Apan Desh | আপন দেশ

জড়িত সবাইকে শাস্তি দেয়া হবে: পুতিন

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশিত: ২৩:৫৫, ২৩ মার্চ ২০২৪

জড়িত সবাইকে শাস্তি দেয়া হবে: পুতিন

ছবি : সংগৃহীত

রাশিয়ার রাজধানী মস্কোর উপশহর ক্রাসনোগর্স্কের এক সিটি হলে কনসার্টের আগে বন্দুকধারীরা হামলা চালায়। শুক্রবারের (২২ মার্চ) প্রাণঘাতী এ হামলার পর শরিবার (২৩ মার্চ) জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন, হামলায় জড়িত সবাইকে শাস্তি দেয়া হবে। এ ঘটনায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১৪৩ জনে দাঁড়িয়েছে। রাশিয়ার স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আহত হয়েছেন অন্তত ১২০ জন। 

হামলায় হতাহত হওয়ার ঘটনায় দায় স্বীকার করেছে ইসলামিক স্টেট (আইএস)। কিন্তু ইঙ্গিত পাওয়া গেছে, হামলাকারীদের সঙ্গে ইউক্রেনের যোগসাজেশ আছে। তবে ইউক্রেনের কর্মকর্তারা জোরালোভাবে এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে। এই হামলাকে বর্বরোচিত সন্ত্রাসী হামলা বলে অভিহিত কওে রোববার (২৪ মার্চ) একদিনের জাতীয় শোক ঘোষণা করা হয়েছে। এ ঘটনায় সন্দেহভাজন চার বন্দুকধারীসহ ১১ জনকে গ্রেফতার করেছে রাশিয়ার নিরাপত্তা বাহিনী। গত ২০ বছরের মধ্যে এটি রাশিয়ার সবচেয়ে মারাত্মক হামলা। 

এদিকে শনিবার টেলিভিশনে জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে পুতিন বলেন, ‘আমি আজ রক্তাক্ত। বর্বরোচিত সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিষয়ে আপনাদের সঙ্গে কথা বলছি...যার শিকার কয়েক ডজন নিরপরাধ মানুষ। শান্তিপূর্ণ মানুষ ছিল সবাই। আমি ২৪ মার্চকে জাতীয় শোকের দিন হিসেবে ঘোষণা করছি।’ পুতিন বলেন, ‘সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে যে চারজন অপরাধী মানুষকে গুলি করে হত্যা করেছে, তাদের সবাইকে আটক করা হয়েছে। তারা ইউক্রেনের দিকে যাচ্ছিল...। যারা সন্ত্রাসীদের পেছনে ছিল এবং যারা হামলার প্রস্তুতি নিয়েছে, তাদের সবাইকে আমরা চিহ্নিত করে শাস্তি দেবো।’

স্থানীয় সময় শুক্রবার সন্ধ্যায় মস্কোর ক্রোকাস সিটি হলে হামলার ঘটনা ঘটে। এ সময় বন্দুকধারীরা কনসার্ট হলে ঢুকে স্বয়ংক্রিয় রাইফেল দিয়ে ভিড়ের মধ্যে এলোপাতাড়ি গুলি চালায়। রুশ সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, হামলাকারীরা গুলির পাশাপাশি বিস্ফোরকও ব্যবহার করেছে। এতে ক্রোকাস সিটি হলে আগুন ধরে যায়। ধসে পড়েছে হলের ছাদ।

রাশিয়ার আইনপ্রণেতা আলেকসান্দার কাইনেস্তিন জানিয়েয়েছেন, হামলাকারীরা একটি রেনো গাড়িতে করে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়, পরে শুক্রবার রাতে মস্কো থেকে ৩৪০ কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিমে ব্রাইয়ানস্ক অঞ্চলে গাড়িটিকে দেখতে পায় পুলিশ। তাদের থামার সংকেত দিলে তা না মেনে এগিয়ে যায় তারা। গাড়ি নিয়ে তাদের পিছু ধাওয়া করে দুইজনকে আটক ও গ্রেফতার করে পুলিশ। আরো দুইজন পাশের বনে পালিয়ে যায়। ক্রেমলিনের ভাষ্য অনুযায়ী, পরে তাদেরও আটক করা হয়। কাইনেস্তিন জানান, গাড়িটিতে তাজিকিস্তানের কয়েকটি পাসপোর্ট, পিস্তল ও স্বয়ংক্রিয় রাইফেলের একটি ম্যাগাজিন পাওয়া গেছে।

এদিকে ইসলামিক স্টেটের আফগানিস্তান শাখা ইসলামিক স্টেট খোরসান (আইএসআএস-কে) হামলার দায় স্বীকার করেছে বলে তাদের বার্তা সংস্থা আমাকের টেলিগ্রাম পেজে জানানো হয়েছে, মার্কিন গোয়েন্দারা এমনটি নিশ্চিত করেছেন বলে রয়টার্সকে জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের এক কর্মকর্তা।
জানা যায়, সোভিয়েত আমলের রক সঙ্গীতের দল ‘পিকনিক’ মস্কোর শহরতলীর ছয় হাজার ২০০ আসনের ক্রোকাস সিটি হলে অনুষ্ঠান শুরু করার ঠিক আগে বন্দুকধারীরা সেখানে আগত দর্শকদের ওপর গুলিবর্ষণ শুরু করে। হলটি তখন কানায় কানায় ভরা ছিল।

যাচাই করা ভিডিওতে দেখা গেছে, সঙ্গীতানুষ্ঠান উপভোগ করতে আগত দর্শকরা তাদের আসন গ্রহণ করছেন, তখনই একের পর এক গুলির শব্দের মধ্যে তারা চিৎকার করে বের হওয়ার দরজার দিকে ছুটতে শুরু করেন। অন্য ভিডিওতে দেখা গেছে, কয়েক ব্যক্তি লোকজনের দলের ওপর গুলিবর্ষণ করছে। গুলিবিদ্ধ কিছু মানুষ জমে থাকা রক্তের মধ্যে নিথরভাবে পড়ে আছে।

আরও পড়ুন <> মস্কোতে হামলায় নিহত ১৪৩, আটক ১১

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রত্যক্ষদর্শী রয়টার্সকে বলেছেন, হঠাৎ আমাদের পেছনে বিকট শব্দ হতে লাগলো- গুলির শব্দ। একটানা গুলির শব্দ। হুড়োহুড়ি শুরু হয়ে গেল। সবাই এসকেলেটরের দিকে দৌড়ে যাচ্ছিল। সবাই চিৎকার করছিল আর দৌড়াচ্ছিল।

এদিকে মস্কোতে বড় কোনো জমায়েতে হামলা হতে পারে বলে রাশিয়াকে চলতি মাসের শুরুতে সতর্ক করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। এ তথ্য জানিয়েছেন হোয়াইট হাউস। হামলার কয়েক ঘণ্টা পরেই এ নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানায় হোয়াইট হাউস। 

যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের মুখপাত্র অ্যাদ্রেইন ওয়াটসন বলেন, এই মাসের শুরুর দিকে মার্কিন সরকারের কাছে মস্কোতে একটি পরিকল্পিত সন্ত্রাসী হামলার তথ্য ছিল। তবে যুক্তরাষ্ট্রের সেই সতর্কবার্তাকে ‘মিথ্যা প্রচার’ বলে উড়িয়ে দেয় ক্রেমলিন। ওই সময় রাশিয়ায় থাকায় নাগরিকদের নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগ প্রকাশেরও পরও তাতে কান দেয়নি রাশিয়া।

হামলার বদলা নেয়া হবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন রাশিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট এবং বর্তমানে দেশটির সর্বোচ্চ নিরাপত্তা সংস্থা রাশিয়ান সিকিউরিটি কাউন্সিলের উপ প্রধান দিমিত্রি মেদভেদেভ।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টেলিগ্রামে এক পোস্টে মেদভেদেভ বলেন, ‘সন্ত্রাসীরা শুধুমাত্র সন্ত্রাসের ভাষা বোঝে। যদি বলপ্রয়োগ করা না যায়, যদি সন্ত্রাসীদের হত্যা এবং তাদের পরিবার-স্বজনদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ না নেয়া হয়- তাহলে কোনো তদন্ত বা বিচার কাজে আসবে না। আমাদের সামনে আর কোনো উপায় নেই।’

২০০৪ সালে বেসলান স্কুলে হামলার ঘটনার পর থেকে এটিই রাশিয়ায় হওয়া সবচেয়ে প্রাণঘাতী হামলার ঘটনা।

আপন দেশ/এমআর

মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়