Apan Desh | আপন দেশ

ট্রাম্পের গাজা দখল পরিকল্পনায় বিশ্বজুড়ে তোলপাড়

আন্তর্জাতিক ডেস্ক    

প্রকাশিত: ১৬:৫৯, ৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

ট্রাম্পের গাজা দখল পরিকল্পনায় বিশ্বজুড়ে তোলপাড়

হোয়াইট হাউজে ডোনাল্ড ট্রাম্পের পাশে বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। ছবি: এএফপি

গাজায় যুদ্ধের ধ্বংসযজ্ঞের মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এক বিতর্কিত পরিকল্পনার ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের সম্পূর্ণ উচ্ছেদ করে অঞ্চলটি যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণে নেয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন। তিনি জানান, গাজাকে বিলাসবহুল পর্যটনকেন্দ্র বা ‘মধ্যপ্রাচ্যের রিভিয়েরা’ বানানো হবে।

ট্রাম্পের এ ঘোষণার পরপরই আরব দেশগুলো কড়া প্রতিক্রিয়া জানায়। পাঁচজন আরব পররাষ্ট্রমন্ত্রী এক যৌথ চিঠিতে যুক্তরাষ্ট্রকে সতর্ক করেছেন। তারা বলেন, ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদ গাজাকে আরও সংঘাতময় করবে।

মার্কিন রাজনীতিতেও বিষয়টি মিশ্র প্রতিক্রিয়া তৈরি করেছে। ট্রাম্পের কিছু সমর্থক এটিকে ‘যুগান্তকারী উদ্যোগ’ বললেও, অনেকে একে ‘অসম্ভব’ ও ‘বিপজ্জনক’ আখ্যা দিয়েছেন।

ইসরায়েলে এ নিয়ে ভিন্ন মত দেখা গেছে। এক কট্টর ডানপন্থি মন্ত্রী বাইবেলের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছেন, প্রভু আমাদের জন্য মহান কাজ করেছেন, তাই আমরা আনন্দিত। তবে বেশিরভাগ ইসরায়েলি ট্রাম্পের পরিকল্পনায় বিস্মিত হয়েছেন।

হোয়াইট হাউসে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে বৈঠকের পর ট্রাম্প বলেন, আমরা গাজা দখল করবো। একে নতুনভাবে গড়ে তুলবো। সেখানে অস্ত্র ও অবিস্ফোরিত বোমা নিষ্ক্রিয় করা হবে। প্রয়োজনে মার্কিন সেনা মোতায়েন করা হতে পারে।

ট্রাম্প দাবি করেন, এটি হালকাভাবে নেয়ার মতো কোনো পরিকল্পনা নয়। ‘সবাই’ চায়, যুক্তরাষ্ট্র এ জমির মালিক হোক। একে একটি ‘মহান স্থানে’ পরিণত করুক।

তার মতে, ধ্বংসস্তূপে পরিণত গাজায় ফিলিস্তিনিদের থাকা উচিত নয়। বরং তাদের অন্য দেশগুলো গ্রহণ করুক, আর পুনর্গঠনের পর সেখানে বিশ্বের নানা প্রান্তের মানুষ বসবাস করবে। যার মধ্যে কিছু ফিলিস্তিনিও থাকতে পারে।

নেতানিয়াহু ট্রাম্পের পরিকল্পনার বিষয়ে বলেন, এটি অবশ্যই নজর দেয়া প্রয়োজন… এটি ইতিহাস বদলে দিতে পারে।

তবে নেতানিয়াহুর সরকার গাজার যুদ্ধের দ্বিতীয় পর্যায় নিয়ে আলোচনার জন্য প্রস্তুত ছিল। তারা আশা করেছিল, ট্রাম্প ইসরায়েলকে যুদ্ধবিরতির দিকে এগিয়ে নিতে বলবেন। বন্দি বিনিময়ের মাধ্যমে সংঘাতের সমাপ্তি চাইছিল ইসরায়েল। কিন্তু ট্রাম্প যে গাজাকে যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার কথা বলবেন, তা ইসরায়েলিরাও ভাবেননি।

গাজার বেশিরভাগ জনগণ আগেও একাধিকবার বাস্তুচ্যুত হয়েছে। তাদের জন্য আরেকটি ‘নাকবা’ বা গণবিপর্যয় মেনে নেয়া সহজ হবে না। এমনকি, যদি গাজাবাসীরা স্বেচ্ছায় চলেও যায়, তবু এটি জাতিগত নির্মূলের শামিল হবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

তাছাড়া, আরব দেশগুলো এ পরিকল্পনার তীব্র বিরোধিতা করতে পারে। সৌদি আরব এরই মধ্যে জানিয়ে দিয়েছে, ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আগে ইসরায়েলের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক স্থাপন করা হবে না।

অনেকে মনে করছেন, ট্রাম্পের এ পরিকল্পনা মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের আধিপত্য বিস্তারের একটি নতুন কৌশল। কেউ কেউ এটিকে তার ব্যবসায়ী মানসিকতার বহিঃপ্রকাশ হিসেবেও দেখছেন, যেখানে গাজাকে ‘উন্নয়ন প্রকল্পে’ পরিণত করার কথা বলা হচ্ছে।

এক আরব কূটনীতিক জানিয়েছেন, তারা এখনো নিশ্চিত নন এটি নিছক ট্রাম্পের রাজনৈতিক বক্তব্য, নাকি সত্যিই তিনি এ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে চান। তবে বিশ্বজুড়ে এ প্রস্তাব ব্যাপক বিতর্ক সৃষ্টি করেছে। যা মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিতে নতুন উত্তেজনার ইঙ্গিত দিচ্ছে। সূত্র: দ্য ইকোনমিস্ট

আপন দেশ/এমবি

মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়