ছবি: বিবিসি
গাজায় প্রতিনিয়ত মৃতের সংখ্যা বাড়ছে। এখনো ১৩ হাজারের বেশি মানুষের কোন সন্ধান নেই, নিখোঁজ। তাদের অনেকে হয়তো এখনো ধ্বংসস্তুপের নিচে চাপা পড়ে আছে। কিন্তু অনেক মানবাধিকার সংস্থা বলছে বাকি অনেকেই সম্ভবত ‘গুমের’ শিকার হয়েছেন।
আহমেদ আবু ডিউক তার ভাই মুস্তাফাকে খুঁজে বেড়াচ্ছেন মাসের পর মাস ধরে। যুদ্ধের কারণে শরণার্থী হওয়া এ পরিবারটি এখন খান ইউনিসের দক্ষিণে নাসের হাসপাতালের সামনের উঠানে আশ্রয় নেয়। কিন্তু তারা যখন জানতে পারে যে, কাছেই তাদের ঘর আগুনে পুড়ে গিয়েছে, তখন সেটার অবস্থা জানতে ওখানে যান মুস্তাফা। এরপর তিনি আর কখনোই ফিরে আসেননি।
আহমেদ বলছিলেন, ‘আমরা যতটা পারি খুঁজেছি। আশেপাশের সব বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেয়া হয়েছে। অনেক উঁচু উঁচু ভবন মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেয়া হয়েছে।’
অবসরপ্রাপ্ত অ্যাম্বুলেন্সের চালক মুস্তাফার খোঁজ চালাতে থাকে পরিবার। আহমেদ বলেন, ‘আমাদের এখনো আশা যে হাসপাতালে প্রতিনিয়ত যেসব অ্যাম্বুলেন্স আসছে, তার কোন একটাতে আমরা তাকে খুঁজে পাব।’
আরও পড়ুন>> গাজায় ইসারায়েলের হামলায় নিহত ৫০
হামাস নিয়ন্ত্রিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, এখন পর্যন্ত এ যুদ্ধে যে পরিমাণ মানুষ মারা গিয়েছে, তা ৩৫ হাজারের বেশি। কিন্তু সংখ্যাটা শুধুমাত্র হাসপাতাল থেকে যে মৃতের সংখ্যা জানা গিয়েছে তার উপর ভিত্তি করে। মুস্তাফাদের মতো এমন অনেক পরিবার আছে, যারা আসলে জানে না গত সাত মাসে নিখোঁজ হওয়া তাদের প্রিয়জনেরা কোথায় আছে, কেমন আছে।
গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের সীমান্ত পেরিয়ে হামাসের অতর্কিত হামলায় ১২০০ ইসরায়েলি মারা যায়। বন্দি করা হয় ২৫২ জনকে। এর জবাবে ইসরায়েল এক সামরিক অভিযান শুরু করে।
জেনেভা ভিত্তিক একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠান ইউরো-মেড হিউম্যান রাইটস মনিটরের মতে, এ অভিযানে হাজার হাজার মানুষ মারা যাওয়ার পাশাপাশি ১৩ হাজারের উপর ফিলিস্তিনি নিখোঁজ হয়েছে। তাদের কোন সন্ধানই আর নেই। এ পরিসংখ্যানে কতজন হামাস যোদ্ধা ও কতজন সাধারণ নাগরিক আছে তা আলাদা করা নেই।
ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের নিরাপত্তা সংস্থার অংশ গাজার সিভিল ডিফেন্সের হিসেবে ১০ হাজার উপর মানুষ শুধু এসব ধ্বংস হওয়া ভবনের নিচে চাপা পড়ে আছে।
জাতিসংঘ হিসাব দিয়েছে গাজা উপত্যকাজুড়ে যে পরিমাণ ধ্বংসাবশেষ জমা হয়েছে, তার পরিমাণ হবে প্রায় ৩৭ মিলিয়ন টন। আর এর নিচে যেরকম শরীর চাপা পড়ে আছে তেমনি প্রায় আরও সাড়ে ৭ হাজার টন অবিস্ফোরিত গোলাবারুদ আছে, যা স্বেচ্ছাসেবক ও ত্রাণকর্মীদের জন্য আরেকটা ভয়াবহ হুমকি।
সিভিল ডিফেন্স বলছে, তারা তাদের কর্মী ও স্বেচ্ছাসেবকদের নিয়ে ধ্বংসস্তুপের নিচ থেকে চাপা পড়া শরীর উদ্ধারে কাজ করছেন। কিন্তু তাদের খুবই সাধারণ কিছু যন্ত্রপাতি আছে, যাতে প্রায়শই মৃতের শরীরে কাছে পৌঁছানোটা কঠিন হয়ে যায়।
এছাড়া আরেকটা শঙ্কাও আছে যে, শরীর যদি না ঢেকে নিচে ওভাবেই পঁচা অবস্থায় রাখা হয়, তাহলে সামনে গরম বাড়লে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার মারাত্মক অবনতি ঘটতে পারে।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের বিশ্বাস যাদের খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না তাদেরকে ইসরায়েল ডিফেন্স ফোর্স (আইডিএফ) অন্ধকারে আটক করে থাকতে পারে। যেটাকে তারা বর্ণনা করছে “গুম” হিসেবে।
ইউরো-মেড হিউম্যান রাইটস মনিটরের হিসেবে আইডিএফ পরিবারদের না জানিয়েই গাজার শত শত ফিলিস্তিনকে আটক করেছে। কিন্তু জেনেভা কনভেনশন, যেটাতে ইসরায়েলও স্বাক্ষর করেছে, সেখানে বলা আছে একটা দেশ যদি কোন বেসামরিক নাগরিককে আটক করে রাখে তাহলে তার পরিচয় ও তাকে কোথায় রাখা হয়েছে সেটা জানাতে হবে।
আপন দেশ/এসএমএ
মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।