ছবি: সংগৃহীত
বিশ্বজুড়ে ইউরোপীয় পার্লামেন্টকে ইউরোপীয় জাতিসত্তার আয়না বলা হয়। ৭২০ আসনবিশিষ্ট এ পার্লামেন্ট নির্বাচনে ভোটারের সংখ্যা ৩৫০ মিলিয়ন। ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) দেশগুলোয় গত ৬ থেকে ৯ জুন চার দিন ধরে দশম ইউরোপীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।
জানা গেছে, নির্বাচনে কট্টর ডানপন্থি দলগুলো বড় সাফল্য পেয়েছে। দলগুলোর এ সাফল্য ইউরোপের ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক গতিপথে অনিশ্চয়তা যোগ করেছে। কেননা মহাদেশটিতে উদারপন্থি গণতন্ত্রের মধ্যে দক্ষিণপন্থি জোয়ারের প্রবল আশঙ্কা দেখা যাচ্ছে।
ব্রিটেনে ২০১৬ সালে অনুষ্ঠিত ব্রেক্সিট রেফারেন্ডামের পর ইইউর কিছু সদস্য হারানোর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। যদিও সে পরিস্থিতি এখন আর নেই।
তবে ইউরোপীয় নেতারা আসন্ন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনের দিকে তীক্ষ দৃষ্টি রেখে চলেছেন। সতর্কতার সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করছেন মার্কিন রাজনীতি। শুধু তাই নয়, মার্কিন নির্বাচন নিয়ে অনেকে বেশ উদ্বিগ্নও। এর কারণ, সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আবারো ক্ষমতায় এলে ওয়াশিংটনের সঙ্গে ইউরোপীয়দের অংশীদারিত্ব ‘নতুন দিকে মোড়’ নিতে পারে।
ধারণা করা হচ্ছে, যদি ডোনাল্ড ট্রাম্প আবার হোয়াইট হাউজে ফেরেন, তবে এখনকার চলমান অনেক ঘটনাই উল্টে যাবে। সেক্ষেত্রে আরও উগ্র দক্ষিণপন্থা ইউরোপ তৈরি হওয়ার আশঙ্কা আছে, যা আগে বিশ্ব কখনো দেখেনি।
এ অবস্থার মধ্যে ইউরোপীয় পার্লামেন্ট নির্বাচন জুন ৯ শেষ হয়েছে। এতে ইইউর ২১ দেশের ভোটাররা ভোট দেন। ইউরোপীয় পার্লামেন্টের সদস্য কোটা নির্ধারিত হয় দেশগুলোর লোকসংখ্যার অনুপাত অনুযায়ী। সদস্যরা পাঁচ বছরের জন্য নির্বাচিত হন।
সংবাদমাধ্যম বিবিসির তথ্যানুযায়ী, ৭২০ আসনের এ পার্লামেন্টে মধ্যপন্থি, উদার ও সমাজতান্ত্রিক দলগুলো মিলে সংখ্যাগরিষ্ঠতা ধরে রাখতে যাচ্ছে। কিন্তু বিশেষ করে ফ্রান্স, জার্মানি, অস্ট্রিয়ার নেতাদের জন্য এ নির্বাচনের ফলাফল একটা বড় ধাক্কা হয়ে এসেছে।
আরও পড়ুন>> ফ্রান্সের পার্লামেন্ট ভেঙে দিলেন ম্যাক্রোঁ
ফ্রান্সে ডানপন্থি মেরিন লে পেন প্রতিষ্ঠিত ন্যাশনাল র্যালি পেতে যাচ্ছে প্রায় ৩৩ শতাংশ ভোট। দেশটির প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর রেনেসাঁ পার্টি পেতে যাচ্ছে ১৫ শতাংশ ভোট। এ ফলাফল দেখে আগাম জাতীয় নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছেন ম্যাক্রোঁ। তিনি দেশটির পার্লামেন্ট বিলুপ্ত ঘোষণা করেছেন। এ পদক্ষেপকে ম্যাক্রোঁর জন্য একটি বড় রাজনৈতিক ঝুঁকি হিসেবে দেখা হচ্ছে।
যদিও ম্যাক্রোঁ বলেছেন, পার্লামেন্ট নির্বাচনের ফলাফল যাইহোক না কেন, তিনি পদত্যাগ করবেন না।
তার মতো জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎজের জন্যও এ নির্বাচন দুঃসংবাদ হয়ে এসেছে। নির্বাচনে তার সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টি সবচেয়ে বাজে ফল করেছে। অতি ডানপন্থি অলটারনেটিভ ফর জার্মানি (এএফডি) দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেছে।
অস্ট্রিয়ায় অতি ডানপন্থি ফ্রিডম পার্টি প্রায় ২৬ শতাংশ ভোট পেয়েছে। অন্যদিকে ক্ষমতাসীন রক্ষণশীল পিপলস পার্টি ২৪.৭ শতাংশ ভোট পেয়েছে। অবশ্য ভালো ফল করেছে ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনির ব্রাদার্স অব ইতালি।
ইউরোপীয় পার্লামেন্ট নির্বাচনে ডানপন্থিদের উত্থানকে উদ্বেগের কারণ হিসেবে দেখছেন বিশ্লেষকেরা।
ইউরোপের বিভিন্ন দেশের গত আড়াই বছরের জাতীয় নির্বাচনগুলোর নির্বাচনের ফলাফল আগে থেকে অনুমান করা অসম্ভব। ইউরোপীয় ঐক্য-সমর্থক, মধ্য ডানপন্থি, সামাজিক-গণতান্ত্রিক, উদারপন্থি ও পরিবেশবাদী সংখ্যাগরিষ্ঠতার ধারা প্রতিফলিত হচ্ছে নির্বাচনগুলোতে। এমন ধারাই অবশ্য ইউরোপীয় নেতাদের মনোবল বাড়াচ্ছে।
গরিব দেশগুলো ইউ নির্বাচন ও ইউভুক্ত দেশগুলোর জাতীয় নির্বাচন নিয়ে উদ্বিগ্ন থাকে। কারণ একটা বিষয়ে ইউরোপজুড়ে ডানপন্থি দলগুলো একমত। তারা অনিয়মিত অভিবাসী আর রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থীদের জায়গা দিতে চায় না। গরিব দেশগুলোর যেসব মানুষ ইউরোপে পাড়ি জমাতো ভাগ্যের পরিবর্তনের লক্ষ্যে, তাদের উপরও বিপর্যয় নেমে আসবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
আরও পড়ুন>> রাশিয়া নিয়ে পশ্চিমাদের নীলনকশা ফাঁস
তবে এসব মানুষের দায়িত্ব ভাগাভাগি করে নেয়ার ব্যাপারে ইউরোপীয়দের মধ্যে তীব্র মতপার্থক্য আছে। সেজন্য কোনো কারণে ভিন্ন পরিস্থিতিতে যদি ডানপন্থি দলগুলো ক্ষমতাসীন হয় তাহলে পরিস্থিতি পাল্টে যেতে পারে।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধ ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ইউরোপ থেকেই শুরু হয়েছিল। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন অনবরত আনবিক বোমা হামলার হুমকি দিয়ে চলেছেন। সেক্ষেত্রে আবার ইউরোপ মূখ্য ভূমিকা রাখতে পারে আরেকটি বিশ্ব যুদ্ধ বাধাতে। ইউক্রেনে ইতোমধ্যেই যুদ্ধের দামামা বাজছে। তাই সামনে এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে গোটা বিশ্ব।
আপন দেশ/এসএমএ
মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।
