Apan Desh | আপন দেশ

বাংলাদেশে ইউএসএইডের ২৯ মিলিয়ন ডলার কারা পেল?

আন্তর্জাতিক ডেস্ক    

প্রকাশিত: ২১:৫৬, ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

আপডেট: ২১:৫৮, ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

বাংলাদেশে ইউএসএইডের ২৯ মিলিয়ন ডলার কারা পেল?

সংগৃহীত ছবি

যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা ইউএসএইড বাংলাদেশের ‘স্ট্রেনদেনিং পলিটিক্যাল ল্যান্ডস্কেপ ইন বাংলাদেশ (এসপিএল)’ প্রকল্পে ২৯ মিলিয়ন ডলার অর্থায়ন করেছে। তবে এ তহবিল কে বা কারা পেয়েছে, তা নিয়ে বিতর্ক চলছে।

শুক্রবার (২১ ফেব্রুয়ারি) ওয়াশিংটন ডিসিতে গভর্নর ওয়ার্কিং সেশনস অনুষ্ঠানে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, বাংলাদেশের একটি ফার্ম মাত্র দুইজন কর্মী নিয়ে এ বিশাল তহবিল পেয়েছে। এর পর থেকেই বিষয়টি আলোচনায় আসে।

ডিপার্টমেন্ট অব গভর্নমেন্ট এফিসিয়েন্সি (ডিওজিই) জানায়, এ অনুদান বাতিল করা হয়েছে। তবে কোন প্রতিষ্ঠান বা সংস্থা এ অর্থ পেয়েছে, তা প্রকাশ করা হয়নি।

ইউএসএইডের তহবিল বিতরণ নিয়ে শুধু বাংলাদেশ নয়, ভারতেও বিতর্ক তৈরি হয়েছে। ভারতে ভোটারদের ভোটদানে উৎসাহিত করতে ২ কোটি ১০ লাখ ডলার বরাদ্দের কথা জানায় ইউএসএইড। তবে ভারতের সরকার ও বিরোধী দলগুলোর মধ্যে বিদেশি হস্তক্ষেপ নিয়ে তীব্র সমালোচনা চলছে।

শনিবার ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস এক প্রতিবেদনে জানায়, এ তহবিল ভারতের জন্য নয়, বরং ২০২২ সালে বাংলাদেশে অনুমোদিত হয়েছিল। তারা ফ্যাক্টচেকে দাবি করেছে, এ ২ কোটি ১০ লাখ ডলারের মধ্যে ১ কোটি ৩৪ লাখ ডলার ইতোমধ্যে বিতরণ করা হয়েছে।

ডিওজিইর তালিকায় ইউএসএইডের দু’টি অনুদানের কথা উল্লেখ করা হয়েছিল; যা সিইপিপিএসের (কনসোর্টিয়াম ফর ইলেকশনস অ্যান্ড পলিটিক্যাল প্রোসেস স্টেনদেনিং) মাধ্যমে বিতরণ করা হয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানের সংস্কার, গণতন্ত্র-সুশাসন ব্যবস্থার প্রচারে বিশেষভাবে কাজ করে সিইপিপিএস। ইউএসএইডের মাধ্যমে মোট ৪৮৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার পাওয়ার কথা ছিল সিইপিপিএসের।

ডিওজিইর মতে, এ তহবিলে ভারতে ভোটারদের ভোটদানে উৎসাহিত করার কর্মসূচির জন্য ২ কোটি ১০ ডলার ও মলদোভায় ‘অন্তর্ভুক্তি ও অংশগ্রহণমূলক রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার’ জন্য ২ কোটি ২০ লাখ ডলারের বরাদ্দও অন্তর্ভুক্ত ছিল।

মলদোভায় কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য সিইপিপিএসকে অর্থ সরবরাহ করা হয়েছিল ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে। দেশটির জন্য বরাদ্দকৃত ২ কোটি ২০ লাখ ডলার তহবিলের মধ্যে এখন পর্যন্ত ১ কোটি ৩২ লাখ ডলার সরবরাহ করা হয়েছে। 

তবে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, ভারতে ভোটারদের ভোটদানে উৎসাহিত করার জন্য ২ কোটি ১০ লাখ ডলার তহবিল আসলে ভারতের জন্য ছিল না। বরং এ তহবিল বাংলাদেশের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল।

বাংলাদেশের জন্য নির্ধারিত ওই তহবিল ছিল জানিয়ে কয়েকটি বিষয় তুলে ধরেছে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস। এতে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল অনুদান নির্দিষ্ট দেশগুলোতে দেয়া হয়। ২০০৮ সাল থেকে ভারতে ইউএসএইডের অর্থায়নে সিইপিপিএসের কোনও প্রকল্প পরিচালিত হয়নি। ২ কোটি ১০ লাখ ডলার তহবিলের সাথে ইউএসএইডের অনুমোদিত অনুদান কেবল সিইপিপিএসের মাধ্যমে বাংলাদেশে দেওয়া হয়েছিল; যার ফেডারেল অ্যাওয়ার্ড নম্বর ৭২০৩৮৮২২এলএ০০০০১। ২০২২ সালের জুলাইয়ে ‘আমার ভোট আমার’ নামে একটি প্রকল্পের জন্য যা অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল। পরবর্তীতে ওই বছরের নভেম্বরে এই প্রকল্পের নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় ‘নাগরিক (সিটিজেন) প্রোগ্রাম।

গত বছরের ডিসেম্বরে ইউএসএইডের ঢাকার উপদেষ্টা লুবাইন মাসুম যুক্তরাষ্ট্র সফরে গিয়ে ২ কোটি ১০ লাখ ডলারের অনুদানের বিষয়টি নিশ্চিত করেন। এ তহবিলের ১ কোটি ৩৪ লাখ ডলার ইতোমধ্যে প্রকল্পের কাজে ব্যয় হয়েছে।

তিনটি সংস্থাকে ছয়বারে এ অনুদান সরবরাহ করা হয়েছে। অনুদান পাওয়া তিন সংস্থা হলো ইন্টারন্যাশনাল ফাউন্ডেশন ফর ইলেক্টোরাল সিস্টেমস (আইএফইএস), ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউট (আইআরআই) ও ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক ইনস্টিটিউট (এনডিআই)।

এ তিন সংস্থার মধ্যে আইএফইএসের প্রধান কার্যালয় যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়ার আর্লিংটনে। এছাড়া আইআরআই ও এনডিআইয়ের সদরদফতর ওয়াশিংটন ডিসিতে। এ অনুদানের বিষয়ে মন্তব্য জানতে যোগাযোগ করা হলে আইএফইএসের একজন মুখপাত্র অস্বীকৃতি জানান। পাশাপাশি আইআরআই ও এনডিআইয়ের মন্তব্য জানতে চেয়েও কোনও সাড়া পায়নি ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস।

ইউএসএইডের তহবিল বাংলাদেশে কারা পেয়েছেন, সে বিষয়ে আলোচনা চলছে। এর মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক আইনুল ইসলামের সঙ্গে কথা বলেছে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস। মাইক্রো গভর্ন্যান্স রিসার্চ (এমজিআর) নামের একটি গবেষণা সংস্থার পরিচালকের দায়িত্বে রয়েছেন তিনি।

গত ১১ সেপ্টেম্বর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দেয়া এক পোস্টে তিনি লিখেছিলেন, হ্যালো বাংলাদেশ ২.০!  গত দুই বছরে এমজিআর, সেইভ ইয়ুথ ও ডিএফটিপি দেশজুড়ে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে তরুণদের জন্য ৫৪৪টি অনুষ্ঠান ও কর্মসূচি পরিচালনা করেছে। কর্মশালার আকারে, প্রশিক্ষণ, কথোপকথন, সামিট, অ্যাকশন প্রকল্পসহ তরুণ গণতান্ত্রিক নেতৃত্ব ও নাগরিক সংশ্লিষ্টতার জন্য সরাসরি ২২১টি অ্যাকশন প্রকল্প, ১৭০টি গণতন্ত্র সেশনের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০ হাজার ২৬৪ তরুণের কাছে পৌঁছেছিল এমজিআর, সেইভ ইয়ুথ ও ডিএফটিপি!

এসব কর্মসূচির বাস্তবায়ন নাগরিক প্রোগ্রামের আওতায় ইন্টারন্যাশনাল ফাউন্ডেশন ফর ইলেক্টোরাল সিস্টেমস (আইএফইএস) ও ইউএসএইড বাংলাদেশের উদার সমর্থন ও অংশীদারত্বে সম্ভব হয়েছে বলে লেখেন তিনি। 

আইনুল ইসলাম ইসলাম আইএফইএসের সিনিয়র কনসালটেন্টের দায়িত্বেও রয়েছেন। ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিষ্ঠিত অ্যাপ্লাইড ডেমোক্রেসি ল্যাবের (এডিএল) প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক হন তিনি। ইউএসএইড ও আইএফইএসের সহায়তায় এ ল্যাব প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন আইনুল ইসলাম।

তবে সিইপিপিএসের মাধ্যমে নাগরিক প্রোগ্রামে ইউএসএইডের অর্থায়নের তথ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে নিশ্চিত করেছেন তিনি। ইলন মাস্ক নেতৃত্বাধীন যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অব গভর্নমেন্ট এফিসিয়েন্সি ইউএসএইডের তহবিল বাতিলের বিষয়ে তিনি বলেন, এটি একটি ধাক্কা। তবে ল্যাবটি বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে। আমরা আশাবাদী এটি চালু থাকবে।

গত বছরের ২ ডিসেম্বর ওয়াশিংটন ডিসিতে এনডিআই সদরদপ্তর পরিদর্শনের পর ইউএসএইড ঢাকার পলিটিক্যাল প্রোসেসেস উপদেষ্টা লুবাইন চৌধুরী মাসুম লিংকডইনের একটি পোস্টে ইউএসএইডের ২ কোটি ১০ লাখ ডলারের তহবিলের প্রতিশ্রুতির তথ্য নিশ্চিত করেন।

লুবাইন চৌধুরী মাসুম বলেছেন, এনডিআই...সিইপিপিএস/নাগরিক প্রকল্পের আওতায় বাংলাদেশে প্রি-ইলেকশন অ্যাসেসমেন্ট মিশন (পিইএএম) ও টেকনিক্যাল অ্যাসেসমেন্ট মিশনে (টিএএম) অংশ নিয়েছে; যা আমি পরিচালনা করি। তবে এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে যোগাযোগ করা হলেও মাসুম সাড়া দেননি বলে জানিয়েছে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস।

এদিকে, ‘স্ট্রেনদেনিং পলিটিক্যাল ল্যান্ডস্কেপ ইন বাংলাদেশ (এসপিএল)’ শীর্ষক যে প্রকল্পে যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা ইউএসএইডের অর্থায়নের কথা বলেছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, সে নামে বাংলাদেশে একটি প্রকল্প পরিচালনা করে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থা ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনাল (ডিআই)। তাদের ওয়েবসাইটে এ প্রকল্পে ইউএসএইডের অর্থায়নের তথ্য উল্লেখ রয়েছে। 

ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সক্ষমতা বৃদ্ধি, রাজনৈতিক দল ও ভোটারদের সম্পর্ক উন্নয়ন এবং রাজনৈতিক সহিংসতা হ্রাস করার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করে ডিআইয়ের এ প্রকল্প।

আপন দেশ/এমবি

মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

সম্পর্কিত বিষয়:

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়