ফাইল ছবি
শ্রম আইন লঙ্ঘন মামলায় নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মোহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের আদেশ কেন বাতিল করা হবে না- তা জানতে চেয়ে জারি করা রুল স্থগিতের বিষয়ে আপিল শুনানি হয়েছে বৃহস্পতিবার (৩ আগস্ট)। রুল শুনানির জন্য কোর্ট পরিবর্তন করে নতুন বেঞ্চে শুনানির নির্দেশ দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।
এদিন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের বেঞ্চ এ আদেশ দেন। আদালতে ইউনূসের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার আবদুল্লাহ আল মামুন। আর রাষ্ট্রপক্ষের ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল আবু মোহাম্মদ (এএম) আমিন উদ্দিন।
রাষ্ট্রপক্ষের করা আবেদনের শুনানির পরিপ্রেক্ষিতে ২৫ জুলাই আপিল বিভাগের বিচারপতি এম. এনায়েতুর রহিমের চেম্বার জজ আদালত এ আদেশ দেন। ওইদিন আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদন শুনানিতে ছিলেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ মোহাম্মদ (এসকে) মুরশেদ।
এর আগে ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের আদেশ কেন বাতিল হবে না তা জানতে চেয়ে জারি করা রুলের বিরুদ্ধে আপিল করা হয়। আবেদনে রুল স্থগিত চাওয়া হয়েছিল। ২৫ জুলাই সুপ্রিম কোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় এ আপিল করা হয়।
এরআগে শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে করা মামলায় ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের আদেশ কেন বাতিল করা হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছিলেন হাইকোর্ট। অভিযোগ গঠনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ড. ইউনূসের আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ২৩ জুলাই হাইকোর্টের বিচারপতি মো. রুহুল কুদ্দুস ও বিচারপতি আশীষ রঞ্জন দাসের বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
তখন আদালতে ড. ইউনূসের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী ব্যারিস্টার আবদুল্লাহ আল মামুন ও ব্যারিস্টার খাজা তানভীর আহমেদ। অন্যদিকে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতরের পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল আবু মোহাম্মদ (এএম) আমিন উদ্দিন।
এর আগে শ্রম আইন লঙ্ঘনের মামলায় ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ চারজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আদালত। অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে এ মামলায় আনুষ্ঠানিকভাবে বিচার শুরু হয়। এরপর ২১ জুন অভিযোগ গঠনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে আবেদন করেন ড. ইউনূস। আবেদনে অভিযোগ গঠনের আদেশ বাতিল চাওয়া হয়।
মামলার অন্য তিন আসামি হলেন গ্রামীণ টেলিকমের এমডি মো. আশরাফুল হাসান, পরিচালক নুরজাহান বেগম ও মো. শাহজাহান।
৬ জুন অভিযোগ গঠন করে আদেশ দেন ঢাকার শ্রম আদালতের বিচারক বেগম শেখ মেরিনা ইসলাম। লেবার আইনের ৪-এর (৭) এবং (৮) ধারায় শ্রমিকদের স্থায়ী করা হয়নি এবং ১১৭ জনকে আর্নলিভ দেওয়া হয়নি। আর ২৩৪ ধারা অনুযায়ী তাদের মুনাফার পাঁচ শতাংশ দেয়া হয়নি- এসব কারণে গঠন করা হয় অভিযোগ।
শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে ২০২১ সালের ৯ সেপ্টেম্বর ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ চারজনের বিরুদ্ধে মামলা করে ঢাকার কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদফতর। ঢাকার তৃতীয় শ্রম আদালতে এ মামলা করেন অধিদপ্তরের শ্রম পরিদর্শক আরিফুজ্জামান।
গত ৮ মে শ্রম আইন লঙ্ঘনের মামলা বাতিলের আবেদন খারিজের বিরুদ্ধে গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান ড. ইউনূসের লিভ টু আপিল খারিজ করে দেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।
গত বছরের ১৭ আগস্ট হাইকোর্টের বিচারপতি এস এম কুদ্দুস জামান ও বিচারপতি ফাহমিদা কাদেরের বেঞ্চ মামলা বাতিলে ইউনূসের আবেদনে জারি করা রুল খারিজ করে রায় দেন। এরপর ড. মুহাম্মদ ইউনূস আপিল বিভাগে আবেদন করেন।
আরও পড়ুন <> ড. ইউনূস দান কর পরিশোধ করলেন
শ্রম আইনের ৪-এর ৭, ৮, ১১৭ ও ২৩৪ ধারায় অভিযোগের মামলার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে আবেদন করা হয়।
২০২১ সালের ১২ ডিসেম্বর মামলার কার্যক্রম স্থগিত করে রুল দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। এরপর রাষ্ট্রপক্ষ আপিল বিভাগে আবেদন করে। ওই আবেদনের শুনানি নিয়ে মামলা বাতিলে জারি করা রুল দুই মাসের মধ্যে নিষ্পত্তির নির্দেশ দেয়া হয়।
এদিকে ৩১ মে কর ফাঁকির অভিযোগ প্রমাণ হওয়ায় প্রায় ১২ কোটি টাকা পরিশোধ করতে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে নির্দেশ দেন আদালত। হাইকোর্টের বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকার ও বিচারপতি রাশেদ জাহাঙ্গীরের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ আদেশ দেন। সেই সঙ্গে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) নোটিশের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের করা তিনটি আয়কর রেফারেন্স মামলা খারিজ করে দেন আদালত।
আদালতে ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়, ২০১১-১২ থেকে ২০১৩-১৪- এ তিন অর্থবছরে নিজের নামে গঠিত দুটি ট্রাস্ট ও একটি প্রতিষ্ঠানে ৭৭ কোটি ৩৯ লাখ টাকা স্থানান্তরের আয়কর নথিতে বলা হয়েছে, এ টাকা মৃত্যুভীতি থেকে ওই প্রতিষ্ঠানে দান করেন তিনি।
ওইদিন উচ্চ আদালত জানান, ব্যক্তি ও পারিবারিক স্বার্থে ট্রাস্ট গঠন করেছেন ড. ইউনূস। মৃত্যুভীতি থেকে সেই ট্রাস্টে টাকা দান অকল্পনীয়। ফলে দানকর অব্যাহতি পাবেন না। পরিশোধ করতে হবে রাষ্ট্রের পাওনা প্রায় ১২ কোটি টাকা। রায়ে বলা হয়, তিন মামলায় ড. ইউনূসের কর ফাঁকির অভিযোগ প্রমাণিত।
আপন দেশ/আরএ
মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।