Apan Desh | আপন দেশ

৬৪ জেলায় ই-কোর্টের প্রস্তাব কমিশনের

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৬:৫৭, ১৪ মার্চ ২০২৫

৬৪ জেলায় ই-কোর্টের প্রস্তাব কমিশনের

ছবি: সংগৃহীত

বিচার কার্যক্রমে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার করে মামলা নিষ্পত্তির দ্রুত করতে ৬৪ জেলায় ই-কোর্ট রুম স্থাপন করার প্রস্তাব করেছে বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন। একই সঙ্গে ভার্চুয়াল কোর্ট, ডিজিটাল স্বাক্ষর ও ই-স্বাক্ষর, ই-ফাইলিং, ই-পেমেন্ট, ই-নথি এবং ডিজিটাল রেকর্ডরুম ও অনুলিপি বিভাগ করতে হবে। আর সুপ্রিম কোর্টের কেন্দ্রীয় ডাটা সেন্টার ও নিজস্ব মাইক্রো ডাটা সেন্টার থাকবে বলে সুপারিশ থাকছে কমিশনের।

এছাড়া বিচার ব্যবস্থায় প্রযুক্তির প্রয়োগ বিষয়ে জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় প্রচারণা চালাতে হবে। বিচার প্রক্রিয়ার এসব প্রযুক্তি ব্যবহারে অর্থ, সময় সাশ্রয় হবে। বিচার প্রক্রিয়ার প্রতি জনগণের আস্থা বৃদ্ধি পাবে বলে মতামত দিয়েছে বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন।

গত ৫ ফেব্রুয়ারি অন্তর্বর্তী সরকার প্রধানের কাছে এ প্রতিবেদন জমা দেন আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি শাহ আবু নাঈম মোমিনুর রহমানের নেতৃত্বাধীন আট সদস্যের কমিশন। ১৩৫ পৃষ্ঠার প্রতিবেদনে ৩২টি অধ্যায়ে বিচার বিভাগ সংস্কার নিয়ে নানা সুপারিশ ও প্রস্তাব তুলে ধরা হয়েছে।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, তথ্য প্রযুক্তি বিচার বিভাগের জন্য অনেক সম্ভাবনাময় হওয়া সত্ত্বেও বিচার বিভাগ তথ্য প্রযুক্তিকে এখন পর্যন্ত তেমন কাজে লাগাতে পারেনি। বিচার বিভাগ ডিজিটালাইজড করার জন্য ই-জুডিসিয়ারি প্রকল্প গ্রহণ করা হলেও নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে প্রকল্পটি এখনও দৃশ্যমান হয়নি। এ কারণে তথ্য প্রযুক্তি প্রয়োগের ক্ষেত্রে আধুনিক বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থা বেশ পিছিয়ে রয়েছে।

বিচার প্রক্রিয়ায় তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারের ইতিবাচক ফলাফল:

মামলার জটিল প্রক্রিয়াগুলো ডিজিটাল প্রযুক্তির মাধ্যমে সহজ, স্বচ্ছ এবং জবাবদিহিমূলক করা। মামলার নিষ্পত্তি দ্রুত ও বিচারপ্রার্থীদের হয়রানি কমবে। অপরদিকে, আদালতের কার্যক্রমে ত্রুটি কমবে, সাক্ষ্য  গ্রহণ এবং তদন্তপ্রক্রিয়ার তথ্য সহজলভ্য হওয়ার মাধ্যমে বিচারিক প্রক্রিয়া আরও দক্ষ হবে। ডিজিটালাইজেশনের মাধ্যমে বিচার ব্যবস্থাকে কাগজহীন বিচার বিভাগে উন্নীত করা সম্ভব। বর্তমানে বিচারিক কার্যক্রমে প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ কাগজ ব্যবহৃত হয়। প্রতি বছর আদালতে প্রায় ১৬ লাখ স্বাক্ষীর জন্য গড়ে ৩২ লাখ পাতা, ১৩ লাখ নতুন মামলার জন্য গড়ে ১ কোটি ৩০ লাখ পাতা, বিভিন্ন প্রক্রিয়ার জন্য ৩২ কোটি ৪৮ লাখ পাতা ব্যবহার করা হয়। সব মিলিয়ে বছরে মোট কাগজের চাহিদা দাঁড়ায় ৩৪ কোটি ১০ লাখ পাতা। যার খরচ প্রায় ১০২ কোটি ৩০ লাখ টাকা। আদালতে তথ্য-প্রযুক্তির ব্যবহার করা হলে এ কাগজের ব্যবহার এক-তৃতীয়াংশে নামিয়ে আনা সম্ভব। ফলে বছরে প্রায় ৭০ কোটি টাকা সাশ্রয় করা সম্ভব হবে।

বিচারের বিভিন্ন স্তর, তথ্য, মামলা দায়ের, সমন জারি, হাজিরা, সাক্ষ্যগ্রহণ, রায়-ডিক্রি, আদেশ ইত্যাদির নকল সংগ্রহ সকল ক্ষেত্রে মানুষের দুর্ভোগ বহুলাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব। এজন্য তিনটি পর্যায় উল্লেখ করা হয়েছে। প্রথম পর্যায়ে বাস্তবায়ন কাল ১-৫ বছর। দ্বিতীয় পর্যায়ে বাস্তবায়ন কাল ৬-১০ বছর। তৃতীয় পর্যায়ে বাস্তবায়ন কাল ১১-১৫ বছর।

আরওপড়ুন<<>>সাবেক বিজিবি প্রধান সাফিনুল-স্ত্রীর দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

প্রথম পর্যায় ১-৫ বছর: 
ই-জুডিসিয়ারি প্রকল্পে প্রস্তাবিত কার্যক্রমকে পরিকল্পনা অনুসারে যথাসময়ে বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে। এ প্রকল্পের অধীন অন্তর্ভুক্ত রয়েছে: 
১. জেআরপি সফটওয়্যার
২. ভার্চুয়াল কোর্ট, ডিজিটাল স্বাক্ষর ও ই-স্বাক্ষর
৩. ৬৪ জেলায় ই-কোর্ট রুম 
৪. ই-ফাইলিং, ই-পেমেন্ট, ই-নথি
৫. ডিজিটাল রেকর্ডরুম ও ডিজিটাল অনুলিপি বিভাগ
৬. সুপ্রিম কোর্টের কেন্দ্রীয় ডাটা সেন্টার ও সুপ্রিম কোর্টের নিজস্ব মাইক্রো ডাটা সেন্টার
৭. সেন্ট্রাল জেল টার্মিনাল
৮. সকল জেলা বারে ই-ক্যাফে

দ্বিতীয় পর্যায়ে ৬-১০ বছর: 
১. ই-জুডিসিয়ারি প্রকল্প শেষে চলমান সেবাসমূহের সঙ্গে ফ্রন্টিয়ার টেকনোলজি তথা কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা, ব্লক চেইন প্রযুক্তি, ভার্চুয়াল রিয়ালেটি, অগমেন্টেড রিয়ালিটি এবং প্রযুক্তির ব্যবহার উপযোগিতা বিবেচনায় ই-জুডিসিয়ারি (২য় পর্ব) প্রকল্প শুরু করতে হবে। 
২. প্রত্যেক আদালতে বিচারকালে ভয়েস টু টেক্সট ও  কোর্ট রিপোর্টিং সফটওয়্যার চালু করতে হবে।
৩. ভূমি জরিপ অধিদফতরের সঙ্গে জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সিস্টেম, পুলিশ প্রশাসনের সিডিএমএস, রেজিস্ট্রেশন অধিদফতরের ই- রেজিস্ট্রেশন সফটওয়্যারসহ রাষ্ট্রের অন্যান্য বিভাগের বিভিন্ন ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের ও ডিজিটাল  সেবা সমূহের সাথে তথ্য আদান-প্রদানের ব্যবস্থা পূর্ণাঙ্গভাবে প্রবর্তন করতে হবে। 
৪. আসামিদের প্রবেশনের জন্য ই-প্রফাইলিং সফটওয়্যার চালু করতে হবে।
৫.আদালতের বিভিন্ন বিচারকের মধ্যে মামলা বণ্টন করার জন্য কেস ডিস্ট্রিবিউশন মডিউল প্রস্তুত করতে হবে যার মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয়ভাবে আদালতসমূহে মামলা বণ্টন করা যাবে। 
৬. কোর্টরুম রিপোর্টিং মডিউল প্রস্তুত করা যেতে পারে। যার মাধ্যমে আদালতের সমস্তকার্যক্রমের অডিওভিজুয়াল রেকর্ডিং তথা বিচার কার্যক্রম, সাক্ষী গ্রহণ এবং অন্যান্য মামলার আলোচনাসহ সমস্তকার্যক্রম রেকর্ড করা হবে। এই রেকর্ডিংগুলোকে সুরক্ষিতভাবে সংরক্ষণ করার জন্য একটি শক্তিশালী সিস্টেম প্রয়োজন হবে, যাতে কোনো ধরনের অনুপ্রবেশ বা তথ্য হারানোর ঝুঁকি থাকবে না।
৭. জুডিসিয়াল অ্যাকাডেমির তত্ত্বাবধানে একটি সেলফ লার্নিং মডিউল সৃজন করতে হবে।
৮. বিচার ব্যবস্থায় নতুন প্রযুক্তির প্রয়োগ বিষয়ে জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় প্রচারণা চালাতে হবে এবং প্রস্তাবিত সকল সেবার উপকারভোগীর অভিজ্ঞতা গ্রহণ করতে হবে।

তৃতীয় পর্যায়ে ১১-১৫ বছর: 
১.পূর্ববর্তী পর্যায়দ্বয়ে চালুকৃত ডিজিটাল সিস্টেমসমূহকে এই পর্যায়ে সময় উপযোগীকরণ, বর্ধিতকরণ এবং শতভাগ কার্যকর করাই হবে এ পর্যায়ের মূল লক্ষ্য।
২. দেওয়ানি আদালতে ই-ফাইলিং ব্যবস্থাপনায় ১০০% মামলা দায়েরের লক্ষ্যমাত্রা স্থির করতে হবে। 
৩.সকল আদালতে বর্তমান ব্যবস্থার পাশাপাশি ই-পেমেন্টের মাধ্যমে ই-ফাইলিং সহ সকল কোর্ট-ফি, খরচা, জরিমানা ও অন্যান্য ফি পরিশোধের ক্ষেত্রে ১০০% লক্ষ্যমাত্রা স্থির করতে হবে। 
৪. ফ্রন্টিয়ার টেকনোলজির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করে ইতোপূর্বে ব্যবহৃত সেবার পরিধি ও মান বৃদ্ধি করতে হবে।

আপন দেশ/এমএস

মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়