Apan Desh | আপন দেশ

বিড়ালের দ্বীপ তাশিরোজিমা

আপন দেশ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১১:১২, ১৯ ডিসেম্বর ২০২৩

বিড়ালের দ্বীপ তাশিরোজিমা

ছবি : সংগৃহীত

বিড়ালের দ্বীপ হিসেবে পরিচিত ‘তাশিরোজিমা’। সেখানে আধিপত্য শুধুই বিড়ালের! এখানে মানুষের বসবাসের জন্য নেই তেমন কোনো ভালো ব্যবস্থা। খুব ভালো খাবারও পাওয়া যায় না। তবু মানুষ সেখানে অদ্ভুত আকর্ষণে ছুটে যায়। আকর্ষণের মূল কেন্দ্রবিন্দুতে বিড়াল।

প্রশান্ত মহাসাগরের বুকে ওশিকা উপদ্বীপের কাছে তাশিরোজিমা দ্বীপ। এটি জাপানে অবস্থিত। এই দ্বীপের পথে ঘাটে বিড়ালগুলো ঘুরে বেড়ায়। এসব বিড়ালকে সৌভাগ্যের প্রতীক মনে করেন স্থানীয়রা।

২০১৫ সালের এক জরিপে দেখা গেছে,  তাশিরোজিমা দ্বীপে বসবাসরত মানুষের সংখ্যা মাত্র ৮০ জন। আর বিড়ালের সংখ্যা প্রায় দেড়শ।

জানা যায়, ১৯৫০ সালের দিকে এই দ্বীপে বিড়ালের থেকে মানুষের সংখ্যা বেশি ছিল। তখন তাশিরোজিমা দ্বীপে প্রায় এক হাজার মানুষ বাস করতেন। বসবাসরতদের অধিকাংশের পেশা ছিল মাছ ধরা। জাপানের এই দ্বীপে  ২০১১ সালে সুনামি হয়। বদলে যায় দ্বীপের পরিবেশ। এরপর বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়। অনেক মানুষ দ্বীপ ছেড়ে চলে যান।

তাশিরোজিমা দ্বীপে এখন যারা বসবাস করেন তাদের মধ্যে ৮৩ শতাংশ অধিবাসীর বয়স ৬০ বছরের বেশি। এমনকি ৫০ শতাংশের বয়স ৬৫ বছরের বেশি। এই দ্বীপের অধিবাসীরা মাছ ধরে অথবা পর্যটকদের আতিথেয়তা করে জীবিকা নির্বাহ করেন। দ্বীপে মানুষের চেয়ে বিড়ালের সংখ্যা বেশি হওয়ায় এই দ্বীপের সৌন্দর্য অন্য দ্বীপের থেকে আলাদা।  

জানা যায়, ১৬০৩ সাল থেকে ১৮৬৮ সাল পর্যন্ত তাশিরোজিমা দ্বীপের মানুষেরা বস্ত্রশিল্পের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। সে সময়ে এই দ্বীপে রেশমকীটের উৎপাদনও হত। এর ফলে ইঁদুরের উপদ্রবও ছিল বেশি। ইঁদুরের হাত থেকে রেশমকীট রক্ষা করতে দ্বীপের অধিবাসীরা বাড়িতে-বাড়িতে বিড়াল পুষতে শুরু করেন। বিড়ালের খাবার জোগাতে তারা মাছ ধরাকে নিয়মিত কাজে পরিণত করেন।

দ্বীপের অধিবাসীরা বিড়ালের যত্ন-আত্তি কম করতেন না। কারণ, এই দ্বীপের মানুষের বিশ্বাস বিড়ালের যত্ন করলে জীবন সুখের হবে। বিশ্বাস আর ভালোবাসা প্রদর্শনে দ্বীপে বিড়ালের আদলে তৈরি করেন ৫১টি পাথরের মূর্তি।

২০১১ সালের সুনামিতে দ্বীপের অধিকাংশ অধিবাসী অন্যত্র চলে যায়, সঙ্গে সঙ্গে অনেক বিড়ালও চলে যায় তাশিরোজিমা দ্বীপ ছেড়ে।

জানা যায়, অনেক বছর আগে তাশিরোজিমা দ্বীপে একটি বিড়ালের ওপর পাথর পড়ে, সেখানেই মারা যায় বিড়ালটি। ঘটনাস্থলেই বিড়ালটির মৃতদেহ চাপা দেয়া হয়। দ্বীপের অধিবাসীরা পরবর্তীতে সেখানে মন্দির গড়ে তোলেন।

২০১৫ সালে তাশিরোজিমা দ্বীপের পুনর্নিমাণ করা শুরু হয়। সুনামির ফলে ক্ষতিগ্রস্ত দ্বীপ আবার স্বাভাবিক পর্যায়ে চলে আসে। দ্বীপে মধ্যে বিড়ালকে খাওয়ানোর জন্য আলাদা জায়গা তৈরি করা হয়। পর্যটকরা দ্বীপে ঘুরতে গেলে সেই নির্দিষ্ট জায়গাগুলোতে বিড়ালদের খাবার দিতে ভুল করেন না।

জাপানে এমন আরও দুইটি দ্বীপ রয়েছে। এগুলো হচ্ছে ‘আওশিমা’ এবং ‘এনোশিমা’। আওশিমা দ্বীপে ১৫ থেকে ২০ জন মানুষের বাস, অথচ সেখানে বিড়ালের সংখ্যা ১২০। এনোশিমা দ্বীপে ১৯৮০ সাল থেকে এই দ্বীপে বিড়ালের সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। 

আপন দেশ/এমআর

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়