ছবি: সংগৃহীত
২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর শুধু যুক্তরাষ্ট্রের নয় সমগ্র বিশ্বের জন্য একটি চিরস্মরণীয় দিন। এ দিনটিতে আল-কায়েদার নেতৃত্বে হামলায় প্রায় ৩,০০০ মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। যা আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে এক বড় ধরনের পরিবর্তন এনেছিল।
এ দিন যুক্তরাষ্ট্রের চারটি বাণিজ্যিক যাত্রীবাহী বিমান জঙ্গিরা ছিনতাই করে। এ হামলায় সন্ত্রাসীরা মার্কিন মাটিতে সবচেয়ে বেশি ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছিল। পরিকল্পনা অনুযায়ী, ছিনতাই হওয়া দুটি বিমান নিউ ইয়র্ক সিটির ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের টুইন টাওয়ারে আঘাত করে। তৃতীয় বিমানটি আঘাত করে পেন্টাগনে। চতুর্থ বিমানটি ক্রাশ করে পেনসিলভানিয়ার একটি মাঠে। ধারণা করা হয়, চতুর্থ বিমানটির লক্ষ্য ছিল ওয়াশিংটন ডিসিতে অবস্থিত হোয়াইট হাউজ অথবা ক্যাপিটল ভবন।
প্রথম আঘাত:
স্থানীয় সময় সকাল ৮:৪৬ মিনিটে আমেরিকান এয়ারলাইনসের ফ্লাইট ১১ উত্তর টাওয়ারে আঘাত করে। মুহূর্তেই ভবনের উপরের তলাগুলোতে আগুন ছড়িয়ে পড়ে এবং বহু মানুষ আটকা পড়ে।
দ্বিতীয় আঘাত:
এরপর সকাল ৯:০৩ মিনিটে ইউনাইটেড এয়ারলাইনসের ফ্লাইট ১৭৫ দক্ষিণ টাওয়ারে আঘাত করে। মাত্র ৫৬ মিনিটের মধ্যে দক্ষিণ টাওয়ারটি ধসে পড়ে। এরপর সকাল ১০:২৮ মিনিটে উত্তর টাওয়ারও ভেঙে পড়ে।
পেন্টাগনে হামলা:
তৃতীয় ছিনতাই হওয়া বিমানটি (আমেরিকান এয়ারলাইনস ফ্লাইট ৭৭) সকাল ৯:৩৭ মিনিটে পেন্টাগনে আঘাত করে। এতে পেন্টাগনের একটি অংশ সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে যায় এবং বহু মানুষ নিহত হয়।
চতুর্থ বিমান:
ইউনাইটেড এয়ারলাইনসের ফ্লাইট ৯৩ এর যাত্রীরা বিমানটির নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার চেষ্টা করলেও এটি পেনসিলভানিয়ার শ্যাঙ্কসভিলের কাছে ক্রাশ করে। এই বিমানটির লক্ষ্যও ছিল কোনো গুরুত্বপূর্ণ মার্কিন স্থাপনা।
এ হামলায় ২,৯৭৭ জন নিরীহ মানুষ মারা যায়, যার মধ্যে অনেক দেশের নাগরিকও ছিলেন। টুইন টাওয়ারে কাজ করা মানুষ থেকে শুরু করে উদ্ধারকর্মী, দমকলকর্মী, পুলিশ কর্মকর্তাসহ অসংখ্য মানুষ মারা যান। এছাড়া কয়েক হাজার মানুষ মারাত্মকভাবে আহত হয় এবং আরও অনেকেই বিভিন্নভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
৯/১১ হামলার পর, যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা সম্পূর্ণভাবে ঢেলে সাজানো হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য দেশের মধ্যে সন্ত্রাসবাদ দমনে একযোগে কাজ করার সম্পর্ক জোরদার হয়। এ হামলার প্রতিশোধ হিসেবে মার্কিন সরকার আফগানিস্তানে সামরিক অভিযান শুরু করে। যার মাধ্যমে "সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ" নামে পরিচিত একটি দীর্ঘমেয়াদী যুদ্ধের সূচনা হয়। আল-কায়েদা নেতা ওসামা বিন লাদেন এ হামলার প্রধান পরিকল্পনাকারী ছিলেন। তাকে ধ্বংস করতে এবং আল-কায়েদার নেটওয়ার্ককে বিচ্ছিন্ন করার লক্ষ্যে আফগানিস্তানে তালেবান সরকারকে উৎখাত করার অভিযান শুরু হয়। সেই অভিযানে লাদেনকে মেরে ফেলতেও সক্ষম হয় তারা।
৯/১১ হামলা ছিল বিশ্বের ইতিহাসে এক অভাবনীয় ঘটনা। যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং বিশ্বের রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা পরিবর্তনের দিকে ঠেলে দিয়েছে। এ হামলা থেকে শিক্ষা নিয়ে সারা বিশ্বে সন্ত্রাস দমনে আরও কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়ার প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হয়েছে। নিরাপত্তা ব্যবস্থা উন্নত করা হয়েছে। তবে, এর পরিণতিতে বিশ্বব্যাপী চলমান সংকট, যুদ্ধ এবং সন্ত্রাসবাদী কর্মকাণ্ডের ঝুঁকি এখনও রয়ে গেছে।
আপন দেশ/অর্পিতা
মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।