ফাইল ছবি
এবার বরাক ভ্যালিতে বাংলাদেশিদের জন্য হোটেল নিষিদ্ধ করেছে স্থানীয় হোটেল মালিকরা। দেশটির উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য আসামের বরাক উপত্যকার হোটেল মালিকেরা এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তারা ঘোষণা করেছেন, যতক্ষণ প্রতিবেশী বাংলাদেশে হিন্দু ও অন্যান্য সংখ্যালঘুদের ওপর আক্রমণ বন্ধ না হবে। ততক্ষণ বাংলাদেশি নাগরিকদের হোটেল ভাড়া দেয়া হবে না।
শুক্রবার (৬ ডিসেম্বর) বরাক উপত্যকা হোটেল ও রেস্তোরাঁ মালিক সমিতি এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানিয়েছে দেশটির সংবাদমাধ্যম দ্য হিন্দু।
আসামের কাছাড়, শ্রীভূমি (পূর্বে করিমগঞ্জ) ও হাইলাকান্দি জেলা নিয়ে গঠিত বরাক উপত্যকা। বাংলাভাষী এ অঞ্চলটির বাংলাদেশে সিলেট বিভাগের সঙ্গে প্রায় ১২৯ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্ত আছে। একসময় এ তিন জেলার একটা বড় অংশ, বিশেষ করে কাছাড় ও করিমগঞ্জ ব্রিটিশ ভারতের অংশ হিসেবে বাংলাদেশ থেকে শাসিত হলেও ১৯৪৭ সালের দেশভাগের সময় গণভোটের মাধ্যমে তারা ভারতে তথা আসামের অংশ হওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।
বরাক উপত্যকা হোটেল ও রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির সভাপতি বাবুল রায় বলেন, বাংলাদেশে হিন্দু ও অন্যান্য সংখ্যালঘুর অবস্থা উদ্বেগজনক। আমরা এটি কোনোভাবেই মেনে নিতে পারি না। তাই আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, প্রতিবেশী দেশে হিন্দুদের ওপর অত্যাচার বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত বরাক উপত্যকার তিনটি জেলার সব হোটেল ও রেস্তোরাঁর পক্ষ থেকে কোনো বাংলাদেশি নাগরিককে আতিথ্য দেয়া হবে না। এটি আমাদের প্রতিবাদ।
বাবুল রায় আরও বলেন, বাংলাদেশের জনগণকে অবশ্যই দেশটিতে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে হবে। যদি পরিস্থিতি উন্নত হয়। তবে আমরা আমাদের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করতে পারি।
এদিকে সাম্প্রতিক এক ঘটনায় ভারতীয় রাজনৈতিক দল বজরং আসামের শিলচরের একটি হোটেলে চলমান একটি আন্তর্জাতিক মেলায় বাংলাদেশের পণ্য বিক্রি করা দুটি স্টল বন্ধ করার অনুরোধ জানায় হোটেল কর্তৃপক্ষকে। বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর অত্যাচারের প্রতিবাদ হিসেবে এই দাবি জানানো হয়। পরে এ দাবি মেনে নেয় হোটেল কর্তৃপক্ষ।
বজরং দলের প্রতিবাদকারীরা শিলচরের বাংলাদেশ ভিসা কেন্দ্রে গিয়ে সেখানে ‘বাংলাদেশ’ নামটি সাইনবোর্ড থেকে সরানোর দাবি জানান। বরাক উপত্যকার তিনটি জেলায় বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর কথিত অত্যাচার ও হিন্দু সন্ন্যাসী চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের গ্রেফতার নিয়ে ব্যাপক প্রতিবাদ ছড়িয়ে পড়েছে।
এর আগে ভারতের উত্তরাঞ্চলীয় মোরাদাবাদের আবাসিক এলাকায় এক মুসলিম দম্পতিকে বাড়ি বিক্রি করতে বাধ্য করা হয়। হিন্দু প্রতিবেশীরা ওই মুসলিম দম্পতিকে তাদের বাড়িতে বসবাস করতে দিচ্ছে না। ধর্মীয় পরিচয়ের কারণে এ ঘটনা ঘটছে। এ ঘটনাটি মোরাদাবাদের টিডিআই আবাসিক এলাকায় ঘটে।
মোরাদাবাদের হিন্দু অধ্যুষিত এলাকায় এক মুসলিম দম্পতি বাড়িটি কেনার পর প্রতিবেশীরা তা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করতে শুরু করেন। প্রতিবাদে এক ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর এটি নিয়ে দেশজুড়ে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে।
মেঘা অরোরা নামের এক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, অশোক বাজাজ নামের এক চিকিৎসক কোনো ধরনের পরামর্শ ছাড়াই ওই মুসলিম দম্পতিকে বাড়িটি বিক্রি করেন। আমরা আমাদের মন্দিরের সামনে মুসলিম পরিবারকে সহ্য করতে পারি না। এটা হিন্দু নারীদের নিরাপত্তার প্রশ্ন।
তিনি আরও বলেন, আমরা এ বাড়ি বিক্রির সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের আহবান জানাচ্ছি। প্রশাসনকে অনুরোধ করছি, তারা যেন নতুন মালিকদের নিবন্ধন বাতিল করে। আমরা এখানে ভিন্ন ধর্মের কাউকে আসতে দেব না। যদি মুসলিম দম্পতি তাদের বাড়ি অধিকার করা বিষয়টি প্রত্যাহার না করেন। তবে তারা প্রতিবাদ চালিয়ে যাবেন।
আপন দেশ/এমবি
মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।