Apan Desh | আপন দেশ

মসজিদ ভেঙে মন্দির উদ্বোধন, যাননি যারা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশিত: ২১:২৭, ২২ জানুয়ারি ২০২৪

মসজিদ ভেঙে মন্দির উদ্বোধন, যাননি যারা

ফাইল ছবি

বাবরি মসজিদ ভেঙে গড়ে তোলা হলো রাম মন্দির। বিতর্কিত এই মন্দির উদ্বোধন করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। জমকালো আয়োজন। তবে তার এই কর্মের সঙ্গে তাল মেলায়নি খোদ সনাতন ধর্মের অনেকেই। যারা বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, তারকাসহ সাধকরা।

দেশটির বোদ্ধারা বলছে, আগামী কংগ্রেস নির্বাচনে ভোট টানতে রাম মন্দিরকে সামনে আনবে বিজেপি। তবে মুসলিম ভোটারদের সমর্থন পেতে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা অনুষ্ঠান বর্জনের কৌশল নিয়েছে।

৩১ বছর আগে অযোধ্যা শহরে হিন্দু জনতারা ধ্বংস করে বাবরি মসজিদ। সেখানেই নির্মাণ করা হয় রাম মন্দির। সোমবার (২২ জানুয়ারি) উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ঘিরে জমকালো আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে যোগদানের জন্য আমন্ত্রণ পান দেশ-বিদেশের হাজারও অতিথি। অংশ নেন আট হাজার মানুষ।

গেলেন না মমতা

আমন্ত্রণ পেয়েও অনুষ্ঠানে যোগ দেননি পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। বরং কলকাতায় সংহতি মিছিলের আয়োজন করেন। যোগ দেন হিন্দু, মুসলিম, শিখ, বৌদ্ধ, পারসি, ইহুদি ধর্মের প্রতিনিধিরা।

বিতর্কিত এই মন্দিরের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হলেও বিরোধী দলের নেতা-মন্ত্রীরা যাননি। অনেকেই নিমন্ত্রণ রক্ষা করতে পারবেন না বলে আগেই জানিয়েছিলেন। আবার অনেকেই প্রধানমন্ত্রী মোদির বিরুদ্ধে রাজনৈতিক স্বার্থে মেরুকরণের অভিযোগ তোলেন। তারা বলছেন, আগামী কয়েক মাসের মধ্যে ভারতে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। তাই ক্ষমতাসীন বিজেপি এমন একটি দেশে এই মন্দিরের নামে ভোট চাইবে, যেখানে মোট জনসংখ্যার ৮০ শতাংশ হিন্দু।

হিন্দুস্তান টাইমস জানিয়েছে, রামমন্দিরের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত ছিলেন কংগ্রেস নেতারা। তবে সেই অনুষ্ঠানে যাননি সোনিয়া গান্ধী, রাহুল গান্ধী, মল্লিকার্জুন খাড়গেরা। এদিন ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রার নেতৃত্ব দিতে আসামে রয়েছেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী। সেখানেই একটি মন্দিরে ঢুকতে গিয়ে পুলিশি বাধার মুখে পড়েন তিনি। মোদিকে ইঙ্গিত করে কটাক্ষের সুরে রাহুল বলেন, আজ মনে হয় একজনই মন্দিরে প্রবেশ করতে পারবেন।

আরও পড়ুন>> ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দিতে হবে: গুতেরেস

বিবিসি বাংলা জানিয়েছে, রামমন্দিরের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে না যাওয়ার তালিকায় রয়েছেন সমাজবাদী পার্টির অখিলেশ যাদব। তিনি আগেই জানিয়েছিলেন ২২ জানুয়ারি তার পক্ষে অযোধ্যায় যাওয়া সম্ভব নয়, পরে অন্য কোনো সময় তিনি মন্দিরে যাবেন। যাদব বলেন, আমি আগেই বলেছি, রামমন্দিরে যাওয়ার জন্য কোনো নির্দিষ্ট দিনের প্রয়োজন নেই। হৃদয়ে রয়েছেন রাম।

মন্দির উদ্বোধন অনুষ্ঠান বর্জন করেছেন সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক ব্যানার্জি। নিজের এক্স হ্যান্ডলে লিখেছেন, ‘মন্দির, মসজিদ, গির্জা, গুরুদ্বার যা-ই হোক, ঘৃণা, হিংসা ও নিরীহ মানুষের লাশের ওপর তৈরি কোনো উপাসনাস্থল মেনে নিতে আমার ধর্ম আমায় শেখায়নি।’

অনুপস্থিত ‘তিন খান’ 

এদিকে বহু বিতর্কিত রাম মন্দিরের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যাননি বলিউডের জনপ্রিয় ‘তিন খান’। তারা হলেন- শাহরুখ খান, আমির খান ও সালমান খান। যদিও উদ্বোধনের দিন সকাল থেকেই রামমন্দির প্রাঙ্গণে তারকাদের ঢল নামে। বলিউডের তারকা থেকে শুরু করে দক্ষিণী সিনেমার অভিনেতারাও উপস্থিত ছিলেন। 

আরও পড়ুন>> ইরান-পাকিস্তানের সংঘাত যেসব কারণে

উপস্থিত ছিলেন অমিতাভ বচ্চন, অনুপম খের, রজনীকান্ত, আলিয়া ভাট, রণবীর কাপুর, ভিকি কৌশল, ক্যাটরিনা কাইফের মতো তারকারা। একদিন আগেই অযোধ্যায় পৌঁছে যান অভিনেত্রী কঙ্গনা রানাউত। এছাড়া সপরিবারে এসেছেন মুকেশ আম্বানী। 

তবে এত তারকার ভিড়ে কোথাও দেখা যায়নি বলিউডের তিন খানের। তাদের অনুপস্থিতি ভক্তদের নজর এড়ায়নি। এ নিয়ে শুরু হয়েছে জল্পনা। বলিউডপাড়ায় নানা কানাঘুষা চলছে, রাম মন্দিরের উদ্বোধনে তিন খান ডাক পাননি তাদের ধর্মের কারণে। মুসলিম বলেই নিমন্ত্রণ করা হয়নি তাদের। 

তবে তিন খান ইচ্ছা করেই যাননি নাকি তাদের নিমন্ত্রণ করা হয়নি, তা এখনো স্পষ্ট নয়। এ বিষয়ে প্রকাশ্যে মুখ খোলেননি তারা। 

রামমন্দির উদ্বোধনের দুদিন আগেই স্ত্রী-কন্যাকে নিয়ে শহর ছাড়েন শাহরুখ খান। এদিকে সালমান জানিয়েছেন, তিনি খুব কাজের চাপে রয়েছেন। আর আমির খান অবশ্য মৌনতা বজায় রেখেছেন। 

আরও পড়ুন>> গুচ্ছের ভর্তি পরীক্ষা শুরু ৮ মার্চ

উল্লেখ্য, মোগল সম্রাট বাবরের সেনাপতি মীর বাঁকি ১৫২৮ সালে অযোধ্যায় মসজিদ তৈরি করেন, যা পরবর্তী সময়ে বাবরি মসজিদ নামে পরিচিতি লাভ করে। মূলত বাবরি মসজিদের নামকরণ করা হয়েছিল মুঘল সম্রাট বাবরের নামানুসারে।

তবে হিন্দুদের দাবি, রাম জন্মভূমিতে ‘রামের মন্দির ভেঙে’ মসজিদটি তৈরি করা হয়েছে। ১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর করসেবকদের হামলায় মসজিদটি ধ্বংস হয়। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ভারতজুড়ে দাঙ্গা দেখা দেয়। তাতে দুই হাজার মানুষ নিহত হন, যাদের বেশির ভাগই সংখ্যালঘু মুসলমান।

১৯৯২ সালে বাবরি মসজিদ ধ্বংসের পরে ভূমির মালিকানা নিয়ে দীর্ঘ আইনি লড়াই চলেছে। অবশেষে ২০১৯ সালে দেশটির সুপ্রিম কোর্ট বিতর্কিত ওই জমির মালিকানা হিন্দুদের প্রদান করেন এবং মসজিদ নির্মাণের জন্য মুসলিমদেরকে শহরের বাইরে একটি জমি দেয়া হয়।

আপন দেশ/এসএমএ

মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

সম্পর্কিত বিষয়:

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়