। বিভিন্ন রাজ্যের জন্য যে বিশেষ ব্যবস্থা আছে, তা সংবিধানের ৩৭১ ধারার 'এ' অনুচ্ছেদ থেকে 'জে' অনুচ্ছেদ থেকেই বোঝা যায়। যা সামঞ্জস্যহীন যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর উদাহরণ। তাই জম্মু ও কাশ্মিরের কোনও অভ্যন্তরীণ সার্বভৌমত্ব নেই। অর্থাৎ ভারতের অন্যান্য রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের মতোই হল জম্মু ও কাশ্মির।

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের মতে, ৩৭০ ধারা হল সংবিধানের অস্থায়ী বিধান।' যা অভ্যন্তরীণ কারণে কার্যকর করা হয়েছিল। যুদ্ধের মতো যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল, সেটার জন্যই ওই ধারা কার্যকর করা হয়েছিল জম্মু ও কাশ্মীরে। সেজন্যই সংবিধানের ২১ ধারার আওতায় বিষয়টি রাখা হয়েছে।

আজ সোমবার সকাল থেকেই কাশ্মিরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। কাশ্মিরে পুলিশ মহাপরিদর্শক ভিকে বিরডি বলেন, আমরা যেকোনো মূল্যে কাশ্মিরে শান্তি নিশ্চিতে বদ্ধ পরিকর।-সূত্র: রয়টার্স, এনডিটিভি

আপন দেশ/এবি

মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

সম্পর্কিত বিষয়:

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়