Apan Desh | আপন দেশ

১.৫ বিলিয়ন ডলার নিয়ে গেল উ. কোরিয়ার হ্যাকাররা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক    

প্রকাশিত: ১৫:৩৯, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

১.৫ বিলিয়ন ডলার নিয়ে গেল উ. কোরিয়ার হ্যাকাররা

ফাইল ছবি

মানবেতিহাসের সবচেয়ে বড় ডিজিটাল ডাকাতির পেছনে উত্তর কোরিয়ার হ্যাকারদের হাত রয়েছে। এমনটা বলে দাবি করেছে মার্কিন তদন্ত সংস্থা এফবিআই। তাদের দাবি, ক্রিপ্টোকারেন্সি এক্সচেঞ্জ প্ল্যাটফর্ম বাইবিট থেকে অর্থ চুরি হয়েছে। তার পেছনে উত্তর কোরিয়ার হ্যাকরদের হাত আছে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সর্বোচ্চ চুরির ঘটনাটি ঘটেছিল ২০০৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ইরাক আক্রমণের ঠিক আগে। পশ্চিমা বিশ্বের দাবি, সে সময় ইরাকের শাসক সাদ্দাম হোসেন ইরাকের কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে এক বিলিয়ন ডলার সরিয়ে নিয়েছিলেন ডিজিটাল জালিয়াতির মাধ্যমে। বিশ্লেষকেরা বাইবিট এক্সচেঞ্জ থেকে দেড় বিলিয়ন ডলারর চুরিকে উত্তর কোরিয়ার ক্রমবর্ধমান সাইবার অপরাধ দক্ষতার ইঙ্গিত বলে মনে করছেন।

উত্তর কোরিয়ার হ্যাকারদের এ বিশেষ ধরনের সাইবার অপরাধকে ‘ট্রেডার ট্রেইটার’ বা বাণিজ্যিক বিশ্বাসঘাতকতা হিসেবে বর্ণনা করেছে এফবিআই। সংস্থাটি সতর্ক করেছে যে, দুবাইভিত্তিক ক্রিপ্টোকারেন্সি ট্রেডিং প্ল্যাটফর্ম বাইবিট থেকে চুরি হওয়া ভার্চুয়াল সম্পদ অবশেষে নগদ মুদ্রায় রূপান্তরিত হবে।

এফবিআই এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ট্রেডার ট্রেইটার হামলাকারীরা দ্রুত অগ্রসর হচ্ছে। এরই মধ্যে কিছু চুরি হওয়া সম্পদ বিটকয়েন ও অন্যান্য ভার্চুয়াল সম্পদে রূপান্তর করেছে। যা হাজারো অ্যাড্রেসের মাধ্যমে একাধিক ব্লকচেইনে ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে।

সংস্থাটি আরও জানিয়েছে, এ সম্পদ আরও বেশি করে ধাপে ধাপে লন্ডারিং করা হবে। শেষ পর্যন্ত ‘ফিয়াট মুদ্রায়’ রূপান্তরিত হবে। এ ফিয়াট মুদ্রা হলো—এক ধরনের স্বাভাবিক সরকারি সমর্থিত মুদ্রা। কিন্তু এ মুদ্রার মান স্বর্ণ বা অন্যান্য পণ্যের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত নয়। অর্থাৎ, এটি এসব শর্তের সাপেক্ষে উঠানামা করে না।

উত্তর কোরিয়া একটি সুসংগঠিত সাইবার অপরাধ ইউনিট হলো ‘ল্যাজারাস গ্রুপ’। এ গোষ্ঠী উচ্চ পর্যায়ের চুরির জন্য কুখ্যাত। ধারণা করা হয়, তাদের চুরি করা অর্থ দেশটির পারমাণবিক ও ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি চালানোর জন্য ব্যবহার করা হয়।

২০২৪ সালে উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট হ্যাকাররা সব মিলিয়ে ১ দশমিক ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের ক্রিপ্টোকারেন্সি চুরি করেছিল। যা সে সময়কার সর্বোচ্চ রেকর্ড ছিল। ব্লকচেইন বিশ্লেষণ সংস্থা চেইনঅ্যানালিসিসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ চুরিগুলো ৪৭টি পৃথক ঘটনায় সংঘটিত হয়েছিল। এটি ২০২৩ সালে চুরি হওয়া ৬৬০ মিলিয়ন ডলারের তুলনায় দ্বিগুণেরও বেশি বৃদ্ধি।

চেইনঅ্যানালিসিসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উত্তর কোরিয়া সংশ্লিষ্ট হ্যাকারেরা অত্যন্ত উন্নত। নিরলস পদ্ধতি অনুসরণ করে। যেখানে তারা জটিল ম্যালওয়্যার, সামাজিক প্রলোভনমূলক কৌশল ও ক্রিপ্টোকারেন্সি চুরির মাধ্যমে রাষ্ট্রীয়ভাবে পরিচালিত কর্মকাণ্ডের জন্য অর্থ সংগ্রহ করে। আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ পায়।

জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা পর্যবেক্ষণকারী কর্মকর্তারা বিশ্বাস করেন, ২০১৭ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে উত্তর কোরিয়ার পরিচালিত সন্দেহভাজন সাইবার হামলাগুলোর মাধ্যমে পাওয়া অর্থ দেশটির পারমাণবিক অস্ত্র কর্মসূচি উন্নত করতে ব্যবহার করা হয়েছে।

উত্তর কোরিয়ার অর্থনীতি আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা, কোভিড-১৯ মহামারি ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে কিম জং-উন সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেশটির দূরপাল্লার হামলার সক্ষমতা, এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের মূল ভূখণ্ডে আঘাত হানার ক্ষমতাও উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নত করেছেন।

সাইবার অপরাধ ছাড়াও উত্তর কোরিয়ার সরকার বিদেশি মুদ্রা অর্জনের জন্য অন্যান্য উপায়ও ব্যবহার করছে। কিমের সরকার রাশিয়ার ইউক্রেন আগ্রাসনে সমর্থন হিসেবে অস্ত্র, গোলাবারুদ ও সেনা সরবরাহ করেছে, এর বিনিময়ে তারা নগদ অর্থ ও প্রযুক্তিগত জ্ঞান পেয়েছে।

বিদেশি মুদ্রা উপার্জনের আরও একটি উৎস সাম্প্রতিক সপ্তাহে উত্তর কোরিয়ায় ফিরে এসেছে। কারণ, দেশটি মহামারি পর প্রথমবারের মতো যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও অস্ট্রেলিয়ার পর্যটকদের স্বাগত জানিয়েছে। জানা গেছে, দেশটির কর্মকর্তারা রাশিয়ার পর্যটকদের আকৃষ্ট করার চেষ্টা করছেন। এমনকি, গত বছর অনেক রাশিয়ান দেশটি পরিদর্শন করেছেন। তারা চীন থেকেও বড় সংখ্যক পর্যটক প্রত্যাশা করছে। তবে ২০১৭ সাল থেকে মার্কিন নাগরিকদের জন্য উত্তর কোরিয়ায় প্রবেশ নিষিদ্ধ রয়েছে।

সর্বশেষ চুরির শিকার বাইবিট জানিয়েছে, এক হামলাকারী একটি ইথারিয়াম ওয়ালেটের নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করে। তহবিলগুলো একটি অজ্ঞাত ঠিকানায় স্থানান্তরিত করেছে।

উল্লেখ্য, এ প্ল্যাটফর্ম বিশ্বব্যাপী ৬ কোটিরও বেশি ব্যবহারকারীকে সেবা দেয়। বিটকয়েন ও ইথারিয়ামের মতো বিভিন্ন ক্রিপ্টোকারেন্সির লেনদেনের সুযোগ দেয়। বাইবিট সাম্প্রতিক দিনগুলোতে সাইবার নিরাপত্তার ‘উজ্জ্বল ও চৌকস মেধাবীদের’ আহবান জানিয়েছে, চুরি হওয়া ১.৫ বিলিয়ন ডলার পুনরুদ্ধারে।

আপন দেশ/এমবি

মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

সম্পর্কিত বিষয়:

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়