ফাইল ছবি
দাম্পত্য বা বন্ধুত্ব- সম্পর্কের ধরন যেমনই হোক না কেন, সেটা দীর্ঘস্থায়ী ও পরিপূর্ণ করতে কিছু বিষয় খেয়াল রাখা জরুরি। কখনো কি ভেবে দেখেছেন, লাইফ পার্টনারের সাথে পারফেক্ট রিলেশনশিপ মেনটেইন করতে যে গুণগুলো থাকা উচিত, সেগুলো আপনার মধ্যে আছে কিনা? কোনো সম্পর্ককে তখনই হেলদি বলা যায়, যখন এতে পারস্পরিক শ্রদ্ধা, বিশ্বাস ও সহানুভূতি থাকে।
এগুলোর অভাবে অনেক ক্ষেত্রে কিছু সম্পর্ক টক্সিক হয়ে যায় সময়ের সাথে সাথে। লাইফ পার্টনারের সাথে সম্পর্কে তিক্ততা চলে আসলে জীবন দুর্বিষহ মনে হয়। আমাদের জেনারেশনে এই ধরনের প্রবলেম কিন্তু বেশ কমন। হেলদি রিলেশনশিপ মেনটেইন করতে কিছু কোয়ালিটি নিজের মধ্যেও আত্তস্থ করতে হবে। এমন আটটি গুণাগুণের কথা জানব যেগুলো মেনে চললে আপনার জীবন অনেকটাই সহজ হয়ে যাবে-
১. পারস্পরিক শ্রদ্ধা
পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ যেকোনো সম্পর্কের ক্ষেত্রেই খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আপনাকে ও আপনার সঙ্গীকে যে সবকিছুতে একমত হতে হবে এমনটি নয়, তবে একে অপরের অনুভূতি ও চাহিদাকে প্রায়োরিটি দেওয়া শিখতে হবে। সামান্য মনোমালিন্যে সঙ্গীকে দোষারোপ করবেন না। সঙ্গীর উপর আপনার নিজস্ব বিশ্বাস ও সিদ্ধান্ত চাপিয়ে না দিয়ে একে অপরকে সম্মান করা উচিত। পারফেক্ট ও হেলদি রিলেশনশিপ মেনটেইন করতে হলে এই বিষয়টি এড়িয়ে চলা যাবে না!
আরও পড়ুন>> এ্যারেঞ্জ ম্যারেজই বেশি সুখের হয়: গবেষণা
২. ওপেন কমিউনিকেশন
যুগের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বদলেছে যোগাযোগের মাধ্যম। সোশ্যাল মিডিয়ার এই যুগে একে অপরের কাছ থেকে দূরে থেকেও যেন কাছে থাকা যায়! যোগাযোগ একটি সম্পর্ক যেমন তৈরি করে, আবার যোগাযোগের অভাবে একটি সম্পর্ক ভাঙতেও সময় লাগে না। মনে কোনো দ্বিধা না রেখে আপনার পার্টনারের সাথে কমিউনিকেশন ঠিক রাখুন।
কোনো সমস্যা দেখা দিলে যদি আপনার পার্টনার ও আপনি নির্দ্বিধায় উদ্বেগ ও অনুভূতি প্রকাশ করতে পারেন, তাহলে বুঝে নিন আপনাদের মধ্যে খুব ভালো আন্ডারস্ট্যান্ডিং রয়েছে। আপনি তার কমফোর্ট জোন হয়ে উঠুন, যাতে সে সবকিছু নির্দ্বিধায় শেয়ার করতে পারে। অধিকাংশ সম্পর্কে সমস্যার শুরু হয় কমিউনিকেশন গ্যাপ থেকে। তাই সচেতন হোন প্রথম থেকেই।
৩. বিশ্বস্ততা
ভালোবাসায় দরকার বিশ্বস্ততা! সম্পর্কের মূলমন্ত্র হচ্ছে পরস্পরের প্রতি বিশ্বাস, যেটা কোনোভাবেই এড়িয়ে চলার সুযোগ নেই। দাম্পত্যে বা প্রেমের সম্পর্কে থাকতে হবে সততা। তাহলেই তো বন্ধন হবে দৃঢ় ও স্বচ্ছ। বিশ্বাসের অভাবেও কিন্তু ধীরে ধীরে সম্পর্কে ভাঙন ধরে।
৪. দায়িত্ব ভাগ করে নেয়া
প্রত্যেকেরই কিছু দায়িত্ব-কর্তব্য থাকে যা কোনোভাবে এড়িয়ে যাওয়া উচিত না। দাম্পত্য জীবনের দায়িত্বগুলো নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নেওয়ার মাধ্যমে পরস্পরের প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশ পায়। এতে কিন্তু বন্ডিং বা পারস্পারিক বোঝাপড়া বেশ স্ট্রং হয়। একজনের উপর কাজের বোঝা চাপিয়ে দেওয়ার অভিযোগটা ওঠে না, তাই জীবন বেশ সহজ ও আনন্দময় হয়ে ওঠে।
আরও পড়ুন>>বিয়ের পর যে নিয়মগুলো মানা জরুরি
৫. সমঝোতা
আপোস বা সমঝোতা একটি বড় গুণ যা সবার মধ্যেই থাকা উচিত। সব ব্যাপারে দু’জনের মতামত মিলবে না, এটাই চিরন্তন সত্য। সব সম্পর্কেই আপোস করে চলতে হয়, আর এটা মেনে নেয়ার মতো মনোভাবও থাকতে হবে। তবে এই সমঝোতা যেন শুধু একপক্ষকেই বার বার করতে না হয়! সম্পর্কে ভুল বোঝাবুঝি হবে, মান অভিমান হবে। তবে দিনশেষে এগুলো ধরে বসে থাকলে হবে না। দু’জনকেই নিজের অবস্থান থেকে সম্পর্কটা সুন্দর করে তোলার জন্য পদক্ষেপ নিতে হবে।
৬. পার্সোনাল স্পেস
পার্টনারকে অবশ্যই পার্সোনাল স্পেস দিন এবং নিজের মানসিক স্বাস্থ্যের দিকেও নজর রাখুন। নিজের প্রিয় কাজ (যেমন গান শোনা, বাগান করা বা গার্ডেনিং) করুন অবসরে। আপনার পার্টনারকেও কিছুটা সময় নিজের মতো করে কাটাতে দিন। এতে কিন্তু তার আপনার প্রতি শ্রদ্ধাবোধ আরও বাড়বে।
৭. সুন্দর মুহূর্তগুলো একসাথে উদযাপন
ছোট ছোট খুশিগুলোও কিন্তু জীবনকে পরিপূর্ণতা দেয়। যখনই সুযোগ আসে সেটা সেলিব্রেট করুন। একসাথে কাটানো এই মুহূর্তগুলোই সম্পর্কের বাঁধন আরও মজবুত করবে। বন্ধুত্ব হোক কিংবা দাম্পত্য, যেকোনো সম্পর্কের জন্যই এটা প্রযোজ্য। আপনার পার্টনারকে সারপ্রাইজ গিফট দিতে পারেন, ছোটখাট ঘরোয়া আয়োজন করে তার বিশেষ দিনগুলোকে আরও সুন্দর করে তুলতে পারেন।
আরও পড়ুন>> শীতকালে কি প্রতিদিন গোসল করবেন?
৮. কম্পেয়ার না করা
তুলনা করা বন্ধ করুন! নিজের অবস্থান থেকে ভালো থাকা ও ভালো রাখার ট্রাই করুন। আপনি যখনই নিজের পার্টনারকে অন্যের সাথে তুলনা করবেন, খুব স্বাভাবিকভাবে আপনাদের সম্পর্কে তিক্ততা ও বিরক্তিভাব চলে আসবে। সে এই বিষয়টিকে ইতিবাচকভাবে নিবে না, বরং তার মধ্যে হীনমন্যতা তৈরি হবে। তাই, প্রশংসা করতে শিখুন। তার কোনো দোষ-ত্রুটি থাকলে সেটা আস্তে ধীরে সুন্দরভাবে বুঝিয়ে বলুন।
একটি সম্পর্ক কীভাবে গড়ে ওঠে এর কোনো বাঁধাধরা নিয়ম নেই। তবে কীভাবে সুন্দরভাবে সম্পর্ক টিকিয়ে রাখা যায়, সেটা নিয়ে আমাদের ভাবতে হবে। কখনোই নিজেদের সমস্যায় তৃতীয় ব্যক্তিকে এর মধ্যে জড়াবেন না, নিজেরাই নিজেদের সমস্যার সমাধান করুন।
আপন দেশ/এসএমএ