ফাইল ছবি
যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসে অনুমোদন না মেলায় ইউক্রেনে মার্কিন সামরিক সহায়তা বন্ধ হয়ে গেছে। তবে আগামীতে যুক্তরাষ্ট্রের পার্লামেন্ট অবস্থান পাল্টালে আবারো তা শুরু হতে পারে।
বৃহস্পতিবার (১১ জানুয়ারি) হোয়াইট হাউসে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্টের জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়ক উপদেষ্টা জন কিরবি।
তিনি বলেন, আমরা সহায়তা প্যাকেজ সংক্রান্ত সর্বশেষ যে বিলটি কংগ্রেসে পাঠিয়েছিলাম, তা অনুমোদিত হয়নি। এ জন্য আপাতত ইউক্রেনে আমাদের সামরিক সহায়তা স্থগিত রয়েছে। কংগ্রেস যদি ভবিষ্যতে অবস্থান পরিবর্তন করে তবে তা শুরু হবে।
মিত্র দেশগুলো সামরিক সহায়তা পাঠাতে ১০ হাজার কোটি ডলার চেয়ে কংগ্রেসে গত ডিসেম্বরে একটি বিল পাঠায় বাইডেন প্রশাসন। বিলটির মধ্যে ইউক্রেনের জন্য বরাদ্দ ছিল ছয় হাজার কোটি ডলার। কিন্তু সেই বিলটি আটকে দিয়েছে কংগ্রেস।
সমরাস্ত্র উৎপাদন ও পরিবহনে জটিলতার কারণে কিয়েভকে সহায়তা দিতে পারছে না ইউরোপীয় মিত্র দেশগুলোও।
তবে ইউক্রেনকে বড় অঙ্কের সামরিক সহায়তা দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক। এক প্রতিবেদনে বার্তাসংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ শুরুর পর থেকেই ইউক্রেনকে অকুণ্ঠ সমর্থন দিয়ে আসছে যুক্তরাজ্য।
এর আগে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, আগামী অর্থবছরে যুক্তরাজ্য তাদের সহায়তা বাড়িয়ে দুই দশমিক পাঁচ বিলিয়ন পাউন্ড বা তিন দশমিক ১৯ ডলার করবে; যা গত বছরের চেয়ে ২০০ মিলিয়ন পাউন্ড বেশি।
ব্রিটেন জানিয়েছে, অন্যান্য যেকোনো দেশের চেয়ে ইউক্রেনকে সবচেয়ে বেশি ড্রোন দেবে তারা। যেগুলোর বেশিরভাগই ব্রিটেনে উৎপাদিত।
এক বিবৃতিতে ব্রিটিশ সরকার জানিয়েছে, ইউক্রেনের প্রতিরক্ষার জন্য দেশটিকে আরও বেশি ড্রোন দেয়ার জন্য ব্রিটিশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সঙ্গে কাজ করবে।
ঋষি সুনাকের কার্যালয় বলেছে, ইউক্রেনকে দ্বিপাক্ষিক নিরাপত্তার আশ্বাস প্রদানের জন্য সাতটি দেশের গ্রুপের একটি চুক্তির পর যুক্তরাজ্য ও ইউক্রেন নিরাপত্তা সহযোগিতা সংক্রান্ত চুক্তিতে স্বাক্ষর করবে।
প্রসঙ্গত, ২০১৫ সালে রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে স্বাক্ষরিত মিনস্ক চুক্তির শর্ত অনুযায়ী ক্রিমিয়াকে রুশ ভূখণ্ড হিসেবে স্বীকৃতি না দেয়া এবং যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট ন্যাটোর সদস্যপদের জন্য ইউক্রেনের তদবিরের জেরে কয়েক বছর ধরে টানাপোড়ন চলার পর ২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে সামরিক অভিযান চালাতে রুশ বাহিনীকে নির্দেশ দেন পুতিন।
যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং ন্যাটোর অস্ত্র ও অর্থ সহায়তায় যুদ্ধের শুরুর দিকে সুবিধাজনক অবস্থায় থাকলেও বর্তমানে বেশ চাপে রয়েছে ইউক্রেন। ইতোমধ্যে দেশটির প্রায় এক চতুর্থাংশ ভূখণ্ড রাশিয়ার দখলে চলে গেছে।
আরও পড়ুন <> জ্বালানি তেলে দুঃসংবাদ
এই যুদ্ধে ইউক্রেনকে সবচেয়ে বেশি সহায়তা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। যুদ্ধের শুরু থেকে এ পর্যন্ত ইউক্রেনে এক হাজার কোটি ডলারেরও বেশি অস্ত্র ও অর্থ সহায়তা পাঠিয়েছে বাইডেন প্রশাসন।
কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভসে বর্তমানে বিরোধী দল রিপাবলিকান পার্টি সংখ্যাগরিষ্ঠ। যুদ্ধের প্রথম দিকে দলটির সহায়তা প্রদানে আপত্তি না জানালেও গত বছর থেকে তারা আপত্তি জানাতে শুরু করেন।
সম্প্রতি হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভসের স্পিকার মাইক জনসন মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিবিএসকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের লক্ষ্য কী এবং এই যুদ্ধ থেকে আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে যুক্তরাষ্ট্র কীভাবে লাভবান হতে পারে— এসব ইস্যুতে যদি বাইডেন প্রশাসন সুনির্দিষ্টভাবে ব্যাখ্যা না দেয়, তাহলে ইউক্রেনে অর্থ সহায়তা সংক্রান্ত কোনো বিল আর অনুমোদন করবে না মার্কিন পার্লামেন্ট কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভস।
এদিকে, গত বছরের মাঝামাঝি সময় থেকে অস্ত্র ও গোলাবারুদের সংকটে ভুগছে ইউক্রেন। এ সংকটের কারণে তাদের সামরিক অপারেশনও কাটছাঁট করতে হচ্ছে।
আপন দেশ/এমআর
মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।