ছবি: সংগৃহীত
নানা রকম প্রতিশ্রুতি, আশ্বাস, মোদি ম্যাজিক কিছুই যেন কাজে এলো না। ১৮তম লোকসভা নির্বাচনে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে নরেন্দ্র মোদির বিজেপি। ৪০০ আসনে জয়ের যে লক্ষ্য ছিল তার ধারে কাছেও ঘেঁষতে পারেনি ভারতের এ শক্তিশালী দল। এমনকি বিজেপি এককভাবে ৩০০ আসনও পার করতে পারেনি।
মঙ্গলবার (৪ জুন) মধ্যরাতে দেশটির নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত ফলাফলে দেখা গেছে, ৫৪২টি আসনের মধ্যে ২৪০টিতে জয় পেয়েছে নরেন্দ্র মোদীর ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)। আর ৯৯টি আসনে জয় পেয়েছে প্রধান বিরোধীদল ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল কংগ্রেস।
রামমন্দির নির্মাণ, ৩৭০ ধারা বিলুপ্তি, নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের (সিএএ) প্রতিশ্রুতি পূরণের দাবি নিয়ে মাঠে নেমেছিল বিজেপি। ‘এক দেশ এক ভোট’, অভিন্ন দেওয়ানি বিধি কার্যকরের অঙ্গীকার ছিল তাদের, ছিল ৪০০ আসন পার করার স্লোগান। কিন্তু লোকসভার ফলাফল জানিয়ে দিলো এ প্রথমবার সহযোগীদের সমর্থনের ওপর নির্ভর করেই সরকার গঠন করতে হবে বিজেপিকে। মাত্র সাড়ে ১১ মাস আগে গড়া বিরোধী জোট ‘পদ্মে’র নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতার পথ আটকে দিলো।
ভোটের ফলাফল অনুযায়ী, বিজেপি নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স এনডিএ জোটের মোট আসনসংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৮৬টি। অপর দিকে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইন্ডিয়া জোটের মোট আসনসংখ্যা হয়েছে ২০২টি।
বিরোধী দলনেতার পদের জন্য লোকসভায় ৫৫টি আসনে জেতা প্রয়োজন। কিন্তু ২০১৪ সালে ৪৪টি এবং ২০১৯ সালে ৫২টি আসনে জেতা কংগ্রেস সংসদীয় বিধি অনুযায়ী সেই মর্যাদা পায়নি। এবার সেই মর্যাদা পেতে চলেছে মল্লিকার্জুন খড়গে এবং রাহুল গান্ধীর দল।
২০১৯ সালের নির্বাচনে মাত্র ৯৪টি আসনে জিতেছিল কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন জোট। আর কংগ্রেস এককভাবে পেয়েছিল ৫২টি আসন। অর্থাৎ এবারের নির্বাচনে বিস্ময়কর উন্নতি হয়েছে ভারতের প্রাচীনতম এ রাজনৈতিক দলটির।
আরও পড়ুন>> রাহুলের কাছে ‘পরাজয় স্বীকার’ বিজেপি প্রার্থীর
সে বছরের নির্বাচনে বিজেপি এককভাবে ৩০৩ আসনে জয় পেয়েছিল। আর বিজেপির নেতৃত্বাধীন জোট এনডিএ ৩৫২ আসনে জয় পায়। সে সময় বিজেপির পক্ষে কাজ করেছিল মোদি ম্যাজিক এবং জাতীয়তাবাদী হাওয়া। কিন্তু এবার তার কোনো কিছুই কাজে আসেনি। এবার নির্বাচনে বিজেপি সবচেয়ে বেশি আসন পেলেও সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় আসন পায়নি। সে কারণে এনডিএ জোট শরিকদের ওপরই নির্ভর করতে হবে বিজেপিকে।
এনডিএ জোটের অন্যতম দুইটি দল হলো চন্দ্রবাবু নাইডুর টিডিপি ও নিতিশ কুমারের জনতা দল ইউনাইটেড। বিজেপির সংখ্যাগরিষ্ঠতায় যে ঘাটতি রয়েছে তা পূরণ করতে পারে তারা। ২০১৪ সালের পর প্রথম এ ধরনের পরিস্থিতি তৈরি হলো।
ভোটের ফলপ্রকাশের পর মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ‘জয় জগন্নাথ’ দিয়ে বক্তৃতা শুরু করেন নরেন্দ্র মোদি। ঘটনাক্রমে এবার ওড়িশায় বিপুল জয় পেয়েছে বিজেপি। দেশে তৃতীয় বার এনডিএ কেন্দ্রে সরকার গড়ার জাদুসংখ্যা পেরিয়ে যাওয়ার পর মোদির ৩৪ মিনিটের বক্তৃতায় একবারও ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনি শোনা গেল না।
রামমন্দিরের কথা বলেছেন তবে বিজেপি নয়, জোর দিলেন এনডিএ জোটের ওপর। তার ভাষণে বার বার শোনা গেল এনডিএর কথাই। জোট সরকারের ক্ষেত্রে অন্য দলগুলো বিজেপির ওপর চাপ বৃদ্ধি করতে পারে বলে মনে করছেন কেউ কেউ। ভোটের ফলাফল বলছে, দেশে মোদি সরকার থাকলেও প্রধানমন্ত্রীর প্রতি মানুষের ঢালাও সমর্থনে খানিকটা ভাটা পড়েছে।
আপন দেশ/এসএমএ
মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।