ছবি: সংগৃহীত
আবারো বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত বাতাসের শহরের তালিকায় শীর্ষে উঠেছে ভারতের রাজধানী দিল্লি। স্বস্তিতে নেই ঢাকাবাসীও। এ তালিকার নয় নম্বরে অবস্থান করছে বাংলাদেশের রাজধানী শহর।
বুধবার (১৩ নভেম্বর) সকাল ৯টায় বায়ুর মান পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্সের (একিউআই) সূচকে এ তথ্য জানানো হয়েছে। দূষণের তালিকায় শীর্ষ পাঁচ দেশের তালিকায় পাকিস্তান, ভিয়েতনাম ও কাতারের দোহা রয়েছে।
আইকিউএয়ারের তথ্যানুযায়ী, ১৫৭ স্কোর নিয়ে নবম স্থানে রয়েছে রাজধানী ঢাকা, যা দূষণের দিক থেকে অস্বাস্থ্যকর হিসেবে বিবেচিত। ররি ও সোমবার এ সময় শহরটির বাতাসে দূষণ মাঝারি অবস্থায় ছিল।
আজ ভারতের দিল্লি শহরের স্কোর ৬৩৫। এছাড়া আজ আইকিউএয়ারের তথ্যানুযায়ী ৪৪৭ স্কোর নিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে পাকিস্তানের লাহোর শহর, ১৮৪ স্কোর নিয়ে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে ভিয়েতনামের হ্যানয় শহর। এছাড়াও গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্রের কিনশাসা ১৮২ স্কোর নিয়ে চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে ও পঞ্চম অবস্থানে রয়েছে মিসরের কায়রো শহর, যার স্কোর ১৭৬।
একিউআই স্কোর শূন্য থেকে ৫০ ভালো হিসেবে বিবেচিত হয়। ৫১ থেকে ১০০ মাঝারি হিসেবে গণ্য করা হয়, আর সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর বিবেচিত হয় ১০১ থেকে ১৫০ স্কোর। স্কোর ১৫১ থেকে ২০০ হলে তাকে ‘অস্বাস্থ্যকর’ বায়ু বলে মনে করা হয়।
বায়ুতে অক্সিজেনের পরিমাণ থাকে ২১ ভাগ। যদি কোনো কারণে এর ঘাটতি হয়ে অন্য গ্যাসের ঘনত্ব বা ধূলিকণার পরিমাণ বেড়ে যায়, তবে তাকে দূষিত বায়ু বলে। আগুন পরিবেশের অক্সিজেন নষ্ট করে ব্যাপক মাত্রায়। যানবাহন, কলকারখানার কালো ধোঁয়া বাতাসকে দূষিত করে। হাইড্রোজেন সালফাইড, অ্যামোনিয়া প্রভৃতি গ্যাসও ক্ষতিকর। নানা দূষণের কারণে আমাদের এ শহরে (ঢাকা) স্বাভাবিক নিশ্বাস নিতেও স্বস্তি হয় না। প্রায়ই মনে হয় দম আটকে আসছে, শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। বিশেষ করে শুষ্ক মৌসুমে। এ সময়ে বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় বাতাস বেশি দূষিত হয়।
২০১ থেকে ৩০০-এর মধ্যে থাকা একিউআই স্কোরকে ‘খুব অস্বাস্থ্যকর’ বলা হয়। এ অবস্থায় শিশু, প্রবীণ এবং অসুস্থ রোগীদের বাড়ির ভেতরে এবং অন্যদের বাড়ির বাইরের কার্যক্রম সীমাবদ্ধ রাখার পরামর্শ দেয়া হয়ে থাকে। এ ছাড়া ৩০১ থেকে ৪০০-এর মধ্যে থাকা একিউআই ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ বলে বিবেচিত হয়, যা নগরের বাসিন্দাদের জন্য গুরুতর স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করে।
সাধারণত একিউআই নির্ধারণ করা হয় দূষণের পাঁচটি ধরনকে ভিত্তি করে। যেমন -বস্তুকণা (পিএম১০ ও পিএম২.৫), এনও২, সিও, এসও২ ও ওজোন (ও৩)।
বায়ুদূষণ থেকে বাঁচতে পরামর্শ-
রাস্তাঘাটে প্রতিনিয়ত যে ধুলাবালু উড়ছে, তা শ্বাসতন্ত্রের সংবেদনশীলতা বাড়িয়ে হাঁপানির উদ্রেক করে। শহরে এ ধরনের রোগীর সংখ্যা বেশি। ধুলা এড়ানোর জন্য নাকে-মুখে মাস্ক ব্যবহার করলে কিছুটা রক্ষা হয়, কিন্তু তারপরও ক্ষুদ্র কণা শ্বাসতন্ত্রে ঢোকে। যারা ধূলিময় এলাকায় কাজ করেন, যেমন রাস্তা বা দালানের শ্রমিক, তারা বিশেষ ধরনের মাস্ক ব্যবহার করতে পারেন। যারা বাইক চালান, এই বিশেষ মাস্ক ব্যবহার করতে পারেন তারাও।
ধূমপায়ীদের মধ্যে ক্ষতির ঝুঁকি বেশি। তাই ধূমপান প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ যা-ই হোক না কেন, অবশ্যই পরিত্যাজ্য।
কলকারখানার রাসায়নিক ফুসফুসের স্বাভাবিককতাকে ধীরে ধীরে নষ্ট করে এবং শক্ত ও দানাদার করে তুলতে পারে। একে বলে ফাইব্রোসিস বা আইএলডি। তাই কারখানার শ্রমিক জনগোষ্ঠীর জন্য যথেষ্ট নিরাপত্তার ব্যবস্থা থাকা উচিত।
বিকল যানবাহন বায়ুদূষণ বাড়িয়ে দিচ্ছে। এ বিষয়ে কেবল ট্রাফিক বিভাগের নয়, আমার-আপনার সচেতনতাও প্রয়োজন। নিজের যানবাহন সার্ভিসিং করা, সারানো বা ধোঁয়ামুক্ত করলে নিজের পরিবারও রক্ষা পাবে।
দূষণজনিত ফুসফুসের রোগ থেকে সুস্থ থাকতে ভিটামিন সি-সমৃদ্ধ ফলমূল ও শাকসবজি খেতে হবে। ভিটামিন সির কার্যকারিতা ২৪ ঘণ্টার বেশি থাকে না। তাই প্রতিদিন একটু হলেও লেবু, আমলকী, আনারস, জাম্বুরা, আমড়া, পেয়ারা, কাঁচা মরিচ, জলপাই, টমেটো, কমলালেবু ইত্যাদি খাবার গ্রহণ করুন।
আপন দেশ/জেডআই
মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।