ছবি: সংগৃহীত
গাজার অবশিষ্ট ভবনগুলো মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিচ্ছে ইসরাইল। চারদিকে হাহাকার। কোথাও কিছু নেই। ডানে-বামে, এখানে ওখানে মরদেহ আর মরদেহ। মার্কেটের সামনে রাস্তার পাশে সামান্য গর্ত করে গণকবর দেয়া হচ্ছে। কোথাও মরদেহ পড়ে আছে বেশুমার। মানুষের রুদ্ধশ্বাস। সভ্য বিশ্বের সামনে কোনো বাধাহীনভাবে নির্দ্বিধায় গণহত্যায় মেতে উঠেছে নৃশংস ইসরায়েল সেনারা।
গত ২৪ ঘণ্টায় গাজায় কমপক্ষে ১০০ স্থাপনাকে টার্গেট করে বোমা হামলা চালিয়েছে ইসরাইল। এ সময়ে কমপক্ষে ২৪১ জন অসহায় ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন গাজায়। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাবে নিহতের এই সংখ্যা ৩৮২। ৭ই অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত এই গণহত্যায় তারা কমপক্ষে ২০ হাজার ৯১৫ জনকে শিকার করেছে। তারপরও ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু হামলা আরও জোরালো করার ঘোষণা দিয়েছেন। বলেছেন, গাজার দক্ষিণাঞ্চলে অপারেশন আরও তীব্র হবে।
আরও পড়ুন <<>> হামাসের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দিলো জাপান
এরই মধ্যে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ গাজাবাসীর জন্য অধিক ত্রাণ সরবরাহের প্রস্তাব পাস করলেও এই হামলায় মৃত্যুর মিছিল বড় হচ্ছে। প্রতিক্ষণ তাতে যোগ হচ্ছে নতুন নতুন নাম। মানুষ একটু খাদ্য, পানি, ওষুধ, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের জন্য হাহাকার করছে। এ অবস্থায় গাজায় ত্রাণ সমন্বয়ক হিসেবে সিগ্রিদ কাগ’কে নিয়োগ করেছেন জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরাঁ। কিন্তু যুদ্ধ তীব্র আকার ধারণ করায় গাজায় ত্রাণ তৎপরতা চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে। ইসরাইলের সেনাপ্রধান হারজি হ্যালেভি বলেছেন, গাজায় এই যুদ্ধ বহু মাস ধরে অব্যাহত থাকবে। অবশেষে চেতনা ফিরেছে ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের। তিনি তার জনগণের বিরুদ্ধে এই যুদ্ধকে গভীর এক অপরাধ হিসেবে অভিহিত করেছেন। বলেছেন, ফিলিস্তিনি জনগণের বিরুদ্ধে ইতিহাসে এটা এক অস্বাভাবিক যুদ্ধ। রামাল্লায় মিশরীয় একটি টেলিভিশন চ্যানেলকে তিনি যুদ্ধ শুরুর পর প্রথম সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। সেখানে এসব দাবি করেন। তিনি বলেন, গাজা ভূখণ্ডকে এখন আর দেখে চেনার উপায় নেই। এই যুদ্ধ যেকোনো সময় দখলিকৃত পশ্চিমতীরে ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে সতর্ক করেন তিনি। মাহমুদ আব্বাস বলেন, যুদ্ধবিরতিতে জাতিসংঘের একটি খসড়া প্রস্তাবে ভেটো দেয়ার মাধ্যমে এই যুদ্ধকে প্রলম্বিত করছে ওয়াশিংটন। অনলাইন বিবিসি লিখেছে, মঙ্গলবার কমপক্ষে ১০০ স্থানে হামলা করেছে ইসরাইল। গাজা উপত্যকাজুড়ে এদিন বিকট বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। বুধবার খুব ভোরেও তা অব্যাহত ছিল।
আরও পড়ুন <<>> জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে ‘গাজা প্রস্তাব’ পাস
সংবাদ সম্মেলনে ইসরাইল ডিফেন্স ফোর্সেসের (আইডিএফ) প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল হ্যালেভি বলেছেন, ইসরাইলের অর্জন দীর্ঘস্থায়ী হয় এটা নিশ্চিত করতে এই লড়াই বহু মাস পর্যন্ত স্থায়ী হবে। তিনি নিজেদের অধিকার আদায়ের জন্য লড়াইরত হামাসকে সন্ত্রাসী সংগঠন আখ্যায়িত করে তাদের নেটওয়ার্ককে পুরোপুরি ভেঙে দেয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। বলেন, এক্ষেত্রে কোনো ম্যাজিক সমাধান নেই। সময় লাগলেও তিনি হামাসের নেতাদের নির্মূল বা গ্রেফতারের প্রত্যয় ঘোষণা করেন। দাবি করেন, গাজার উত্তরাঞ্চলে হামাসের ব্যাটালিয়নের পুরোটাই ধ্বংস করে দেয়ার কাছাকাছি আইডিএফ। ইসরাইল এবং আরব মিডিয়া বলছে, একটি যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব করেছে মিশর। রিপোর্ট অনুযায়ী, এই পরিকল্পনায় ইসরাইলি সব জিম্মিকে মুক্তি দেয়ার কথা বলা হয়েছে। একই সঙ্গে ইসরাইলের জেলে আটক অজ্ঞাত সংখ্যক ফিলিস্তিনি বন্দির মুক্তি দাবি করা হয়েছে।
আপন দেশ/এবি
মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।