ছবি : সংগৃহীত
যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেয়ার পর ভাষণে ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, এখন থেকে আমেরিকার সোনালী যুগের সূচনা হল। সোমবার (২০ জানুয়ারি) স্থানীয় সময় দুপুর ১২টায় ওয়াশিংটন ডিসির ক্যাপিটল ভবনের রোটুন্ডায় শপথ নেয়ার পর অভিষেক ভাষণে এ কথা বলেন তিনি।
দেশটির সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি জন রবার্টস ট্রাম্পকে শপথবাক্য পাঠ করান। শপথ নেয়ার সময় তার সঙ্গে ছিলেন ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্প। ট্রাম্পের আগে ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে জেডি ভ্যান্স শপথ নেন। তাকে শপথবাক্য পাঠ করান সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি ব্রেট কাভানা। শপথ নেয়ার সময় তার সঙ্গে ছিলেন স্ত্রী ঊষা ভ্যান্স।
ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, এখন থেকে আমেরিকার সোনালী যুগের সূচনা হয়েছে। আজ থেকে যুক্তরাষ্ট্র আরও উন্নতি করবে। সারা বিশ্বে আবার সম্মান অর্জন করবে। যুক্তরাষ্ট্রকে দেখে ঈর্ষা করবে সব দেশ। কাউকে আর মার্কিনদের ব্যবহার করে সুবিধা নেয়ার সুযোগ দেয়া হবে না।
ট্রাম্প বলেন, সাম্প্রতিক নির্বাচনে জনগণ আমাকে ম্যান্ডেট দিয়েছে এখানে সংঘটিত হওয়া ভয়াবহ প্রতারণার ঘটনাগুলোকে সম্পূর্ণরূপে বদলে দেয়ার জন্য। একই সঙ্গে জনগণকে তাদের আস্থা, তাদের সম্পদ, তাদের গণতন্ত্র এবং বস্তুত তাদের স্বাধীনতা ফিরিয়ে দেয়ার রায় দিয়েছে। এ মুহূর্ত থেকে আমেরিকার পতনের শেষ হয়েছে।
নিজের অভিষেকের দিনকে ‘স্বাধীনতা দিবস’ হিসেবে উল্লেখ করেন ট্রাম্প। তিনি বলেন, ‘আমাদের স্বাধীনতা ও আমাদের জাতির মহান লক্ষ্যকে আর অস্বীকার করা হবে না। আমরা অবিলম্বে ন্যায়পরায়ণ, দক্ষতা ও আমেরিকার সরকারের প্রতি আনুগত্য ফিরিয়ে আনব।’
গত আট বছরে তিনি যেসব পরীক্ষা ও চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন, তা আমেরিকার ২৫০ বছরের ইতিহাসে অন্য যেকোনো প্রেসিডেন্টের চেয়ে বেশি বলে উল্লেখ করেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। যিনি যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে প্রথম সাবেক কোনো প্রেসিডেন্ট হিসেবে ফৌজদারি মামলায় দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন বিদায়ী বাইডেন প্রশাসনের আমলে।
আজকের এ বিজয় সহজ ছিল না বলে অভিষেক ভাষণে উল্লেখ করেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি বলেন, যারা আমাদের থামাতে চেয়েছিলেন, তারা আমাদের স্বাধীনতা কেড়ে নেয়ার চেষ্টা করেছিলেন। এমনকি আমার জীবনও কেড়ে নিতে চেয়েছিলেন। মাত্র কয়েক মাস আগে, পেনসিলভানিয়ার একটি সুন্দর মাঠে একজন আততায়ীর বুলেট আমার কান বিদ্ধ করে চলে যায়। কিন্তু তখন আমি অনুভব করি এবং এখন সে বিশ্বাস আরও দৃঢ় হয়েছে যে, একটি কারণে জীবনরক্ষা করা হয়েছিল। আমেরিকাকে আবার মহান করার জন্য ঈশ্বর আমার জীবন বাঁচিয়েছিলেন।’
নির্বাচনে জয়ের পরই ট্রাম্প বলেছিলেন, প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার প্রথম দিনেই যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন ব্যবস্থাসহ বেশ কিছু নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেন তিনি। যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছিল, প্রথম দিনই দুই শতাধিক নির্বাহী আদেশ জারি করবেন তিনি। এর মধ্যে থাকবে আইনত বাধ্যতামূলক আদেশ এবং প্রেসিডেন্টের অন্যান্য নির্দেশাবলি। আবার বিদায়ী প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন প্রশাসনের গৃহীত নীতি অনেকগুলো আদেশ বাতিল করবেন তিনি। যার মধ্যে রয়েছে বারাক ওবামার সময় চালু হওয়া ওবামা কেয়ার।
বিদায়ী প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের পাঠানো বিমানবাহিনীর একটি বিমানে করে ট্রাম্প ফ্লোরিডার পাম বিচে অবস্থিত রিপাবলিকান ঘাঁটিতে যান। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন স্ত্রী মেলানিয়া, মেয়ে ইভানকা এবং তার স্বামী জ্যারেড কুশনার। সেখান থেকে ট্রাম্প তার পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ভার্জিনিয়ায় তার গলফ ক্লাবে যান। পরে সেখান থেকে আসেন ওয়াশিংটনে।
দ্বিতীয়বারের মতো হোয়াইট হাউজে ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রত্যাবর্তন বৈশ্বিক রাজনীতি ও অর্থনীতিতে বড় পরিবর্তন আনতে পারে। বিশ্লেষকরা ধারণা করছেন, দ্বিতীয় দফায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নিয়ে নিজের ঘোষিত আমেরিকা ফার্স্ট মূলনীতি বাস্তবায়ন শুরু করবেন ট্রাম্প। তার এ এজেন্ডা যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতিতে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আনবে। পাশাপাশি এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রের সীমানার বাইরে বসবাস করা কোটি মানুষের জীবনও ব্যাপকভাবে প্রভাবিত হবে।
ইউক্রেন যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানের কড়া সমালোচক ট্রাম্প। ফলে ইউক্রেন যুদ্ধে যে ট্রাম্প প্রভাব ফেলবেন, সেটি নিশ্চিতই। নির্বাচনী প্রচারণার সময় বিভিন্ন বক্তব্যে ডোনাল্ড ট্রাম্প বারবার বলেছেন, তিনি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ‘এক দিনের মধ্যে’ শেষ করতে পারবেন। যদিও সেটি ঠিক কীভাবে করবেন সে বিষয়ে বিস্তারিত কখনোই খোলাসা করেননি। এরই মধ্যে গাজা যুদ্ধবিরতি চুক্তির কৃতিত্বের দাবি করেছেন ট্রাম্প। এ ছাড়া ন্যাটো, মধ্যপ্রাচ্য, চীন, জলবায়ুসহ অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে বাইডেন প্রশাসনের নেয়া অবস্থান থেকে ট্রাম্পের সরে আসার সম্ভাবনা প্রবল।
আপন দেশ/জেডআই
মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।