ইসরায়েলের মন্ত্রিসভার বৈঠক, ছবি: সংগৃহীত
ইরানের হামলার জবাব দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসরায়েল। সোমবার (১৫ এপ্রিল) বিকালে প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর নেতৃত্বে যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।
তীব্র বৈরি দুটি দেশ ইরান ও ইসরায়েল। তাদের বৈরিতা অনেকদিনের হলেও এই প্রথম গত শনিবার রাতে ইসরায়েলে ব্যাপক হামলা চালায় ইরান। এর মধ্য দিয়ে মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। বিশ্বনেতারা যুদ্ধ নয় শান্তির পক্ষে তাদের অবস্থান ব্যক্ত করছেন।
এর মাঝেই ইসরায়েলের প্রতিশোধ নেযার বার্তা এল। সপ্তাহান্তে ইসরায়েলে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র এবং ড্রোন হামলার প্রতিক্রিয়া জানাতে ২৪ ঘণ্টারও কম সময়ের মধ্যে সোমবার দ্বিতীয়বারের মতো যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভা তলব করেন নেতানিয়াহু। ওই সভাতেই সিদ্ধান্ত হয়, ইরানের ব্যাপক ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলার জবাব দেয়া হবে।
ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর চিফ অব স্টাফ হারজি হালেভি বলেছেন, তেল আবিব এর জবাব দেবে। যদিও তাদের পরবর্তী পদক্ষেপ সম্পর্কে তিনি কোনো বিবরণ দেননি। সোমবার, ইরানের হামলায় স্বল্প ক্ষতিগ্রস্ত নোভাটিম বিমান ঘাঁটিতে গিয়েছিলেন হালেভি।সেখানেই তিনি জোর দিয়ে বলেন, ইসরায়েলের ভূখণ্ডে এত বেশি সংখ্যক ক্ষেপণাস্ত্র, ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন নিক্ষেপের জবাব দেয়া হবে। জরুরি অবস্থা তুলে নিলেও, উচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করেছে ইসরায়েল।
এদিকে, ইরান আর কোনো উত্তেজনা চায় না বলে জানিয়েছেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির-আবদোল্লাহিয়ান। তবে ইসরায়েল জবাব দিতে চাইলে, ইরানও আরও জোরালো আঘাত হানলে, তারাও বসে থাকবে না বলে জানিয়েছেন তিনি।
অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স এজেন্সি বা সিআইএ’র সাবেক প্রধান ডেভিড পেট্রাউস বিবিসিকে বলেছেন, ইরানের বিরুদ্ধে পাল্টা হামলার মাধ্যমে বিশ্ব অর্থনীতিতে কোনো ঝুঁকি তৈরি হোক সেটি ওয়াশিংটন চায় না।
জেনারেল পেট্রাউস ইরাক ও আফগানিস্তানে আন্তর্জাতিক বাহিনীর কমান্ডের দায়িত্বে ছিলেন।তিনি মনে করেন, ইসরায়েলের ভূখণ্ডের ভেতরে ইরানের হামলা একটি ‘বড় ঘটনা’। ইসরায়েলের জন্য এর গুরুত্ব কতটা সেটি পশ্চিমা দেশগুলোকে অনুধাবন করতে হবে।
পেট্রাউস বলেন, ইসরায়েল সরকারের মধ্যে যে বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক চলছে সেটি হচ্ছে বড় ধরনের উত্তেজনা না বাড়িয়ে এই হামলার জবাব কীভাবে দেয়া যায়।
ইসরায়েলে বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু-র নেতৃত্বে এই মুহূর্তে যে সরকার ক্ষমতায় আছে, তাকে অনেকেই সে দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে ‘কট্টরপন্থী’ বা হার্ডলাইন সরকার বলে বর্ণনা করে থাকেন।
আরও পড়ুন <> ইসরায়েলে হামলার কারণ জাতিসংঘে জানাল ইরান
গত ৭ অক্টোবর দক্ষিণ ইসরায়েলে হামাসের চালানো অতর্কিত হামলার জবাব দিতে ইসরায়েল সময় নিয়েছিল মাত্র কয়েক ঘণ্টা।
তারপর ছ’মাসেরও বেশি সময় ধরে তারা একটানা গাজা ভূখণ্ডে তীব্র অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে, মনে হচ্ছে গাজাকে যেন তারা প্রায় মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিতে চাইছে।
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, ইরানের প্রতি পাল্টা জবাব দেবার জন্য ইসরায়েলের হাতে বেশকিছু পন্থা আছে। তবে নেতানিয়াহু সরকার কোন ধরনের পন্থা ব্যবহার করবেন সেটি বোঝা মুশকিল।
এদিকে বিশ্বনেতারা ইসরায়েলকে সংযত থাকার আহবান জানিয়েছেন। ইরানের হামলার পর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছেন।
তিনি বলেছেন, ইসরায়েলের নিরাপত্তার জন্য যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তবে যুক্তরাষ্ট্রের দিক থেকে এটিও জানানো হয়েছে যে ইসরায়েল যদি ইরানে পাল্টা হামলা চালায় তাহলে যুক্তরাষ্ট্র তাতে যোগ দেবে না।
ইরানের হামলার পরও, গাজায় অভিযান অব্যাহত রেখেছে ইসরায়েল।
আপন দেশ/এমআর
মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।