Apan Desh | আপন দেশ

স্ট্যালিনকে ছাড়িয়ে যাবেন পুতিন

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশিত: ২৩:৫৯, ১৮ মার্চ ২০২৪

স্ট্যালিনকে ছাড়িয়ে যাবেন পুতিন

ভ্লাদিমির পুতিন ও জোসেফ স্ট্যালিন, ছবি: সংগৃহীত

আবারো রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট হওয়ার পথে বিশাল জয় পেয়েছেন ভ্লাদিমির পুতিন। টানা তিন দিনের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন শেষে তিনি রেকর্ড সংখ্যক ভোট পেয়েছেন। রোববার  (১৭ মার্চ) প্রাথমিক ফলাফলের তথ্যে দেখা যায়, পুতিন প্রায় ৮৮ শতাংশ ভোট পেয়েছেন। খবর রয়টার্সের।

বার্তা সংস্থাটির প্রতিবেদনে বলা হয়, সোভিয়েত ইউনিয়ন পরবর্তী যুগে এটি রেকর্ড। এতে করে ৭১ বছর বয়সী রাশিয়ার এই নেতার পঞ্চমবারের মতো আরও ছয় বছর ক্ষমতায় থাকা পাকাপোক্ত হল। ১৯৯৯ সাল থেকে তিনি ক্ষমতায় রয়েছেন। এবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ী হওয়ায় ২০৩০ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকছেন তিনি।

এদিকে গত ২০০ বছরের মধ্যে পুতিন রাশিয়ার সবচেয়ে বেশি সময় ক্ষমতায় থাকা নেতা হতে যাচ্ছেন। এরমধ্যে দিয়ে জোসেফ স্ট্যালিনকেও ছাড়িয়ে যাবেন।

নির্বাচন পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্র নিয়ে কটাক্ষ করেন পুতিন। এ ছাড়া তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের সম্ভাব্য ক্ষণ নিয়ে কথা বলেন তিনি। তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রচ্ছন্ন হুমকির কথা আসে তার বক্তব্যে। 

এবার তার প্রতিদ্বন্দ্বীরা পরিচিত মুখ না হওয়ায় তারা ভোটের লড়াইয়ে ভালো করতে পারবেন না তা আগে থেকেই অনুমিত ছিল। ভোটের দিন দেশটির বিভিন্ন অংশে পুতিনবিরোধী বিক্ষোভের মধ্যেও তার অন্য তিন প্রতিযোগীর কারো ভোটের হার দুই অঙ্কের কোটায় পৌঁছেনি। তারা কেউ চার শতাংশের বেশি ভোট পাননি। 

গত শুক্রবার শুরু হওয়া ভোটের প্রাথমিক ফলাফল রোববার প্রকাশ করা হয়। বুথ ফেরত সমীক্ষার বরাতেও পুতিন বিপুল ভোটে বিজয়ী হবেন বলে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছিল। 

পরে প্রাথমিক ফলাফলে দেখা যায়, প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ৩০ শতাংশ ভোট পড়েছে। এর মধ্যে পুতিন ৮৭ দশমিক আট শতাংশ ভোট পেয়ে নিরঙ্কুশভাবে বিজয়ী হন। 

বিবিসি লিখেছে, যখন রাশিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত টিভি প্রাথমিক ফলাফল ঘোষণা করে তখন পুতিনের বিজয় কোনো বিস্ময় হয়ে আসেনি।

ভোটের শেষ দিনের পুতিনবিরোধী বিক্ষোভে ঠিক কত মানুষ উপস্থিত হয়েছিল তা ধারণা করতে পারেনি বার্তা সংস্থা রয়টার্স। কারাগারে আলেক্সি নাভালনির রহস্যমৃত্যু নিয়ে সমালোচনার ঝড় এবং ইউক্রেন যুদ্ধে রুশ সেনা নিহতের তালিকা দীর্ঘ হওয়া নিয়ে দেশের ভেতরে দানা বাঁধতে থাকা ক্ষোভের মধ্যেও নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট পুতিনের জয় একরকম নিশ্চিতই ছিল। 

টানা দু’বারের বেশি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে দাঁড়ানোর জন্য ২০২১ সালেই আইন পরিবর্তন করেছিলেন পুতিন। নির্বাচনে বিপুল জয়ের পর পুতিন বলেছেন, অনেক পশ্চিমা দেশের চেয়ে রাশিয়ার গণতন্ত্র বেশি স্বচ্ছ। নির্বাচন প্রসঙ্গে পুতিন বলেন, এটি স্বচ্ছ, একেবারেই বস্তুনিষ্ঠ। এই নির্বাচন যুক্তরাষ্ট্রের মেইল-ইন ভোটের মতো নয়, সেখানে ১০ ডলার দিয়ে একটি ভোট কেনা যায়। 

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, পুতিন ইতোমধ্যে রাজধানী মস্কোতে বিজয়ভাষণ দিয়েছেন। পুতিন তার সমর্থকদের বলেন, ইউক্রেনে রাশিয়ার বিশেষ সামরিক অভিযান-সংশ্লিষ্ট বাকি কাজগুলোর সমাধানকে অগ্রাধিকার দেবেন তিনি। রাশিয়ার সামরিক বাহিনীকে তিনি শক্তিশালী করবেন।

পুতিন বলেন, সামনে অনেক কাজ আছে। কিন্তু রুশরা যখন ঐক্যবদ্ধ হয়, তখন যেই ভয় দেখাতে চায়, দমন করতে চায় না কেন, ইতিহাস বলে, কেউ সফল হয়নি। তারা এখন সফল হয়নি। ভবিষ্যতেও সফল হবে না।

রুশ প্রেসিডেন্ট সাংবাদিকদের সঙ্গেও কথা বলেছেন। পুতিন বলেন, তিনি রাশিয়ার এই নির্বাচনকে গণতান্ত্রিক বলে মনে করেন।

আরও পড়ুন <> ভ্লাদিমির পুতিন ফের রুশ প্রেসিডেন্ট

মার্কিন টিভি নেটওয়ার্ক এনবিসি পুতিনের কাছে জানতে চেয়েছিল, তার পুনর্নির্বাচিত হওয়া গণতান্ত্রিক কিনা। জবাব দিতে গিয়ে পুতিন যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক ও বিচারব্যবস্থার কড়া সমালোচনা করেন। পুতিন বলেন, (যুক্তরাষ্ট্রে) যা ঘটছে, তাতে সারা বিশ্ব হাসছে। এটি কেবল একটি বিপর্যয়, গণতন্ত্র নয়। পুতিন বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে একজন প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থীকে আক্রমণ করার জন্য প্রশাসন, বিচারব্যবস্থাসহ অন্যান্য বিষয়ের ব্যবহার করা কি গণতান্ত্রিক?

পুতিনের এই মন্তব্য স্পষ্টতই মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান পার্টির সম্ভাব্য প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পকে নিয়ে। তার বিরুদ্ধে এখন চারটি ফৌজদারি মামলা আছে।

নির্বাচন পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে পশ্চিমা বিশ্বের প্রতিও সতর্কবার্তা উচ্চারণ করেন রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন। তিনি বলেন, রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোর মধ্যে সরাসরি সংঘর্ষের মানে হবে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ থেকে মাত্র এক ধাপ দূরে অবস্থান করা। 

ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে ১৯৬২ সালের কিউবা ক্ষেপণাস্ত্র সংকটের পর থেকে পশ্চিমাদের সঙ্গে সবচেয়ে বড় টানাপড়েনে জড়িয়েছে রাশিয়া। যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন পশ্চিমের সঙ্গে মস্কোর সম্পর্ক তলানিতে ঠেকেছে। ২০২২ সালের এই যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর পুতিন প্রায়ই পারমাণবিক যুদ্ধের ঝুঁকি সম্পর্কে সতর্ক করেছেন। তবে তিনি এও বলেছেন, তিনি কখনোই ইউক্রেনে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের প্রয়োজন অনুভব করেননি।

নির্বাচনের ফলাফলের পরই সংবাদ সম্মেলনে আসেন পুতিন। সেখানে রয়টার্সের পক্ষ থেকে রাশিয়া ও ন্যাটোর মধ্যে যুদ্ধের ঝুঁকি ও সম্ভাবনা সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে পুতিন বলেন, আধুনিক বিশ্বে সব কিছুই সম্ভব। একটি বিষয় সবার কাছে পরিষ্কার, এমনটি হলে তা হবে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ থেকে মাত্র এক ধাপ দূরে অবস্থান করা। আমার মনে হয় না এমন বিষয়ে কেউ আগ্রহ দেখাবে।

আপন দেশ/এমআর

মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়