Apan Desh | আপন দেশ

গাজা দখলে নিতে চায় যুক্তরাষ্ট্র, বিশ্বজুড়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৩:০০, ৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

আপডেট: ১৩:৪৪, ৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

গাজা দখলে নিতে চায় যুক্তরাষ্ট্র, বিশ্বজুড়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া

ছবি : সংগৃহীত

ফিলিস্তিনের যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজা উপত্যকার নিয়ন্ত্রণ নিতে চান মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (০৪ ফেব্রুয়ারি) ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এ বিস্ময়কর পরিকল্পনার কথা জানান তিনি। 

হোয়াইট হাউসে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প জানান, তার প্রশাসন গাজায় অর্থনৈতিক উন্নয়নের নেতৃত্ব দেবে, যা এ অঞ্চলের জনগণের জন্য ‘অসীম সংখ্যক চাকরি ও বাসস্থান’ নিশ্চিত করবে।

তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র গাজা উপত্যকার দখল নেবে এবং সেখানে আমরা কাজ করব। আমরা মালিক হব। তিনি আরও জানান, ধ্বংসপ্রাপ্ত ভবন পরিষ্কার করা এবং বিপজ্জনক অবিস্ফোরিত বোমা ও অন্যান্য অস্ত্র অপসারণের দায়িত্ব তার প্রশাসন নেবে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, যুক্তরাষ্ট্র গাজার ওপর দীর্ঘমেয়াদি মালিকানা প্রতিষ্ঠা করবে। এটি হালকাভাবে নেয়া সিদ্ধান্ত নয়। আমি যাদের সঙ্গে কথা বলেছি, সবাই এই ধারণাকে পছন্দ করে যে, যুক্তরাষ্ট্র এই জমির মালিক হবে, এটিকে পুনর্নির্মাণ করবে এবং হাজারো চাকরি তৈরি করবে। বিষয়টি অসাধারণ কিছু হবে।

কীভাবে এ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হবে সে সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু জানাননি ট্রাম্প। তবে তিনি আশা প্রকাশ করেন, গাজা থেকে বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিরা ‘মানবিক মনোভাবসম্পন্ন অন্যান্য দেশগুলোতে’ চলে যাবে। তবে তিনি ইঙ্গিত দেন, কিছু ফিলিস্তিনি গাজায় থেকে যাবে।

ট্রাম্প বলেন, গাজা ‘বিশ্বের জনগণের’ আবাসস্থল হতে পারে। তিনি বলেন, আমি মনে করি, এটি একটি আন্তর্জাতিক, অবিশ্বাস্য জায়গা হবে। আমি মনে করি, গাজার সম্ভাবনা অসাধারণ এবং আমি মনে করি, বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা এখন সেখানে থাকবে, ফিলিস্তিনিরাও সেখানে থাকবে। অনেক মানুষ সেখানে বসবাস করবে।’

ট্রাম্পের গাজা খালি করার বাসনার পেছনে কি রিয়েল এস্টেট ব্যবসাট্রাম্পের গাজা খালি করার বাসনার পেছনে কি রিয়েল এস্টেট ব্যবসা
গাজায় নিরাপত্তা নিশ্চিতে মার্কিন সেনা মোতায়েনের সম্ভাবনা সম্পর্কে জানতে চাইলে ট্রাম্প বলেন, ‘এটি সম্ভব। গাজার ক্ষেত্রে, আমরা যা করা দরকার, তা করব। যদি প্রয়োজন হয়, আমরা সেটিই করব।

সংবাদ সম্মেলনে নেতানিয়াহু ট্রাম্পকে ইসরায়েলের ‘শ্রেষ্ঠ বন্ধু’ বলে প্রশংসা করে বলেন, মার্কিন প্রেসিডেন্টের পরিকল্পনাটি ‘মনোযোগের দাবি রাখে’ এবং এটি ‘ইতিহাস বদলে দিতে পারে।’

তবে ট্রাম্পের এই প্রস্তাব তাৎক্ষণিকভাবে ফিলিস্তিনি পক্ষের নিন্দার মুখে পড়েছে। ফিলিস্তিনি রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও মানবাধিকার কর্মী ওমর বাদ্দার আল-জাজিরাকে বলেন, ‘তিনি মূলত বলছেন, এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আনুষ্ঠানিক নীতি হলো ফিলিস্তিনি সমাজকে ধ্বংস করা, ফিলিস্তিনিদের প্রতিবেশী দেশগুলোতে ছড়িয়ে দেয়া এবং তার ওপর যুক্তরাষ্ট্র ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডের মালিক হয়ে সেখানে অনির্দিষ্টকাল ধরে উপস্থিত থাকবে।

আমেরিকান-আরব অ্যান্টি-ডিসক্রিমিনেশন কমিটির নির্বাহী পরিচালক আবেদ আইয়ুব ট্রাম্পের প্রস্তাবকে ‘ভয়ংকর’ ও ‘উন্মাদ’ বলে আখ্যা দেন। তিনি বলেন, এটি সকল আন্তর্জাতিক আইন ও নিয়মের বিরুদ্ধে যাবে। এটি বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে না। এ মুহূর্তে, আপনাকে নিজেকে প্রশ্ন করতে হবে, গত দেড় বছরে ইসরায়েলসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় আন্তর্জাতিক আইন ও নীতিকে কতটা গুরুত্ব দিয়েছে?’

ডেমোক্রেটিক আইনপ্রণেতারা ট্রাম্পের পরিকল্পনার যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। মার্কিন কংগ্রেসের একমাত্র ফিলিস্তিনি বংশোদ্ভূত সদস্য রাশিদা তালিব ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ‘একজন গণহত্যাকারী যুদ্ধাপরাধীর পাশে বসে প্রকাশ্যে জাতিগত নির্মূলের ডাক দেয়ার’ অভিযোগ তুলেছেন।

মিশিগান থেকে নির্বাচিত প্রতিনিধি রাশিদা তালিব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে লিখেন, তিনি (ট্রাম্প) আমেরিকার শ্রমজীবী মানুষের জন্য ফেডারেল তহবিল বন্ধ করলেও ইসরায়েল সরকারের জন্য অর্থায়ন চালিয়ে যেতে কোনো সমস্যা দেখছেন না।

কানেকটিকাটের ডেমোক্র্যাট সিনেটর ক্রিস মারফি বলেন, ট্রাম্পের পরিকল্পনা আসলে তার নিজের ঘরোয়া বিতর্ক থেকে দৃষ্টি সরানোর কৌশল। আমি আপনাকে নিশ্চিত করছি, আমরা গাজা দখল করছি না। কিন্তু গণমাধ্যম ও রাজনৈতিক মহল কয়েক দিন এটি নিয়ে আলোচনা করবে, আর এতেই ট্রাম্প সফল হবেন আসল গল্প থেকে মনোযোগ সরাতে। কারণ, ধনকুবেররা সরকার দখল করে সাধারণ মানুষের সম্পদ লুটপাট করছে।

ট্রাম্প বারবার মিসর ও জর্ডানের প্রতি আহবান জানিয়েছেন, যাতে তারা বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদের গ্রহণ করে। তবে আরব রাষ্ট্রগুলো তার এ অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করেছে। তারা সতর্ক করেছে যে গাজাবাসীদের পুনর্বাসন এ অঞ্চলে সংঘাতকে আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে এবং দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধানের প্রচেষ্টাকে বিপর্যস্ত করতে পারে।

ট্রাম্পের প্রস্তাবের প্রতিক্রিয়ায় সৌদি আরব জানিয়েছে যে, তারা ফিলিস্তিনিদের বিতাড়নের যেকোনো প্রচেষ্টার বিরোধিতা করবে এবং ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা ছাড়া ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করবে না।

আপন দেশ/জেডআই

মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়