Apan Desh | আপন দেশ

শান্তির খোঁজে স্বেচ্ছাকারাবরণ করছে শরণার্থীরা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশিত: ১২:৪৯, ২৭ জুলাই ২০২৪

শান্তির খোঁজে স্বেচ্ছাকারাবরণ করছে শরণার্থীরা

ছবি: সংগৃহীত

কয়েক সপ্তাহ ধরে গাজার দক্ষিণের শহর খান ইউনিসে ইসরায়েলি বাহিনী বোমাবর্ষণ করছে। তাদের হামলা থেকে কোনো স্থাপনাই নিরাপদ নেই। এমনকি শরণার্থীদের তাঁবুগুলোতেও হামলা হচ্ছে। এ ভয়ানক পরিস্থিতিতে আর কোনো মাথা গোঁজার ঠাঁই না পেয়ে পাশের একটি কারাগারে আশ্রয় নিয়েছেন শরণার্থীরা।

অথচ এ কারাগার শত শত ফিলিস্তিনি খুনি ও চোরদের আটক রাখার জন্য নির্মাণ করা হয়েছে। রক্ষণাবেক্ষণের কেউ অবশিষ্ট না থাকায় এটি এখন পরিত্যক্ত। বাইরের দেয়ালে হাজারো বুলেটে ছিদ্র ভবনটিতে শেষ ভরসা হিসেবে শরণার্থীরা দলে দলে প্রবেশ করছে।

ইয়াসমিন আল-দারদাসি নামে এক শরণার্থী রয়টার্সকে বলেন, দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর খান ইউনিসের দুর্দশা অবর্ণনাতীত। তিনি ও তার পরিবার অসংখ্য আহত ব্যক্তিদের ফেলে কারাগারটিতে এসেছেন। আহতদের অবস্থা এতই বেগতিক যে তাদের সাহায্য করার চেয়ে মৃত্যুর অপেক্ষায় ছেড়ে দিতে হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, ইসরায়েলি বোমা হামলা থেকে কোনো মতে প্রাণ বাঁচিয়ে তারা পরিত্যক্ত কারাগারটিতে আশ্রয় নিয়েছেন। এর আগে কয়েক দিন তারা একটি গাছের নিচে ছিলেন। বর্তমানে কারাগারের নামাজ কক্ষে তাদের ঠাঁই হয়েছে। তার ভাষ্য, অন্তত সূর্যের প্রখরতা থেকে বাঁচতে পারছি। অন্যরা এ সুযোগটুকুও পাচ্ছে না।

দারদাসির সঙ্গে তার স্বামীও আছেন। তিনি কিডনি ও ফুসফুসের সমস্যায় শয্যাশায়ী। কাঁদতে কাঁদতে তিনি বলেন, এ মানুষটি শেষ সময়ে লেপ-তোশক ছাড়াই মেঝেতে থাকছেন।

এ পরিবারটির আর কোনো আশ্রয়স্থল ছিল না। তাই এতটুকু পেয়ে তিনিসহ আশ্রয় নেয়া সবাই খুশি। কিন্তু প্রতিনিয়ত আতঙ্কে রাত কাটছে। তাদের ধারণা, খুব বেশি দিন তারা এখানে থাকতে পারবেন না। এর আগেই হয়তো ইসরায়েলি বিমান কারাগারটিতে বোমা ফেলবে। যারা বেঁচে থাকবেন তাদের অন্য কোথাও আরেকটি ছাদ খুঁজতে হবে।

ইসরায়েল বলেছে, তারা ফিলিস্তিনি জঙ্গিগোষ্ঠী হামাসের সঙ্গে যুদ্ধ করছে। এ সময় বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। অথচ বাস্তবে এর প্রমাণ মিলছে না।

কয়েক সপ্তাহ ধরে ইসরায়েল দক্ষিণাঞ্চলে হামলা জোরদার করেছে। ১৩ জুলাই আল-মাওয়াসি এলাকায় শরণার্থী শিবিরে বিমান হামলায় কমপক্ষে ৯০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, হামাসের সামরিক প্রধান মোহাম্মদ দেইফকে লক্ষ্য করে হামলা হয়েছে বলে ইসরায়েল দাবি করেছে। এদিকে বৃহস্পতিবার গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, পূর্ব খান ইউনিসের এলাকায় ইসরায়েলি সামরিক হামলায় ১৪ জন নিহত হয়েছেন। অনুমোদিত আশ্রয় শিবির এলাকায় এ ধরনের হামলা উদ্বেগ জানিয়েছে বিশ্বের বিভিন্ন মানবিক সংস্থা।

গত বছরের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের হামলা শুরুর পর গাজা উপত্যকায় এখন পর্যন্ত প্রায় ৩৯ হাজার ২০০ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়ে হাজারো মানুষ কাতরাচ্ছেন। তাদের অনেকের ভাগ্যে ন্যূনতম চিকিৎসাসেবাও জুটছে না। হামলা হচ্ছে হাসপাতাল ও আন্তর্জাতিক সংস্থার চিকিৎসা ক্যাম্পেও।

এ ছাড়া গত বছরের ৭ অক্টোবর থেকে অধিকৃত পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী অন্তত ৯ হাজার ৮০০ ফিলিস্তিনিকে গ্রেফতার করেছে। ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মতে, অধিকৃত পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর গুলিতে অন্তত ৫৯০ ফিলিস্তিনি নিহত এবং প্রায় ৫ হাজার ৪০০ জন আহত হয়েছেন।

তবে আশার কথা হলো গত ১৯ জুলাই আন্তর্জাতিক বিচার আদালত এক যুগান্তকারী রায় দিয়েছে। রায়ে ফিলিস্তিনি ভূমিতে ইসরায়েলের কয়েক দশক ধরে দখলদারিত্বকে অবৈধ বলে ঘোষণা করা হয়েছে। এ ছাড়া পশ্চিম তীর এবং পূর্ব জেরুজালেমে বিদ্যমান সব ইসরায়েলি বসতি সরিয়ে নেওয়ার আহ্বান জানায় আদালত।

আনাদোলু এজেন্সির প্রতিবেদনে বলা হয়, আটক সাংবাদিকদের মধ্যে গাজার বাসিন্দা সাংবাদিক ১৬ জন এবং অন্যান্য ১৭ জনকে কোনো অভিযোগ ছাড়াই আটকের তথ্য পেয়েছে এনজিওটি। তাদের ইসরায়েলের প্রশাসনিক আটক নীতির অধীনে বিচারের মুখোমুখি করা হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, ভুক্তভোগীদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তি আরোপ করা হতে পারে। এ জন্য মিথ্যা অভিযোগপত্রও প্রস্তুত করতে পারে ইসরায়েলি আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা।

এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে সম্ভাব্য প্রার্থী ও ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসের একটি বক্তব্য গাজাবাসীদের আশার আলো দেখাচ্ছে। কমলা বলেছেন, তিনি ইসরায়েলের অস্তিত্ব ও সুরক্ষার প্রতিশ্রুতিতে অটল আছেন এবং থাকবেন। কিন্তু গাজায় যে মানবিক দুর্দশা চলছে তা অবর্ণনীয়। এ ব্যাপারে তিনি চুপ থাকবেন না।

বৃহস্পতিবার (২৫ জুলাই) ওয়াশিংটনে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের এ কথা বলেন কমলা। বৈঠকেও গাজার মানবিক সংকট নিয়ে কমলার প্রশ্নের মুখে পড়েন নেতানিয়াহু।

সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে কমলা জানান, তিনি ফিলিস্তিনিদের দুর্দশার দিকে জোর দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। সেখানে অনেক বেসামরিক লোক নিহত হয়েছে। তা লুকানো কিছু নেই। কিন্তু ইসরায়েলের স্বার্থের প্রশ্নেও তিনি কোনো ছাড় দেবেন না।

কমলা গাজা ইস্যুতে এ ধরনের বক্তব্য দিলেও খোদ তার দল ডেমোক্রেটিক পার্টিতে এ নিয়ে মতবিরোধ আছে। একটি পক্ষ গাজা যুদ্ধ বন্ধের পক্ষে, অপর পক্ষ গাজায় সন্ত্রাসী বাহিনী ধ্বংসে ইসরায়েলের হামলাকে সমর্থন দিচ্ছে। এমনকি তারা ইসরায়েলকে আরও শক্তিশালী করার ওপর জোর দিচ্ছে।

আপন দেশ/এবি

মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়