ফাইল ছবি
রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে মিয়ানমার নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি দেয় না। ফলে বিশ্বসম্প্রদায়ের কাছে তারা স্টেটলেস বা রাষ্ট্রহীন। আশ্রিত রোহিঙ্গাদের কারণে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি রাষ্ট্রহীন মানুষ এখন বাংলাদেশে। জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআরের হিসাবে ২০২২ সাল শেষে বাংলাদেশে রাষ্ট্রহীন মানুষের সংখ্যা ছিল নয় লাখ ৫২ হাজার ৩০০।
বুধবার (১৪ জুন) ইউএনএইচসিআর প্রকাশিত ‘২০২২ সালের বৈশ্বিক জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতির প্রবণতা’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এই তথ্য রয়েছে।
২০১৬ সালে ইতিহাসে প্রথমবারের মতো রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বড় অংশকে বাংলাদেশে চলে আসতে বাধ্য করে মিয়ানমার। ওই দেশটিতে এখনো ছয় লাখ ৩০ হাজার রাষ্ট্রহীন মানুষ আছে। তারা মূলত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর। রাষ্ট্রহীন মানুষের উপস্থিতির তালিকায় মিয়ানমার আছে তৃতীয় স্থানে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা আইভরি কোস্টে রাষ্ট্রহীন মানুষের সংখ্যা নয় লাখ ৩১ হাজার ১০০।
প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, মিয়ানমারের জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতদের আশ্রয় দিচ্ছে বাংলাদেশ। আবার একই সময়ে বাংলাদেশিরা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আশ্রয়লাভের চেষ্টা করছে। গত বছর প্রায় ৩৮ হাজার ৯০০ বাংলাদেশি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আশ্রয়ের আবেদন করেছে।
ইউএনএইচসিআরের প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ২০২২ সাল শেষে বিশ্বে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা ছিল ১০ কোটি ৮৪ লাখ। সুদানে দুই মাসের সংঘাতে এটি এখন বেড়ে ১১ কোটিতে দাঁড়িয়েছে। গত বছর বিশ্বে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতির তালিকায় নতুন করে যোগ হয়েছে এক কোটি ৯০ লাখ মানুষ। ইউএনএইচসিআর বলেছে, এর আগে কখনো এক বছরে বাস্তুচ্যুতি এত বাড়েনি।
ইউএনএইচসিআরের প্রধান ফিলিপ্পো গ্র্যান্ডি বলেছেন, ইউক্রেন ও সুদানের সংঘাতে লাখ লাখ মানুষ শরণার্থী হওয়ায় বিশ্বজুড়ে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা বেড়ে রেকর্ড ১১ কোটিতে পৌঁছেছে।
ইউএনএইচসিআরের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১১ সালে সিরিয়ায় সংঘাতের আগের দুই দশকে বিশ্বজুড়ে অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুত ও আন্তর্জাতিক শরণার্থীর সংখ্যা প্রায় চার কোটিতে স্থির ছিল। পরের এক যুগে প্রতিবছর এই সংখ্যা বেড়েছে। আর এখন তা বেড়ে ২০১১ সালের প্রায় তিন গুণে দাঁড়িয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বর্তমান বিশ্বে গড়ে প্রতি ৭৪ জনের মধ্যে একজনের বেশি মানুষ জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতির শিকার। ইউএনএইচসিআরের প্রধান ফিলিপ্পো গ্র্যান্ডি জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতির নতুন রেকর্ডের জন্য সংঘাত, নিপীড়ন, বৈষম্য, সহিংসতা ও জলবায়ু পরিবর্তনের মতো কারণগুলোকে দায়ী করেছেন। শরণার্থী ও আন্তর্জাতিক সুরক্ষার প্রয়োজন এমন মানুষের প্রায় অর্ধেকেরই উৎস রাষ্ট্র সিরিয়া, ইউক্রেন ও আফগানিস্তান।
ফিলিপ্পো গ্র্যান্ডি কোনো দেশের নাম উল্লেখ না করে শরণার্থীদের আশ্রয় দেয়ার ক্ষেত্রে কঠোর নিয়ম-কানুন ও ফেরত পাঠানোর বিষয়ে উদ্বেগ জানান। তিনি বলেন, ‘আমরা ১৯৫১ সালের শরণার্থী কনভেনশনের মূলনীতি অনুসরণে দেশগুলোর মধ্যে শিথিলতার মাত্রা বাড়তে দেখছি। এমনকি ওই কনভেনশনে স্বাক্ষরকারী অনেক দেশের মধ্যেও এমনটি দেখা যাচ্ছে।’
প্রতিবেদনে এশিয়া ও প্যাসিফিক অঞ্চল প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, এই অঞ্চলের শরণার্থীদের ৯০ শতাংশেরও বেশি অবস্থান করছে মাত্র তিনটি দেশে। এগুলো হলো ইরান (৩৪ লাখ), পাকিস্তান (১৭ লাখ) ও বাংলাদেশ (নয় লাখ ৫২ হাজার ৪০০ জন)।
আপন দেশ/আরএ
মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।